বাংলারজমিন
নবীগঞ্জে ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর
স্টাফ রিপোর্টার, নবীগঞ্জ থেকে
১৬ মার্চ ২০২৫, রবিবার
নবীগঞ্জে দেবপাড়া ইউনিয়নের কালাভরপুর গ্রামে শুক্রবার রাতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার রাতে ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে সালামত খানের লোকজন প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লোপাট চালায় মর্মে অভিযোগ করে আলমগীর গ্রুপের লোকজন। এ সময় আলমগীর খানের লোকজন প্রতিরোধ করতে গেলে দু’গ্রুপের সংঘাত শুরু হয়। মুখোমুখি সংঘর্ষে উভয়পক্ষে ২৫ জন আহত হয়। এর মধ্যে আলমগীর গ্রুপের দুই সহোদর সবুজ মিয়া ও দিলাওর মিয়ার অবস্থা আশংকাজনক মর্মে খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনা নিয়ে রহস্যজনক ভূমিকায় থানার ওসি কামাল হোসেন। বিদ্যমান বিরোধকে কেন্দ্র করে ওসি’র বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। ওদিকে, আতংকে পুরুষশূন্য গ্রামে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। দুই গ্রুপের হামলা, পাল্টা হামলায় অস্থির হয়ে উঠেছে গ্রামের নিরীহ মানুষ। আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ চেয়েছে এলাকার লোকজন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের কালাভরপুর গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতা সালামত খান ও যুবলীগ নেতা আলমগীর খানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধে চলে আসছে। ১৪ মার্চ রাতে সালামত খানের লোকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে আলমগীর সমর্থিত মৃত আখল মিয়ার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এসময় তাদের সাথে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা অংশ নেয়। হামলার সময়ে পাকা বাড়ির নিরাপত্তা বেষ্টনীর গ্রিলের পাশের দেয়াল এবং বাড়ির পেছনসহ চারদিকের দেয়াল শাবল দিয়ে ভেঙে গৃহে প্রবেশ করে প্রতিটি কক্ষ ভেঙে তনছন করে। এসময় তাদের হামলা থেকে নারী শিশুও রক্ষা পায়নি। লোপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করে বাড়িটি জ্বালিয়ে দেয়। খবর পেয়ে যুবলীগ নেতা ঘটনাস্থলে গেলে মুখোমুখি সংঘষ শুরু হয়। সংঘর্ষে জামাল খান, লিটন মিয়া, খুরশেদ মিয়া, রুমেল মিয়া, আলমগীর খান, নোবেল আহমেদ, নয়ন মিয়া, নানু মিয়া, অনু মিয়া, ফরাস মিয়া, কোকিল মিয়া, সাকির আলী, ফয়সাল রোমান মিয়া, হোসাইন, মঈনউদ্দীন, ফয়সাল খান, সবুজ মিয়া, দেলাওর মিয়া, রুনা বেগম, আজিজা বেগম গুরুতর আহত হয়। আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল প্রেরণ করা হয়েছে। এর পূর্বে সালামত খানের লোকজন জমি দখল, বৃক্ষনিধন ও বোরো মৌসুমের ফসল কর্তন ও বসতবাড়ি ভাঙচুর করে। যুবলীগ ক্যাডার মোহিত-হাদী-বদরুল-জাকির গংদের সাথে যুক্ত হয় বিএনপির দুলাল । গত প্রায় এক মাস যাবত এলাকায় অবাধে চলছে হামলা, পাল্টা হামলা, ভাংচুর, লোপাট। দিবারাতে ওই গ্রামে শসস্ত্র মহড়ায় আতংকিত এলাকার জনপদ। আলমগীর খানের সমর্থক ফরিদ মিয়া চৌধুরী, নোমান মিয়া, জাকির হোসেন, দেলাওর মিয়া প্রমুখের প্রায় ৩০ বিঘা জমির বোরো ধান প্রকাশ্য দিবালোকে কেটে নেয় সালামত বাহিনীর দুলাল-হাদি-মোহিদ-বদরুল গং। এছাড়াও সালামত বাহিনীর লিটন মিয়ার নেতৃত্বে যুবলীগ নেতা আলমগীর খানের প্রায় ৪ শতাধিক বৃক্ষ কেটে নেয়। ইতিমধ্যে সামাদ মিয়া ও সাঈদ মিয়া চৌধুরীর বসতবাড়ি ভেঙে প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে। ভীতসন্ত্রস্ত হযে তারা প্রাণ রক্ষায় আত্মীয়ের বাড়ি আশ্রয় নেয়। বেপরোয়া সালামত বাহিনী একাধিকবার বসতবাড়িতে ঢুকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ৭ জন মহিলাকে রক্তাক্ত জখম করে। এসব ঘটনায় মামলা হলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এলাকার জনৈক মারুফ মিয়াসহ দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, বিগত একমাস ধরে হামলা, পাল্টা হামলা ও গুপ্ত হামলায় পরস্পর বিরোধী হাফডজন মামলা হলেও কাউকেই গ্রেপ্তার করা হয়নি। উভয় গ্রুপের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে মামলা বাণিজ্যে মেতে উঠেছে পুলিশ। সার্বিক বিষয়ে থানার ওসি কামাল হোসেনকে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ হয়নি। ওয়াটসআপে বার্তা দেয়া হলেও চাঞ্চল্যকর একাধিক ঘটনায় বিতর্কিত ওসি কামালের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।