ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

ধামরাইয়ে আংশিক কাজ করেই ঠিকাদার তুলে নেয় ৩ কোটি টাকা

আজাহারুল ইসলাম রাজু, ধামরাই (ঢাকা) থেকে
১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার
mzamin

ঢাকার ধামরাইয়ে সাবেক এমপি বেনজীর আহমদের বাড়ির পাশের একটি মসজিদ নির্মাণে ঢাকা জেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল থেকে সাত দফায় প্রায় তিন কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। তারপরও মসজিদের অর্ধেক কাজও হয়নি। 
স্থানীয়দের দাবি, কর্তাব্যক্তিরা ঠিকাদার ও জেলা পরিষদের ওই সময়ের দায়িত্বরতরদের যোগসাজশে বিল-ভাউচারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা টাকা তুলে পকেটে ভরেছেন। জানা গেছে, ঢাকা জেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল থেকে গত ৪টি অর্থ বছরে ১০টি প্রকল্পের মাধ্যমে ধামরাইয়ের সাবেক এমপি বেনজীর আহমদের নিজ গ্রামে ৩ কোটি ২৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭৫ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এরমধ্যে বৈন্যা জামে মসজিদ উন্নয়ন প্রকল্পে ২ কোটি ৮৬ লাখ ১৮ হাজার ৪৭৫ টাকা, বৈন্যা পশ্চিমপাড়া পুকুরের ঘাটলা নির্মাণ প্রকল্পে ১৩ লাখ টাকা, বৈন্যা জামে মসজিদ থেকে বৈন্যা নাট মন্দির পর্যন্ত রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পে ১৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ও স্ট্রিট লাইট দ্বারা রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পে ১০ লাখ টাকা। এরমধ্যে একটি মসজিদ উন্নয়নের জন্য ৭টি প্রকল্পের মাধ্যমে সাতবার অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। তার একটি প্রকল্পের কাজও শুরু করেনি। বাকি ৬টি প্রকল্প আংশিক কাজ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে বিল-ভাউচারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে বৈন্যা জামে মসজিদ উন্নয়নের নামে দরপত্রের মাধ্যমে  জেলা পরিষদ থেকে গত ১৯-২০ অর্থবছরে ৫০ লাখ, ২০-২১ অর্থবছরে ৫০ লাখ, একই অর্থবছরে ২৫ লাখ, ২১-২২ অর্থবছরে ৪৯ লাখ, একই অর্থ বছরে ৪৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৭৫ টাকা, ২২-২৩ অর্থবছরে ৪৮ লাখ ৯০ হাজার ও একই অর্থবছরে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ৭টি প্রকল্পের মাধ্যমে ২ কোটি ৮৬ লাখ ১৮ হাজার ৪৭৫ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু গত চার বছরে মসজিদের কাজ হয়েছে মাত্র ৫০ ভাগ। এদিকে জেলা পরিষদের টাকা ছাড়াও এর আগে ধামরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে দুই লাখ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুই লাখসহ আরও চার লাখ টাকা ওই মসজিদ উন্নয়নের নামে বরাদ্দ নেয়া হয়। এরপরও মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। 
সরজমিন জানা গেছে, ৯৫ ফুট দৈর্ঘ্য ৬৫ ফুট প্রস্থের মসজিদের তিনতলা ভবনের ফাউন্ডেশন দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে একতলার ছাদ ঢালাই ও ভবনের চার পাশে ইটের প্রাচীরসহ মসজিদ ঘিরে সীমানা প্রাচীর ও  প্রাচীরে লোহার গ্রিল দেয়া হয়েছে। ২০২১ সালের ২১শে জানুয়ারি মসজিদ নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তরের স্থাপন করেন- ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্থানীয় তৎকালীন এমপি বেনজীর আহমদ ও ঢাকা জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান। এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বরাদ্দকৃত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল তামিম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হাবিবুর রহমান বলেন, গত ৫ই আগস্টের পর জেলা পরিষদের অনেক কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে বিধায় কাজ আর না-ও করতে পারি। তবে বাকি ছয়টি প্রকল্পের ঠিকাদার তারা প্রত্যেকেই বলেন, মসজিদের সঠিক কাজ করেই বিল উত্তোলন করে নিয়েছেন। 
জেলা পরিষদের উচ্চমান সহকারী শেখ মাসুদ পারভেজ বলেন, আমি এ কার্যালয়ে যোগদানের আগেই মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা। অপরদিকে স্ট্রিট লাইটের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরজমিন দেখা যায়, শুধুমাত্র সাবেক এমপি বেনজীর আহমদ ও তার তিন ভাইয়ের বাড়ি বেষ্টিত সড়কে স্ট্রিট লাইট লাগানো হয়েছে। জেলা পরিষদের উপ-সহকারী প্রৌকশলী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে তদারকি করা হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়নি। বিল উত্তোলনের বিষয়ে আমার কোনো যোগসাজশ নেই।  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামনুন আহমেদ অনীক বলেন, সরজমিন দেখে মনে হয়েছে বরাদ্দকৃত টাকার তুলনায়  তেমন কোনো কাজই হয়নি। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোয়াজ্জম হোসাইন বলেন, আমার আগে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা একটি চক্রের মাধ্যমে প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব প্রকল্প তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status