দেশ বিদেশ
রাজধানীতে বিভিন্ন সংগঠনের বিক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার
৭ আগস্ট ২০২২, রবিবার
জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ঢাকায় বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে এবি পার্টি। সমাবেশ শেষে মিছিলটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিজয়নগরস্থ বিজয়-৭১ চত্বরে এসে শেষ হয়। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার অনুযায়ী দাম কমে গিয়ে যখন প্রতি লিটার তেলের মূল্য বাংলাদেশি টাকায় ৬০ টাকায় নেমে এসেছে, তখন সরকার ৬০ টাকার তেল জনগণের কাছ থেকে ১৩৫ টাকা নিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের আয়োজন করছে। এ টাকা তারা কোথায় পাচার করবে? জনগণের কাছে তার জবাব দিতে হবে। তিনি বলেন, এমন চোর, দুরাচার ও ডাকাত সরকারের কবলে পড়ে দেশ আজ ভয়াবহ পরিণতির দিকে যাচ্ছে। তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সরকারকে বিদায় করার জন্য তিনি জনগণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান। সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, বাংলাদেশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার হরণ ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে গত ১৪ বছর যাবৎ রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে বসে আছে বর্তমান সরকার। প্রতিনিধিত্বহীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী এখন বলছেন, তাকে সরানোর জন্য নাকি ‘ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে! আমরা জানি না কে, কোথায় এই ষড়যন্ত্র করছে! তিনি যদি জেনে থাকেন তাহলে জাতি তাদের নাম, পরিচয় জানতে চায়। মঞ্জু বলেন, ‘জনগণের প্রাণের দাবি হলো ভোটচোর ও ডাকাতদের সর্দার এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগ। মানুষ ব্যালটের মাধ্যমে এই ফ্যাসিস্ট শাসনকে বিদায় জানাতে চায়। গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বিশ্ববাজারে বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম নিম্নমুখী। এ সময়ে বাজার পর্যবেক্ষণ না করে কেবল আইএমএফের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও গণবিরোধী। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশাহারা দেশের সাধারণ মানুষের চরম এক দুঃসময়ে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাই। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম একলাফে প্রায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছি বাড়ানোয় জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে পরিবহন সেক্টরে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হবে, ফলে আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়বে। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেক ছোট ছোট শিল্প-কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে একদিকে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির মধ্যে দিয়ে জাতীয় অর্থনীতির ওপর চাপ আরও বাড়বে। অন্যদিকে বেকারত্ব সমস্যা আরও প্রকট হবে। জ্বালানি তেলে ভর্তুকি দিয়ে দাম কমানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ৯০’র গণঅভ্যুত্থানের সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্র নেতারা। গতকাল এক বিবৃতিতে রাতারাতি ডিজেল, পেট্রোল, অকটেনের দাম বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা। নেতারা বলেন, এমনিতেই ডলারের দাম বৃদ্ধি, টাকার মান কমে যাওয়া ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এই অবস্থায় হঠাৎ জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। সেই সঙ্গে জনগণের দুর্ভোগ অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাবে। দেশকে ক্রমান্বয়ে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়ায় তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন নাজমুল হক প্রধান, মোস্তফা ফারুক, নুর আহমেদ বকুল, শফি আহমেদ, আখতার সোবহান মাসরুর, বজলুর রশিদ ফিরোজ, সিরাজ্জুমমুনীর, সুজাউদ্দীন জাফর, আমিনুল ইসলাম, মনসুরুল হাই সোহন, মুখলেছউদ্দিন শাহীন, রেজাউল করিম শিল্পী, হারুন মাহমুদ, রাজু আহমেদ, কামাল হোসেন বাদল, বদরুল আলম, জায়েদ ইকবাল খান, সালেহ আহমেদ, ডা. সর্দার ফারুক প্রমুখ। ওদিকে, বিশ্ববাজারে দাম কমার পরও দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করে সরকার ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে বলে দাবি করেছেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, জনস্বার্থের কথা ন্যূনতম বিবেচনা করতে ব্যর্থ এই সরকারের উচিত ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে সিপিবি জেলা-উপজেলায় ঘেরাও, অবরোধ ও প্রয়োজনে হরতালের মতো কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবে। গতকাল বিকালে জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল প্রেস ক্লাব মোড় দিয়ে ঘুরে মুক্তি ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। প্রিন্স বলেন, ডিজেল, কেরোসিনসহ জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সরকারের পক্ষে অপরাধমূলক কাজ। তেলের দাম বাড়লে যাতায়াতসহ সব কিছুর দাম বাড়বে। অর্থনীতিতে চাপ পড়বে। জনজীবন বিপর্যস্ত হবে। সমাবেশে সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, এই সরকার অগণতান্ত্রিক এবং জুলুমে দেশ চালাচ্ছে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেটের এবং লুটেরাদের সরকার। পার্লামেন্টের ৬২ শতাংশ ব্যবসায়ী সদস্য, তারা নিজ নিজ শ্রেণি স্বার্থে, ব্যবসায়ীদের স্বার্থে দেশ পরিচালনা করছে। সরকার জনগণের পেটে লাথি মারছে বলে দাবি করে শাহ আলম বলেন, বাজার অর্থনীতির বিপরীতে জনগণের অর্থনীতিতে দেশ পরিচালনা করা না গেলে দেশের অবস্থা আরও শোচনীয় হবে। ব্যবস্থা বদল করে তীব্র গণসংগ্রামের মধ্যদিয়ে জনগণের বিকল্প শক্তি গড়ে না তোলার বিকল্প নেই। বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সহ-সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, কেন্দ্রীয় নেতা অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ, সাজ্জাদ জহির চন্দন প্রমুখ।