শেষের পাতা
স্ত্রী-মেয়েকে হত্যা
১২ বছর পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত স্বামী গ্রেপ্তার
স্টাফ রিপোর্টার
৬ আগস্ট ২০২২, শনিবারযৌতুক দাবি ও পারিবারিক কলহের জেরে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে জাকির হোসেন (৪৭) নামের এক ব্যক্তি। ২০০৫ সালে মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে এ ঘটনা ঘটে। হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর তিনি জামিন পান। বিচারে মৃত্যুদণ্ডের রায় হয় জাকিরের। এরপর দীর্ঘ ১২ বছর আত্মগোপনে ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে সাভারের শাহীবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক ডিআইজি মোজাম্মেল হক। বলেন, স্ত্রী-সন্তান হত্যায় ৫ বছর জেল খেটে জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যান জাকির। এরপর ২০১৩ সালে তিনি আবারো বিয়ে করে সাভার থানাধীন জিনজিরা এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি চট্টগ্রাম, ঢাকার আরামবাগ, ফকিরাপুল হাজারীবাগ, খিলগাঁও ও সাভার এলাকায় থেকেছেন। পালিয়ে সাভার চলে যাওয়ার পর নিজেকে আড়াল করার জন্য জাকির নামের পরিবর্তে বাউল নাম ব্যবহার করে বাউল পরিচয় দিয়ে এসেছিলেন। প্রতিনিয়ত করেছেন পেশা পরিবর্তন। কখনো গার্মেন্টস স্পাইরাল বাইন্ডিং, ঝুট ব্যবসা করেছেন। কখনো বাউলের ছদ্মবেশে জীবিকা নির্বাহ ও আত্মগোপনে থেকেছেন।
ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৪ঠা আগস্ট রাতে র্যাব-৪ মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুরে অন্তঃসত্ত্বা নিপা আক্তার (২২) ও তার ৩ বছরের মেয়ে জ্যোতিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা মামলার দীর্ঘ ১২ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জাকির হোসেনকে সাভার শাহীবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাকির হোসেনের মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার জিয়নপুরের মো. আবু হানিফের মেয়ে নিপা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে নগদ অর্থ, গয়না এবং আসবাবপত্র দেয়া হয়। বিয়ের পর থেকে জাকির তার স্ত্রীকে আরও যৌতুকের জন্য নির্যাতন করতে থাকে। এরমধ্যে জাকির-নিপা দম্পতির ঘরে জ্যোতি নামে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। মেয়ের বয়স যখন ৩ বছর তখন পুনরায় গর্ভধারণ করেন নিপা আক্তার। সে সময় জানতে পারেন নিজের বড় ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে জাকিরের পরকীয়া চলছে। বিষয়টি ভাসুর জাহাঙ্গীরকে নিপা জানিয়ে দেন। এনিয়ে মনোমালিন্য ও কলহ চরমে ওঠে। জাকির নিপাকে তালাকের ভয় দেখানো শুরু করেন। পারিবারিক সম্মানহানি ও প্রতিশোধের মানসিকতা থেকে জাকির স্ত্রী নিপাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তিনি আরও বলেন, ২০০৫ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি রাতে জাকির ঘুমন্ত অবস্থায় নিপা আক্তারকে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। নিজের মেয়ে জ্যোতি ঘটনা দেখতে পাওয়ায় তাকেও শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
ওই বছরের ২৭শে ফেব্রুয়ারি নিহতের বাবা আবু হানিফ বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন। মামলায় জাকির হোসেন, তার বাবা নইম উদ্দিন শেখ, মা মালেকা বানু এবং ভাবী তাহমিনাকে আসামি করা হয়। ওই মামলার এক নম্বর আসামি জাকির ৫ বছর জেলে থেকে জামিনে বেরিয়ে ২০১০ সালে আত্মগোপনে চলে যান। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি জাকির হোসেন, তার বাবা নইম উদ্দিন শেখ, মা মালেকা বানু এবং ভাবী তাহমিনাসহ জাকিরের বড় ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন (৩২), জাকিরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমিনুল (১৮), জাহাঙ্গীরের শ্যালক স্বপন (২২) ও হাসান (১৮) এবং জাকিরের চাচাতো ভাই পারভেজ ওরফে রানা ওরফে মিলন (১৫)সহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ মামলার বিচার শেষে আদালত জাকিরকে মৃত্যুদণ্ড, ভাবী তাহমিনা, জাকিরের ভাই জাহাঙ্গীর, জাকিরের বন্ধু আমিনুল, জাকিরের চাচাতো ভাই পারভেজ রানা মিলন, জাহাঙ্গীরের শ্যালক স্বপন ও হাসানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তবে এ মামলায় নিপার শাশুড়ি মালেকা বানু বেকসুর খালাস পান। শ্বশুর নইম উদ্দিন বিচার চলাকালে মারা যান।