অনলাইন
ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে মার্কিন-ভারত সম্পর্ক নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারতীয়-আমেরিকানরা
মানবজমিন ডিজিটাল
(১ মাস আগে) ১৩ মার্চ ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৭:১৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:৩৩ অপরাহ্ন

ভারতীয় আমেরিকানরা ভারতের ভবিষ্যত সম্পর্কে যেমন ক্রমবর্ধমানভাবে আশাবাদী, তেমনি ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে মার্কিন-ভারত সম্পর্ক নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। অক্টোবরে কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস এবং ইউগভ দ্বারা পরিচালিত ভারতীয়-আমেরিকানদের ওপর করা একটি সমীক্ষায় তাদের এই মনোভাব জানা গেছে।
গত বছর ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হয়েছিল। ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির বিরুদ্ধে মার্কিন ফেডারেল অভিযোগ এবং আমেরিকার মাটিতে দিল্লি-সমর্থিত হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দু দেশের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫ মিলিয়নেরও বেশি ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাস করেন। সমীক্ষায় তাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। যেমন -সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মার্কিন-ভারত সম্পর্ক পরিচালনাকে ভারতীয় আমেরিকানরা কীভাবে দেখেন? তারা কি ডনাল্ড ট্রাম্পকে আরও ভালো বিকল্প হিসেবে দেখছেন? ২০২৪ সালের নির্বাচনের পরে তারা কীভাবে ভারতের গতিপথকে মূল্যায়ন করবেন ? রিপোর্ট থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে যা ১২০৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক ভারতীয়-আমেরিকান বাসিন্দাদের একটি অনলাইন সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল।
ভারত নিয়ে ট্রাম্প বনাম বাইডেন
ভারতীয় আমেরিকানরা বাইডেন প্রশাসনের মার্কিন-ভারত সম্পর্ক পরিচালনাকে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের চেয়ে বেশি রেটিং দিয়েছেন। কমলা হ্যারিস ভোটে জিতলে তার প্রশাসনকে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের চেয়ে মার্কিন-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উপযোগী হিসাবে দেখা হয়েছিল। দলীয় মেরুকরণ এখানে একটি মূল ভূমিকা পালন করে: ৬৬% ভারতীয়-আমেরিকান রিপাবলিকান বিশ্বাস করেন যে ট্রাম্প মার্কিন-ভারত সম্পর্কের জন্য আরও ভাল, যেখানে মাত্র ৮% ডেমোক্র্যাট এ বিষয়ে একমত। বিপরীতভাবে, ভারতীয়-আমেরিকান ডেমোক্র্যাটদের অর্ধেক বাইডেনের পক্ষে, সেখানে রিপাবলিকানরা তুলনায় ১৫%। যেহেতু বেশিরভাগ ভারতীয় আমেরিকানরা ডেমোক্র্যাট, তারা বাইডেনের অনুকূলে থেকেছেন। হোয়াইট হাউসে তাদের ফেব্রুয়ারির বৈঠকের সময়, ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উভয়েই একে অপরের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছিলেন, কিন্তু ট্রাম্প ভারতের উচ্চ বাণিজ্য শুল্কের সমালোচনা করেছিলেন, এটিকে একটি "বড় সমস্যা" বলে অভিহিত করেছিলেন।
'ভাড়াটে খুন' বিতর্ক
মার্কিন মাটিতে একজন বিচ্ছিন্নতাবাদীকে হত্যা করার কথিত ভারতীয় চক্রান্ত ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেনি- উত্তরদাতাদের মাত্র অর্ধেকই এটি সম্পর্কে অবগত। অক্টোবরে, গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সাবেক ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করে আমেরিকা । এটি প্রথমবার ঘটলো যে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো ভিন্নমতাবলম্বীকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। ভারত বলেছে যে তারা মার্কিন তদন্তে সহযোগিতা করছে। জানুয়ারিতে, ওয়াশিংটনের অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখার জন্য ভারত দ্বারা গঠিত একটি প্যানেল সাবেক গোয়েন্দা এজেন্ট বলে বিশ্বাস করা একজন নামহীন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের সুপারিশ করেছিল।
ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি
ভারতীয় আমেরিকানরা দলগত পার্টি লাইনে বিভক্ত, ডেমোক্র্যাটরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি বৃহত্তর সহানুভূতি প্রকাশ করে এবং রিপাবলিকানরা ইসরায়েলপন্থী । ১০ জনের মধ্যে চারজন উত্তরদাতা বিশ্বাস করেন যে বাইডেন চলমান সংঘাতে খুব বেশি ইসরায়েলপন্থী ছিলেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা থেকে হামাস যোদ্ধাদের হামলায় ইসরায়েলের অভ্যন্তরে প্রায় ১২০০, বেশিরভাগই বেসামরিক লোক নিহত হয়েছিল। ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। তাদের বেশিরভাগই যুদ্ধবিরতি চুক্তি বা অন্যান্য ব্যবস্থায় মুক্তি পেয়েছে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলের পাল্টা সামরিক অভিযানে গাজায় ৪৮,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। যুদ্ধবিরতি দীর্ঘায়িত করার জন্য আলোচনা, যার প্রথম ধাপটি ১ মার্চ শেষ হয়েছিল, কাতারে আবার শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভারতের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি উজ্জ্বল
সাতচল্লিশ শতাংশ ভারতীয় আমেরিকান বিশ্বাস করেন যে ভারত সঠিক পথে এগোচ্ছে । চার বছর আগের তুলনায় ১০শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে । প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির কর্মক্ষমতাকে অনুমোদন করেন এই ভারতীয় আমেরিকানরা । ১০ জনের মধ্যে চারজন উত্তরদাতা মনে করেন যে ভারতের ২০২৪ সালের নির্বাচন- (যেখানে মোদির দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি) দেশটিকে আরও গণতান্ত্রিক করে তুলেছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে অনেক ভারতীয় আমেরিকান মোদিকে সমর্থন করে এবং বিশ্বাস করে যে ভারত সঠিক পথে রয়েছে। তবুও অর্ধেকে মার্কিন মাটিতে কথিত হত্যা প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবগত নয়। এটি কি তথ্য অ্যাক্সেস, নির্দিষ্ট কিছু বিষয় অনুসরণ বা বৃহত্তর জাতীয়তাবাদী অনুভূতির পক্ষে নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপকে উপেক্ষা করার একটি প্রবণতার দিকে নির্দেশ করে? অধ্যয়নের সহ-লেখক মিলান বৈষ্ণব বলেছেন -' এর সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করা কঠিন। '২০২০সালে কার্নেগি দ্বারা সংগৃহীত ডেটা দেখায় যে প্রায় ৬০% ভারতীয় আমেরিকানরা ভারত সরকার এবং জনসাধারণের বিষয়গুলিকে নিয়মিত অনুসরণ করে। প্রায়শই লোকেরা সংবাদ, সোশ্যাল মিডিয়া এবং বন্ধু ও পরিবারের সাথে কথোপকথনের উপর ভিত্তি করে বিস্তৃত ইমপ্রেশন তৈরি করে। বৈষ্ণব বলেছেন -'ভারতীয় আমেরিকান সম্প্র্দায়ের কাছে ভাড়াটে খুনের চক্রান্তের থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্যার খবরের গুরুত্ব বেশি। 'ভারতীয় আমেরিকানরা, ট্রাম্প সম্পর্কে সতর্ক।
সাধারণত মার্কিন-ভারত সম্পর্কের জন্য বাইডেন বা হ্যারিসকে সমর্থন করার পাশাপাশি তারা ভারতে মোদিকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে চলেছে। মোদির জাতীয়তাবাদী নীতির পরিপ্রেক্ষিতে এই ভিন্নতার কারণ কী? এটা কি আদর্শের চেয়ে ব্যক্তিগত প্রভাবের প্রতিফলন ?বৈষ্ণবের কথায় , 'আমরা এই প্রশ্নটি গভীরভাবে অন্বেষণ করেছি এবং দেখেছি যে ভারতীয় আমেরিকানরা সাধারণত ভারতের তুলনায় মার্কিন নীতির বিষয়ে বেশি উদার দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। উদাহরণস্বরূপ, মুসলিম ভারতীয়-আমেরিকানরা - ভারত এবং আমেরিকা উভয় ক্ষেত্রেই সংখ্যালঘুরা - ধারাবাহিকভাবে আরও উদার মনোভাব পোষণ করে। হিন্দু ভারতীয়-আমেরিকানরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদার মতামত প্রকাশ করে (যেখানে তারা সংখ্যালঘু) কিন্তু ভারতে আরও রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে তারা।' অন্য কথায় বলতে গেলে , একজন ব্যক্তির সংখ্যাগরিষ্ঠ বা সংখ্যালঘু মর্যাদা তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে মনে করেন অধ্যয়নের সহ-লেখক মিলান বৈষ্ণব। ভারতীয় আমেরিকানরা যদি ট্রাম্পকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য হুমকি হিসেবে দেখেন, তাহলে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে 'হাউডি মোদি!'-এর মতো ইভেন্টে দেখা গেছে প্রেসিডেন্টের প্রতি ভারতীয় আমেরিকানদের উচ্ছাস। তবে কি ট্রাম্প সম্পর্কে তাদের মতামত তার নীতির কারণে পরিবর্তিত হয়েছে, নাকি এটি রাজনৈতিক স্রোত পরিবর্তনের থেকেও বেশি কিছু ? বৈষ্ণব মনে করেন, 'হাউডি, মোদি!'-তে ৫০,০০০ এরও বেশি ভারতীয় আমেরিকান জড়ো হয়েছিল। ট্রাম্পকে নয়, মোদিকে দেখার জন্য। দ্বিতীয়ত, ভারতীয় আমেরিকানরা হলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সহ একটি বৈচিত্র্যময় প্রবাসী। যদিও ভারতীয় আমেরিকানরা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির দিকে অপ্রতিরোধ্যভাবে ঝুঁকেছে, তবে এর মধ্যেই ২০২৪ সালে প্রায় ৩০ % - ট্রাম্পের অধীনে রিপাবলিকানদের সমর্থন করেছে ।' ভারতীয় আমেরিকানরা ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, কিন্তু সেই সম্পৃক্ততা হ্রাস পেয়েছে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে , ২০২০ সালে ৫৬ % ডেমোক্র্যাটদের দিকে ঝুকেছিলো , এখন তা ৪৭% । বৈষ্ণব বলেন,২০২০ সালের তথ্য দেখায় যে অনলাইন খবর ভারত সম্পর্কে তথ্যের প্রাথমিক উৎস ছিল। তারপরে টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়া এবং মুখের কথা। সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে, ইউটিউব, ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ ছিল সবচেয়ে সাধারণ প্ল্যাটফর্ম।ভারতের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততা সীমিত হলেও বিদেশী বংশোদ্ভূত ভারতীয় আমেরিকানরা সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারীদের তুলনায় এর সাথে বেশি জড়িত। সত্যটিকে উপেক্ষা করা উচিত নয় যে সাংস্কৃতিক সংযোগের বন্ধনগুলি এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী রয়েছে, এমনকি দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রজন্মের ভারতীয় আমেরিকানদের মধ্যেও ।
সূত্র : বিবিসি
পাঠকের মতামত
হাসিনা বাংলাদেশে ১৫ লক্ষ রোহিঙ্গাকে অনুমতি দিয়ে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে এক নম্বর রোহিঙ্গা বানিয়েছেন। এখন তিনি ভারতে এক নম্বর রোহিঙ্গা হিসেবে বসবাস করছেন। সর্বশক্তিমান আল্লাহ সঠিক বিচার করেন।