বাংলারজমিন
ফেসবুক লাইভের জেরে বিএনপি নেতার বাড়িতে দু’দফায় হামলা, আহত ১৩
স্টাফ রিপোর্টার, চৌমুহনী থেকে ফিরে
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবারনোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ফেসবুকে লাইভ দেয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মফিজুর রহমান দিপুর (৬৪) বাড়িতে দুই দফায় হামলা চালিয়েছে দলীয় প্রতিপক্ষরা। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা ও রাত ৯টার দিকে উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার ৩নম্বর ওয়ার্ডের কুরি পাড়ার শ্মশান রোডের বিএনপি নেতা দিপুর বাড়িতে এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানান, মফিজুর রহমান দিপু উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি, তার স্ত্রী নোয়াখালী জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পারভীন আক্তার, তার ছেলে বেগমগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব দাউদ উর রহমান ফারহান ও তার ছোট ছেলে চৌমুহনী কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাসুদুর রহমান প্রাহিম। গত রোববার রাত ৮টার দিকে তার বড় ছেলে সাবেক ছাত্রদল নেতা ফারহান ফেসবুক লাইভে এসে চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ও ১/১১ এর আওয়ামী লীগের দোসরদের নিয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে বিভিন্ন কথা বলে। হামলার শিকার বিএনপি নেতা দিপু বলেন, ছেলের ফেসবুক লাইভ শেষ হলে একই দিন রাত ১১টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষা চন্দ্র দাস আমাকে মুঠোফোনে কল দেয়। একপর্যায়ে হুমকি দিয়ে বলে তোর ছেলেকে ফেসবুক লাইভ ডিলেট করতে বল। তা নাহলে তোর পরিবারকে শেষ করে দিব। তোর ছেলে আমাদের ইঙ্গিত করে কথা বলছে। এর পরের দিন সোমবার রাত ১০টার দিকে একদল অস্ত্রধারী আমার বাড়িতে হামলা করার উদ্দেশ্যে এলাকায় প্রবেশ করে। স্থানীয় লোকজন টের পেয়ে ধাওয়া দিলে তারা আমার ছেলেকে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরে মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনায় আমার ছেলে বেগমগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। দিপু অভিযোগ করে আরও বলেন, পরবর্তীতে ফেসবুক লাইভের জের ধরে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিএনপিতে অনুপ্রবেশকারী আব্দুল (৪২) ও তার ভাই জাহাঙ্গীর (৩৫) ও সোহাগের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন দেশীয় অস্ত্রধারী আমার বাড়িতে হামলা চালায়। ওই সময় তারা আমার বসত ঘরের দরজা, জানালা, আসবাবপত্র, টিনের বেড়া ভেঙে তছনছ করে দেয়। আমার ছেলে ফারহান, স্ত্রী পারভীনসহ আমার পরিবারের ৫ জনকে বেধড়ক মারধর করে। ভুক্তভোগী জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক পারভীন আক্তার বলেন, একই দিন রাত ৯টার দিকে চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর বাবুলের ছেলে যুবদল নেতা সুমন, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রাজন, সাইফুল ও কায়েসের নেতৃত্বে ২৫-৩০ অস্ত্রধারী দ্বিতীয় দফায় আমার বসতঘরে হামলা চালায়। এ সময় আমাদের দেখতে আসা ছয়জন ছাত্রদল কর্মী ও দুই প্রতিবেশি নারী, ছেলেকে বাঁচাতে গেলে আমাকেসহ ১৩ জনকে পিটিয়ে আহত করা হয়। ৮টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয় এবং আমার গলার একটি চেইন ও একটি মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত চৌমুহনী কলেজের ডিগ্রি শাখার ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক নাহিদকে নোয়াখালীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হামলাকারীরা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর অনুসারী। তিনি আরও বলেন, আমার ছেলের অপরাধ ছিলÑ চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ও ১/১১ এর আওয়ামী লীগের দোসরদের নিয়ে কথা বলা, যারা সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের ছোট ভাই জাবেদের ভোট করেছে, তাদের নিয়ে কথা বলা। যোগাযোগ করা হলে অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষা চন্দ্র দাস বলেন, হামলার বিষয়টি আমিও শুনেছি। ফারহান মাদক সেবন করে, এ নিয়ে কার কার সাথে ঝগড়া হয়েছে। এর আগেও অসামাজিক কার্যকলাপে ছিল এবং চাঁদাবাজি, নেশার কারণে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার বাবা-মা আমাদের দল করে। আমি কাউকে মুঠোফোনে হুমকি দেয়নি। আমার নির্দেশে কোনো হামলা হয়নি। আমি কেন কারো বাড়িতে হামলা করতে নির্দেশ দেব। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, দিপু ও তার স্ত্রীকে আমি নেতা বানিয়েছি। তার ছেলে বহিষ্কৃত। তাদের মত ব্যক্তির বাড়িতে আমি কেন হামলার নির্দেশ দেব। তারা কোন আন্দোলন সংগ্রামে ছিল না। আমি শুনেছি দিপুর ছেলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষার সাথে বেয়াদবি করেছে। বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ান হামলার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এটা মনে হয় তাদের দলীয় কোন্দল। ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ফারহানকে শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে জড়িত থাকায় বহিষ্কার করা হয়েছে। এটা নিয়ে তাদের মধ্যে আগে থেকে দলীয় মনোমালিন্য ছিল। দুই দফায় ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। ৩-৪টি মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়। এক ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।