ঢাকা, ১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

জুলাই গণহত্যার তদন্ত

২০শে এপ্রিলের মধ্যে শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার

মানবতা-বিরোধী অপরাধের মামলায় ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের ব্যাপারে আগামী ২০শে এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তবে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যেনো ত্রুটিপূর্ণ তদন্ত প্রতিবেদন না হয় সে ব্যাপারে নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগের পক্ষ থেকে সময়ের আবেদনের করলে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ এই ৪৬ জনের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় এ নিয়ে তিন দফা বাড়ানো হলো। এর আগে প্রথম দফায় এক মাস ও দ্বিতীয় দফায় দুই মাস সময় বাড়ানো হয়। আদালতে সব আসামির পক্ষে ওকালতনামা জমা দেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। আদালতকে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার মৃত্যুর ভুল খবর ছড়িয়েছে।

জুলাই গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত বছর অক্টোবরে দায়ের করা মামলায় হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই প্রেক্ষিতে গতকাল তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টাসহ ১৬ জনকে হাজির করা হয়। এদিন আদালতে হাজির করা হয়- আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, শাজাহান খান, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান, আব্দুর রাজ্জাক, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, দীপু মনি, হাসানুল হক ইনু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম, ১৪ দলের রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুকে।
এ ছাড়া ঢাকা-৭ আসনের সাবেক এমপি সোলাইমান সেলিম অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে আছেন। তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে প্রোডাকশন ওয়ারেন্টের আবেদন করলে আদালত আবেদন মঞ্জুর করে ২০শে এপ্রিল তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ট্রাইব্যুনালের শুনানি শেষে তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আজকে ২টি মামলার মধ্যে হাসিনার বিরুদ্ধে একটি এবং ওবায়দুল কাদের সহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে অপর মামলাটির তারিখ নির্ধারিত ছিল। তিনি জানান, শেখ হাসিনার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার বরাত দিয়ে আমরা আদালতকে জানিয়েছি যে, এই মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া প্রায় শেষের দিকে আছে। কিন্তু জাতিসংঘ গত জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে বিস্তারিত তদন্তপূর্বক যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, তা ছিল বিস্তৃত এবং সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায়। ছাত্র-জনতাকে দমন করার জন্য রাষ্ট্রের সকল বাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র, লিথ্যাল উইপন (প্রাণঘাতী অস্ত্র), হেলিকপ্টার ব্যবহার করে তাদেরকে হত্যা করেছে। জেন্ডারবেজড ভায়োলেশন হয়েছে। বিশেষ করে শিশুদেরকে লক্ষ্য করে হত্যা করা হয়েছে, নারীদের টার্গেট করা হয়েছে। এই আন্দোলন দমনের সময় সরকারের নিষ্ঠুরতা ছিল পূর্বপরিকল্পিত, যা ধাপে ধাপে বেড়েছে, সারা বাংলাদেশ জুড়ে একযোগে হয়েছে- যার প্রধান নির্দেশদাতা হিসেবে জাতিসংঘ শেখ হাসিনাকে চিহ্নিত করেছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের লোকেরা পুলিশ এবং অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সহায়ক ফোর্স হিসেবে এই হত্যাকাণ্ড এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে।

তাজুল ইসলাম বলেন, জাতিসংঘ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় একটা আন্তর্জাতিক সংগঠন। তাদের পলিটিক্যাল বায়াস্ত হওয়ার কারণ নেই। তারা যেহেতু গণহত্যার ব্যাপারে সুস্পষ্ট রিপোর্ট দিয়েছে, আমাদের মামলা প্রমাণে এটা এভিডেন্স হিসেবে কাজ করবে। জাতিসংঘ যেসব ম্যাটেরিয়ালের উপর ভিত্তি করে এই তদন্ত প্রতিবেদন করেছে, সেসব ম্যাটেরিয়াল আমরা তাদের কাছ থেকে চেয়েছি। আমরা একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেগুলো সংগ্রহ করবো। এই কারণে আদালতে ২ মাস সময় চেয়েছি; তার আগেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবো বলে আশা করছি। তিনি আরও বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ বিশ্বের সবচেয়ে বড় অপরাধ। এটার তদন্ত প্রক্রিয়া বিশ্বের সবচেয়ে জটিল এবং কমপ্লেক্স। এই কারণে যথাযর্থ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রতিবেদন দিতে আমাদের প্রসিকিউশন টিম দিন-রাত কাজ করছে। আমরা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি, আশা করি খুব সহসাই সবগুলো মামলার রিপোর্ট আমাদের হাতে চলে আসবে।

চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণশুনানির জন্য যাচ্ছি। তাদের ধারণকৃত ফাস্ট হ্যান্ড ইনফরমেশন, বিভিন্ন ছবি, ভিডিও ক্লিপ সংগ্রহ করছি। আমরা পরিকল্পনা করছি যে, এই সপ্তাহ এবং আগামী সপ্তাহে আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবো। সেখান থেকে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে আমরা তদন্ত রিপোর্টে যুক্ত করবো। এ ছাড়াও বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে শহীদ এবং আহত ব্যক্তিদের শরীর থেকে প্রাপ্ত বুলেট আমরা সংগ্রহ করেছি। কোন ধরনের অস্ত্র থেকে গুলি করা হয়েছে সেগুলোর তথ্য সংগ্রহ করছি। জাতিসংঘ বলছে- ১৪শ’র মতো শহীদ হয়েছে। আমাদের কাছে ১৫০০ থেকে ২০০০ শহীদের তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। আমরা খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে সকল তদন্ত সম্পন্ন করতে সক্ষম হবো বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status