ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

খেলা

বার্মিংহাম থেকে খালি হাতে ফিরছে বাংলাদেশ দল

সামন হোসেন, বার্মিংহাম (যুক্তরাজ্য) থেকে
৭ আগস্ট ২০২২, রবিবার
mzamin

ব্যর্থতায় শুরু, শেষটাও হয়েছে বিবর্ণ। ব্যক্তিগত ও দলীয় কোনো বিভাগেই গর্ব করার মতো কিছু করে দেখাতে পারেননি কেউ। পদকপ্রসবা শুটিং আর সম্ভাবনাময় আরচারি না থাকায় টানা পাঁচ আসর পর কমনওয়েলথ গেমস থেকে খালি হাতে ফিরলো বাংলাদেশ। অ্যাথলেটিক্স, সাঁতার, কুস্তি, ভারোত্তোলন, বক্সিং, জিমন্যাস্টিক হতাশ করেছে। রীতিমতো পুলে লজ্জায় ফেলেছেন সাঁতারুরা। ভারোত্তোলন, বক্সিং, কুস্তি- কেউই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। অ্যাথলেটিক্সে বিলেত প্রবাসী ইমরানুর রহমানের ওপর স্পট লাইট থাকলেও হিটের গণ্ডি পেরুতে পারেনি এই স্পিন্টার। জিমনাস্টিকসে আরেক প্রবাসী অ্যাথলেট আলী কাদের হকও প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ। তবে আসরে নজর কেড়েছে টেবিল টেনিস দল।  কমনওয়েলথ গেমস বাংলাদেশের জন্য সাফল্য প্রসবা এক আসর।

বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এই গেমস বাংলাদেশকে দিয়েছে অন্যরকম পরিচিতি। ১৯৯০ সালে অকল্যান্ড কমনওয়েলথ গেমসে প্রথম পদক পায় বাংলাদেশ। আতিকুর রহমান ও আব্দুস সাত্তার নিনি ১০ মিটার এয়ার পিস্তল দ্বৈত ইভেন্টের ফাইনালে অস্ট্রেলীয় জুটিকে হারিয়ে  সোনা এনে দেন বাংলাদেশকে। আতিক-নিনির প্রায় এক যুগ পর ২০০২ সালে ম্যানচেস্টার গেমসে ভারতের অভিনব বিন্দ্রাকে শুট অফে হারিয়ে ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে সোনার হাসি হাসেন আসিফ হোসেন খান। এরপর থেকে প্রতিটি আসরেই মিলেছে পদক। সব মিলিয়ে ১৯৯০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ১৮ বছরে বাংলাদেশ জিতেছে মোট ৮টি পদক।  শুটিং-আরচারি না থাকায় বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমস নিয়ে খুব একটা আশা ছিল না কারও। ৫০ জনের বহর নিয়ে বার্মিংহাম এলেও পদক জয়ের কথা বলতে পারছিলেন না বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা। তাই বার্মিংহাম এসে খেলা দেখার চেয়ে ঘোরাফেরার দিকেই মনোযোগী ছিলেন তারা। ডাক্তারদেরও ঠিকঠাক মতো ভেন্যুতে পাওয়া যায়নি। ভারতের কথা বাদ দিলেও এসএ গেমসে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা পদক তালিকায় নাম তুলেছে একাধিকবার। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ব্রোঞ্জ জিতে রীতিমতো হৈ-চৈ ফেলে দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার স্প্রিন্টার উপুন আবেকুন। সেখানে বাংলাদেশের স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমান ৬৭ জনে হয়েছেন ৩৩তম। ২০০ মিটার স্প্রিন্টে রাকিবুল হাসান, হাইজাম্পে উম্মে হাফসা রুমকি নিজেদের সেরাটাও দিতে পারেননি। ২.১০ মিটার লাগিয়ে ১৩ জাম্পারের মধ্যে ১১তম হয়েছেন মাহফুজুর রহমান।  সাঁতারের দশ ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের পাঁচ সঁতারু। সেখানেও তারা জন্ম দিয়েছেন হতাশার গল্প। মাহমুদুন নবী নাহিদ ১০০ ও ৫০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে অংশ নিয়ে ২৬তম এবং  ৪১তম হয়ে শেষ করেছেন। সুকুমার রাজবংশীর গল্পটাও অভিন্ন। ৫০ ও ১০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে ৩০তম হয়েছেন এই সাঁতারু। আসিফ রেজা অংশ নিয়েছেন ১০০ ও ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইলে। সেখানেও নিজের সেরাটা দিতে পারেননি এই সাঁতারু। মেয়েদের মধ্যে সোনিয়া খাতুন ৫০ ও ১০০ মিটার  ফ্রিস্টাইলে ৬১তম ও ৪২তম হয়েছেন। মরিয়ম আক্তার ১০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে ১:২০.৩৭ সেকেন্ডে ২৪তম ও ৫০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে ৩০তম হন ৩৭.৯০ সেকেন্ড সময় নিয়ে। এদের মধ্যে কেউই পুলে তাদের সেরা টাইমিং করতে পারেননি।  গোল্ডকোস্টে নিজের সেরাটা দিয়ে পঞ্চম হলেও বার্মিংহামে সে রেজাল্টও ধরে রাখতে পারেননি মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। এমনকি স্ন্যাচেও নিজের সেরা ওজন উঠাতে ব্যর্থ এসএ গেমসে দুটি স্বর্ণ জয়ী এই নারী ভারোত্তোলক।  ৬৪ কেজিও ওজন শ্রেণিতে মাবিয়া স্ন্যাচে ৭৮ কেজি, ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১০৩ কেজি উঠিয়ে ১২ ভারোত্তোলকের মধ্যে ৭ম হয়েছেন। মনিরা কাজীও রীতিমতো হতাশ করেছেন। ৭৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে ১১ প্রতিযোগীর মধ্যে ৯ম হয়েছেন এই ভারোত্তোলক। এদের মধ্যে ব্যক্তিক্রম ছিলেন আশিকুর রহমান তাজ। ৫৫ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্ন্যাচে ৯৩ কেজি ও ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১১৮ কেজি তুলে ১১ প্রতিযোগীর মধ্যে পঞ্চম হয়েছেন তাজ। আরেক ভারোত্তোলক মার্জিয়া আক্তার ইকরা ১১ জনে হয়েছেন ১১তম।  চার কুস্তিগির বার্মিংহাম এসেছিলেন নিজেদের প্রমাণে। এর মধ্যে দুই নারী কুস্তিগিরের প্রথম ম্যাচ জিতলেই নিশ্চিত হতো ব্রোঞ্জপদক। সুযোগ নিতে পারেননি দোলা খাতুন ও তিথি রায়। আব্দুর রশিদ হাওলাদার ও লিটন বিশ্বাসও পারেননি প্রি-কোয়ার্টারের বাধা পেরুতে।  জিমন্যাস্টিকসেও ভালো কিছু করে দেখাতে পারেননি নিউজিল্যান্ড প্রবাসী আলী কাদের হক। শিশির আহম ও আবু সাইফ রাফিও নিজেদের গণ্ডি পেরুতে পারেননি। বক্সিংয়েও ব্যর্থতার একই গল্প। চার বক্সারের কেউই একটি লড়াইও জিততে পারেননি।  কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল টেবিল টেনিস। নিজ যোগ্যতায় কমনওয়েলথ গেমসে কোয়ালিংফাই করা ডিসিপ্লিনে পুরুষ  দলগত ইভেন্টে ফিজি ও গায়নাকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে টিটি দল। তবে সেমিতে ওঠার লড়াইয়ে শক্তিশালী ভারতের কাছে ৩-০ সেটে হেরে যান মুহতাসিন হৃদয়, রাহমিম লিয়ন ও রাব্বিকে নিয়ে গড়া বাংলাদেশ দল। নারী ও পুরুষ এককে একটি করে ম্যাচ জেতেন হৃদয়, রাব্বি, রাহমিম, সোমা ও মৌ। এদের মধ্যে সোমা ইনজুরির কারণে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে পারেননি। বাকিরাও প্রথম রাউন্ডের গণ্ডি পেরুতে ব্যর্থ হন। মিক্স ডাবলসে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে ব্যর্থ হন মৌ হৃদয় জুটি। পুরুষ দ্বৈতে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে আবারো ভারতের সামনে পরেন হৃদয়-রাহমিম জুটি। আর সেখানেই থামে টিটি দলের বার্মিংহাম অভিযান।  

খেলা থেকে আরও পড়ুন

   

খেলা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status