বাংলারজমিন
সিলেটের পর্যটন স্পটে সাদা ঘোড়ার কদর
‘এহানে সাদা ছাড়া চলে না, সাদাডার ছবি ক্লিয়ার আইয়ে’
জাবেদ রহিম বিজন, সিলেটের পর্যটন স্পট ঘুরে
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সোমবারশিমুল বাগানে ডুকতেই ঘোড়া নিয়ে এগিয়ে আসে একদল শিশু। পর্যটকদের ঘোড়ায় চড়িয়ে পয়সা কামাই করে এরা। কারও বয়স দশ, কারও বারো। ঘোড়ার মালিকরা দিন শেষে এসে গুনে নেন আয়। লাকাব এই শিশুদের একজন। জানালো এটা তার মামুর ঘোড়া। মামুর নাম মরম আলী। পিতা সেলিম মিয়া। ১০ বছর বয়সী লাকাব দুই ভাই-এক বোনের মধ্যে বড়। সকালে চলে আসে ঘোড়া নিয়ে শিমুল বাগানে। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত বাগানেই থাকে ঘোড়া নিয়ে। বাগানের গেইট দিয়ে নতুন লোকজন ঢুকতে দেখলেই ঘোড়া নিয়ে এগিয়ে যায় সবাই। ঘোড়ায় উঠতে পীড়াপীড়ি করতে থাকে। লাকাব কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে বার বারই তার ঘোড়ায় চড়তে বলছিলো- ‘ভাই উড’। ঘোড়ার মধ্যে মানুষ উডে আমরা ঘুরাই। বাগানের এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে একশো টাকা নেয় সাওয়ারি পিছু। লাকাব জানায়, ৫’শ টাকা পেলে ঘোড়ার মালিক নেবে সাড়ে ৩’শ আর তার দেড়শো। সুনামগঞ্জে তাহিরপুরের বাদাঘাটের মানিগাঁও গ্রামে জয়নাল আবেদীনের শিমুল বাগান। যা এশিয়ার বৃহত্তম শিমুল বাগান হিসেবেই পরিচিত। এই বাগান ঘুরতে প্রতিদিন আসে শত শত পর্যটক। বাগানে রয়েছে ঘোড়ায় চড়ে বাড়তি আনন্দ পাওয়ার ব্যবস্থা। ২০১৬ সালে বাগান হওয়ার আগে এসব ঘোড়া ব্যবহার হতো বাদাঘাট থেকে টিলা পর্যন্ত মালামাল টানার কাজে। ঘোড়ার গাড়ি চলতো তখন। উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষেরা এসব ঘোড়া দিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। ৩০/৩৫টি ঘোড়া আছে ওই ইউনিয়নে। সবগুলো ঘোড়া চলে এখন শিমুল বাগানে। প্রতিদিন হাজার-বারোশ’ টাকা আয় হয় একেকটি ঘোড়া থেকে। ঘোড়ার মালিক মুছা মিয়া ও মঞ্জুর আলী জানান, একটি ঘোড়ার খাবারের জন্য দু’আড়াইশো টাকা খরচও রয়েছে প্রতিদিন। শিমুল বাগানে যে ঘোড়াগুলো চোখে পড়ে তার সবই সাদা। এ সম্পর্কে মঞ্জুর আর মুসা মিয়া জানান, ‘এহানে সাদা ছাড়া চলে না। সাদাডার ছবি ক্লিয়ার আইয়ে, সুন্দর আইয়ে।’ যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরবস্থার মধ্যেও প্রতিদিন দু’আড়াই হাজার লোক এই বাগানে বেড়াতে আসে বলে জানান স্থানীয় মানুষেরা। পর্যটন স্পট সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর। সেখানেও সাদা ঘোড়ার কদর। ধলাই নদী। পাথরবাহিত এই নদীর পাড় থেকে নৌকা ঘাট পর্যন্ত ঘোড়ায় চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে পর্যটকদের জন্যে। ঘোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সিরাজ উদ্দিন জানান, পার্শ্ববর্তী কালাইরাগ, খোলাবাড়ি ও ভোলাগঞ্জ গ্রামের মানুষরাই এখানে ঘোড়া চালনা করে আসছে পর্যটকদের জন্য। সিলেটের অন্যতম এই পর্যটন স্পটেও ২৫/৩০টি ঘোড়া রয়েছে। যার বেশির ভাগের রং সাদা। সাদা পর্যটনের চয়েজ বলেই জানান সিরাজ উদ্দিন। সবাই সাদাডাই খোঁজে। এক হাজার থেকে ১৫’শ টাকা আয় হয় প্রতিদিন একেকটি ঘোড়া থেকে। সিরাজ জানান, ছোট হলে দু’জন আর বড় হলে একজন করে যাত্রী নেন ঘোড়াতে। নদীর পাড় থেকে নৌকা ঘাট পর্যন্ত একজনের ঘোড়ায় চড়ার ভাড়া ১শ টাকা। পর্যটকরা এলে ধুলায় হাঁটা যায় না। সেজন্যে আমরা নিজেরার টাকায় এই রাস্তায় পানি মারায়। যাতে ধুলা না উড়ে।