দেশ বিদেশ
শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে সব করছে সরকার- প্রেস সচিব
স্টাফ রিপোর্টার
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবারভারতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে যা করা দরকার, অন্তর্বর্তী সরকার সবকিছু করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করা। কিছুদিন আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে কী ধরনের অপরাধ তিনি করেছেন। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের এ প্রতিবেদনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর চাপ বেড়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। প্রেস সচিব বলেন, এটা খুবই বড় ও ভয়ঙ্কর রকমের অপরাধ। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। এই রিপোর্ট ও অন্যান্য কিছু মানবাধিকার বিষয়ক রিপোর্টের পর প্রচুর চাপ তৈরি হয়েছে। এর একটা ইঙ্গিত আছে ইন্ডিয়া টুডে’র একটা জরিপে। সেখানে দেখা গেছে ৫৫ শতাংশ চান তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হোক। আবার একটা অংশ চান তাকে অন্য কোনো দেশে পাঠানো হোক। শফিকুল আলম বলেন, শেখ হাসিনা গত ১৫-১৬ বছরে যে নৃশংস স্বৈরাচারী ব্যবস্থা চালিয়েছেন, এটা স্পষ্টভাবে এসেছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে। আমার মনে হয় এখন চাপ আরও হবে। আমরা তাকে ফেরত চেয়ে ভারতকে একটা চিঠি দিয়েছি। চাপটা অব্যাহত থাকবে। আমরা চাইবো তাকে এনে সশরীরে হাজির করে বিচার করতে। বাংলাদেশের মানুষ তার বিচার দেখতে চায়। এটা আমাদের অগ্রাধিকার এবং আমরা এটার জন্য যত কাজ করা দরকার সব করছি। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে শফিকুল আলম বলেন, আমরা বার বার বলেছি, এই বিষয়ে দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। তবে, আমাদের একটাই কথা আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী ও সমর্থক জুলাই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত, গুম-খুনে জড়িত, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত; তাদের সবার বিচার হবে। এটা হওয়ার পর দেশের মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগের বিষয়ে তারা কী ভাবছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দুবাইয়ে বাংলাদেশি শ্রমিক নিষেধাজ্ঞায় রয়েছে। এই নিয়ে ড. ইউনূস সেখানকার ৫ থেকে ৬ জন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা আশা করছি, এই নিষেধাজ্ঞা দ্রুত উঠে যাবে। সেখানে আবারো বাংলাদেশি শ্রমিক যেতে পারবে। এই নিয়ে সরকারের কাজ চলমানও রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ আলাপের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সঙ্গে আমরা নতুন করে অনেক বিষয় নিয়ে আলাপ করছি। ওদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নে কমিপ্রহেনসিভ ডায়ালগ হয়েছে। এর ফলে কয়েকটি বিষয় হবে- আমিরাত থেকে বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসবে। এ ছাড়া আমাদের ওপর যে ভিসা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেটা দ্রুত উঠে যাবে।
ভিসা নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে অনেক বাংলাদেশি বিশেষ করে প্রশিক্ষিত শ্রমিকরা সেখানে চাকরি পাবেন। এ সময় শফিকুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত আইসিটি খাতের দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে দেশি-বিদেশি আইসিটি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি বলেন, গত কিছুদিন আইসিটি এবং ডিজিটালাইজেশনকে ঘিরে অনেকগুলো দুর্নীতির সংবাদ গণমাধ্যমে বেরিয়েছে। ড. ইউনূস চাচ্ছেন আইসিটি খাতের দুর্নীতি নিয়ে একটা শ্বেতপত্র হোক। এই শ্বেতপত্র তৈরির জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটিতে বিশ্বের স্বনামধন্য...যারা আইসিটি নিয়ে কাজ করেছেন তাদের যুক্ত করা হবে। তাদের মূল কাজ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে যে ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে, সেটা কীভাবে করেছে, কতো টাকা এখান থেকে পাচার হয়েছে তা বের করা। সুনির্দিষ্টভাবে কোন খাতে কতো টাকা পাচার হয়েছে তার পুরো বিষয়টি দেখা। আগামী দুই মাসের মধ্যে কমিটি একটি দুর্নীতির শ্বেতপত্র বের করবে বলেও জানান শফিকুল আলম। শফিকুল আলম বলেন, দুবাইয়ে গভর্নমেন্ট সামিট প্রতি বছর হয়। এ উপলক্ষে সমপ্রতি প্রধান উপদেষ্টার দেড় দিনব্যাপী সফর ছিল। ওই সফরে তিনি ছিলেন প্রধান (মেজর) অংশগ্রহণকারী (পার্টিসিপেন্ট)। আমিরাতের সঙ্গে আমাদের ভিসা সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা চলছে। আমিরাতে আমাদের ভিসা রেস্ট্রিকশন (নিষেধাজ্ঞা) আছে। এটা বহু বছরের একটা পুরোনো সমস্যা। ২০১২ সাল থেকে একটি পুঞ্জীভূত সমস্যা তৈরি হয়েছে। আমাদের যারা জাহাজের ক্রু তারা ভিসা পাচ্ছেন না। সবার জন্য ভিসা একটা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।