বাংলারজমিন
বল্লামুখার বেড়িবাঁধ নির্মাণে বিএসএফের বাধা, উত্তেজনা
ফেনী প্রতিনিধি
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবারফেনীর পরশুরামের নিজ কালিকাপুর সীমান্তে ভারতীয় অংশে "কয়েকটি অস্থায়ী পোস্ট স্থাপনের চেষ্টা করছে" ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এতে দু'দেশের বর্ডার সংলগ্ন মুহুরী নদীর ভাঙনকৃত বল্লারমুখার বেড়িবাঁধ পুননির্মাণে "উত্তেজনা" দেখা দিয়েছে। সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিএসএফ কয়েক দফা "পতাকা বৈঠক" করেছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয়রা গ্রাসবাসী, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাতে সীমান্তে লাগানো বাতি (লাইট) বন্ধ করে বালির বস্তা দিয়ে তিনটি অস্থায়ী পোস্ট স্থাপন করেছে বিএসএফ। মুহুরী নদী সংলগ্ন বল্লামুখা বেড়িবাঁধের ৭০ মিটার অংশের ৩০ মিটার নোম্যন্সল্যান্ডে রয়েছে, এমন দাবি করে বিএসএফ বেড়িবাঁধ পুননির্মাণের শুরু থেকেই বাঁধা প্রদান করে। মঙ্গলবার সকালে বল্লামুখার বাঁধের ৭০ মিটার নির্মাণে কাজ করার সময় বিএসএফ এসে কয়েকটি স্কেভেটর বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে ভারতের ঈশানচন্দ্র নগর ও বাংলাদেশের নিজ কালিকাপুর ক্যাম্পের বিজিবি-বিএসএফ’র মধ্যে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুরে বিজিবি-বিএসএফের উপস্থিতিতে সীমান্তে ওই জায়গাটি পরিমাপ করা হয়। বিজিবি'র পক্ষে মজুমদার হাট কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আবদুর রশিদের নেতৃত্বে সেখানে বিজিবি সদস্যরা অবস্থান নিয়েছিলেন।
বিগত ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে আসা উজানের ঢলের পানির তোঁড়ে মুহুরী নদীর তীরবর্তী পরশুরামের নিজ কালিকাপুর সীমান্তের বল্লারমুখা বেড়িবাঁধের তিনটি স্থানে প্রায় ৫শ মিটার বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর থেকে এখানের বাঁধ পুননির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল এলাকাবাসী। বিগত এক মাস ধরে ভাঙনকৃত বাঁধগুলো পুননির্মাণের কাজ করে আসছে ঠিকাদার।
আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইনানুযায়ী শূন্যরেখা থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাঁধ পুনর্র্নিমাণের কাজ শুরু হলে গত ৩০ জানুয়ারি প্রথম দফায় বল্লামুখার বাঁধ পুননির্মাণ কাজে বাঁধা প্রদান করে বিএসএফ। তবে সেই বাধা উপেক্ষা করে কাজ চালিয়ে যেতে ঠিকাদারদের নির্দেশ দেয় বিজিবি। পরে কাজ চলমান থাকলেও গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকালে ভারতীয় বিএসএফ ফের বাঁধ পুনর্নির্মাণে বাঁধা প্রদান করে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করে।
স্থানীয় বাসিন্দ মো. ইয়াসিন জানান, বিএসএফ হঠাৎ করেই সীমান্তে পাঁচ থেকে ছয়টি বাঙ্কার খননের কাজ শুরু করেছে। বল্লামুখা বাঁধের নির্মাণ কাজ চলাকালীন সময় আবাও কাজ বন্ধ করতে বলেছে। এতে করে এলাকায় উত্তেজনা পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে।
অপর বাসিন্দা এমএ হাসান বলেন, বর্ষার মওসুম আসার আগে নিজেদের বাড়ি-ঘর ও সহায় সম্বল বাঁচাতে বল্লামুখা বাঁধ পুননির্মাণ নিয়ে অস্তিরতা বিরাজ করছে। বিএসএফ কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলেও বিজিবি থেকে বলা হয়েছে, জায়গাটির শুণ্যরেখায় (নোম্যান্সল্যান্ড) পড়েনি। এজন্য কাজ চালমান থাকতে পারবে।
বিজিবি ৪ ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ২০২৪ সালের আগস্টে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বল্লারমুখে বেড়িবাঁধের ৭০ মিটার সংস্কারকাজ চলমান আছে। তবে বর্ডার গাইড লাইন অনুযায়ী শূন্য লাইন থেকে ১৫০ গজের মধ্যে যেকোন নতুন কাজ হলে দুই দেশের অনুমোদন প্রয়োজন। বেড়িবাঁধের ৭০ মিটার কাজের মধ্যে ৩০ মিটার ১৫০ গজের মধ্যে পরেছে। যা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশন এ সমন্বয় অব্যহত আছে। অনুমোদন সাপেক্ষে ওই ৩০ মিটারের কাজ সম্পন্ন হবে। তবে ১৫০ গজের বাইরে থাকায় ৪০ মিটারের কাজ বর্তমাবে চলমান রয়েছে।
বিএসএফ'র অস্থায়ী পোস্ট স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিজিবি টহল দল সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত টহল অংশ হিসেবে ঘটানস্থলে যায়। এসময় সীমান্তের ওপারে বালির বস্তা ফেল বিএসএফ তিনটি অস্থায়ী পোস্ট স্থাপনের প্রস্তুতি দেখতে পায়। পরে সীমান্ত নীতিমালা মেনে অস্থায়ী পোস্ট স্থাপন করা যায়না বলে জানালে বিএসএফ অস্থায়ী পোস্ট তিনটি সরিযে ফেলে। আক্ষরিক অর্থে পতাকা বৈঠক না হলেও দু-দেশের সীমান্তে কর্মরত কমকর্তারা মৌখিক বাক্যবিনিময় করেছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলের পানিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ১০২টি স্থানে ভেঙে যায়। এতে ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল জেলার পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও ফুলগাজী উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা। ভয়াল সেই বন্যায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়। সেসময় জেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষ, ঘরবাড়ি, ফসল ও সম্পদ হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয় । বন্যা পরবর্তী ৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যায়ে ভাঙনকৃত ৯৬টি অংশের মেরামত কাজ সম্পন্ন হয়েছে । বর্তমানে বল্লামুখা অংশের দুটিতে মেরামত কাজ চলমান রয়েছে।