ঢাকা, ১৯ মার্চ ২০২৫, বুধবার, ৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগ পর্যন্ত মাঠে থাকবে বিএনপি

কিরণ শেখ
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চাপে রাখতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। নির্বাচন ঘোষণার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার চিন্তা রয়েছে দলটির। এসব কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দলকে সংগঠিত করা হবে। নেয়া হবে নির্বাচনের প্রস্তুতি। এরই অংশ হিসেবে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবিতে সারা দেশে জেলা ও মহানগরে সভা ও সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। কর্মসূচি সফল করতে চলছে নানা প্রস্তুতি। জেলা ও মহানগরসহ তৃণমূলে বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এসব কর্মসূচি থেকে সর্বোচ্চ লোক সমাগম ঘটিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দ্রুত একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজনের বার্তা দিতে চায় বিএনপি।
বিএনপি’র নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচির যে ধারণা দেয়া হয়েছে, তা অস্পষ্ট ও হতাশাজনক বলে মনে করে বিএনপি। এজন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে বিএনপি। নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে থাকতে চায় দলটি। এরমধ্যে সারা দেশে সভা-সমাবেশ চলবে রমজানের আগ পর্যন্ত। এরপর রমজানে ইফতার মাহফিল, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি থাকবে। পরবর্তীতে কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। তবে ইতিমধ্যে বিএনপি রাষ্ট্র মেরামতের দলীয় রূপরেখা ৩১ দফা নিয়ে নতুন করে প্রচারণা করা হচ্ছে। এ নিয়ে সারা দেশে প্রশিক্ষণ কর্মশালা চলছে, যেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হচ্ছেন। ওদিকে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটগুলো ৩১ দফা নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করছে। তারাও নিজ নিজ ব্যানারে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে।

১০ই ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’য় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তিনি। 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সঙ্গে যারা ছিলেন তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন- অতিদ্রুত তারা নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন। তিনি বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য তারা কাজ করছেন। আমরা আশা করবো, জনগণের যে প্রত্যাশা আছে, অতিদ্রুত একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন তিনি। আর ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি, জনগণ প্রত্যাশা করছে। এই বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছয় মাস, বিরাজমান রাষ্ট্র পরিস্থিতি বিষয়ে সরকারকে একটি লিখিত পরামর্শ দেয় বিএনপি। 
স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু মানবজমিনকে বলেন, কর্মসূচিতে দেশের অবনতিশীল পরিস্থিতি উন্নত করা এবং শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন আয়োজনের বার্তা দেয়া হবে। পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, পরবর্তী কর্মসূচি পরিস্থির ওপর নির্ভর করবে।  

ওদিকে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায় রাখা, অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা এবং পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের মোকাবিলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে সারা দেশে জেলা ও মহানগরে সভা ও সমাবেশ করবে বিএনপি। ৬৪টি জেলায় বিএনপি এই সমাবেশ করবে। ১২ই ফেব্রুয়ারি থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। শেষ হবে ২৫শে ফেব্রুয়ারি। ৯ দিনে ৬৪ জেলায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

সমাবেশের দিনক্ষণ ও কেন্দ্রীয় নেতারা কোথায় বক্তব্য দেবেন তার তালিকা হলো- 
১২ই ফেব্রুয়ারি: স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় লালমনিরহাট, নজরুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জ, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ খুলনা, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল পটুয়াখালী, আরিফুল হক চৌধুরী সুনামগঞ্জ। 

১৬ই ফেব্রুয়ারি: বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ফেনী।

১৭ই ফেব্রুয়ারি: মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যশোর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান টাঙ্গাইল, সালাহউদ্দিন আহমেদ কক্সবাজার, বেগম সেলিমা রহমান মাদারীপুর, আবদুল আউয়াল মিন্টু চাঁদপুর, শামসুজ্জামান দুদু ঠাকুরগাঁও, আবদুস সালাম বগুড়া, ফরহাদ হালিম ডোনার শরীয়তপুর, আরিফুল হক চৌধুরী মৌলভীবাজার, জহির উদ্দিন স্বপন ভোলা, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স নেত্রকোনা।

১৮ই ফেব্রুয়ারি: স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস মানিকগঞ্জ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু পাবনা, শামসুজ্জামান দুদু পঞ্চগড়, জয়নুল আবদিন ফারুক কুমিল্লা দক্ষিণ, আবুল খায়ের ভূঁইয়া ঝিনাইদহ, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী হবিগঞ্জ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স সৈয়দপুর।

১৯শে ফেব্রুয়ারি: স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নোয়াখালী, আসাদুজ্জামান রিপন রাজবাড়ী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সিলেট, ফজলুর রহমান কিশোরগঞ্জ, মিজানুর রহমান মিনু কুষ্টিয়া, মজিবুর রহমান সারোয়ার পিরোজপুর, মোহাম্মদ জহুরুল হক শাহাজাদা মিয়া জামালপুর। 

২০শে ফেব্রুয়ারি: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী লক্ষ্মীপুর, সেলিমা রহমান বরিশাল দক্ষিণ, আবদুল আউয়াল মিন্টু ময়মনসিংহ দক্ষিণ, আসাদুজ্জামান রিপন ফরিদপুর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান চুয়াডাঙ্গা, মিজানুর রহমান মিনু নওগাঁ, আবদুস সালাম কুড়িগ্রাম।

২২শে ফেব্রুয়ারি: জয়নাল আবেদীন ঝালকাঠি, আহমেদ আযম খান চট্টগ্রাম দক্ষিণ, আসাদুজ্জামান রিপন গোপালগঞ্জ, ফজলুর রহমান ময়মনসিংহ উত্তর, হারুনুর রশীদ জয়পুহাট, মাহবুব উদ্দিন খোকন কুমিল্লা উত্তর, হাবিব-উন-নবী-খান সোহেল বান্দরবান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া রংপুর, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ নরসিংদী।

২৪শে ফেব্রুয়ারি: স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন মুন্সীগঞ্জ, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বরিশাল উত্তর, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী নড়াইল, আহমেদ আযম খান নাটোর, হারুনুর রশীদ গাইবান্ধা, ফজলুর রহমান রাজশাহী, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল রাঙ্গামাটি, আবদুস সালাম আজাদ মাগুরা।

২৫শে ফেব্রুয়ারি: স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নারায়ণগঞ্জ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গাজীপুর, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু চট্টগ্রাম উত্তর, বরকত উল্লাহ বুলু বাগেরহাট, নিতাই রায় চৌধুরী সাতক্ষীরা, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দিনাজপুর, আমান উল্লাহ আমান মেহেরপুর, জয়নুল আবদিন ফারুক নীলফামারী, মনিরুল হক চৌধুরী খাগড়াছড়ি, আবদুস সালাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এসব কর্মসূচিতে বিভাগীয় সাংগঠনিক সমন্বয়ক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা সহযোগী সমন্বয় করবেন এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটির সকল নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ জেলার কর্মসূচিতে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করবেন ও কর্মসূচি সফল করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।

এ ছাড়া আগামী ২৩শে ফেব্রুয়ারি জাতীয়তাবাদী কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে মানিকগঞ্জ জেলা শিবালয় উপজেলার যমুনার তীরের আরিচাঘাট ‘কৃষক মহাসমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হবে। এতে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মানবজমিনকে বলেন, নিত্যপণ্যের দাম কমানো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার বার্তা দেয়া হবে। আর অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে রাখার কোনো বিষয় নয়। এগুলো জনগণের দাবি।

এদিকে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতন হলেও কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়নি বলে মনে করছে বিএনপি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন প্রয়োজন। কিন্তু এই নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। কারণ নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা একেক সময় একেক রকম বক্তব্য দিচ্ছেন। এজন্য যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন নিয়ে বিএনপি এবং তার মিত্রদের মধ্যে দেখা দিয়েছে সংশয়। তাই জনগণকে সংগঠিত করতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে দলটি। একইসঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলোও পৃথক কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকবে বলে জানা গেছে।

বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স মানবজমিনকে বলেন, নিত্যপণ্যের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা এবং দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার বার্তা এসব কর্মসূচি থেকে দেয়া হবে। আর নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয় তো থাকবেই। তবে বিএনপি’র নির্বাচনী প্রস্তুতি সবসময় থাকে। এরআগেও নির্বাচন ঘোষণার তিন মাসের মধ্যে আমরা ভোটে অংশগ্রহণ করেছিলাম। 
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status