প্রথম পাতা
ভারত, চলুন একসঙ্গে কাজ করি
মো. তৌহিদ হোসেন
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ শাসনের পতনের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক একটি জটিল মোড়ে পৌঁছেছে। আমার মনে হয় ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পূর্বাভাস পেতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের দুই দেশের মধ্যে অভিন্ন স্বার্থ এবং সহযোগিতামূলক সম্ভাবনার কথা ভুলে গেলে চলবে না। অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এবং আমি ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও সামনে এগিয়ে নিতে আগ্রহী। ইতিবাচক দিকগুলোকে মাথায় রেখে ভুল বোঝাবুঝি ও সমস্যাগুলো নিরসনের মাধ্যমে আমরা যথাযথ গুরুত্ব সহকারে কাজ করতে ইচ্ছুক। আমাদের অবস্থান শুরু থেকেই স্পষ্ট: আমরা পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে একটি ভালো কাজের সম্পর্ক চাই। আমরা আশা করি ভারতও বাংলাদেশের এই ইচ্ছায় সম্মতি জানাবে।
ডিসেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির সফর একটি ‘ইতিবাচক উদ্যোগ’ ছিল। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার যে ধারা শুরু হয়েছে, সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে উভয় দেশের মানুষই উপকৃত হবে। ২০ শতকের শেষ দশক থেকে শুরু করে, ভারত উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব অর্জন করেছে। তা বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এর প্রাণবন্ত প্রযুক্তি খাত হোক বা এর অর্থনীতি, যা এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম। বাংলাদেশেরও উল্লেখযোগ্য অর্জনের ক্ষেত্র রয়েছে। আমাদের পোশাক রপ্তানি ক্ষেত্রটি চীনের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের অবদান অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি, সারা বিশ্বের হটস্পটগুলোতে প্রয়োজনীয় পরিষেবা প্রদান করে। নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ইউনূস প্রবর্তিত এখানকার ক্ষুদ্রঋণ মডেলগুলো বিশ্বব্যাপী শিল্পের সৃষ্টি ও বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করেছে। ভারতেও এর ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
বাংলাদেশি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে অনেক শোরগোল তৈরি হয়েছে ভারতে। ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট পূর্ববর্তী শাসনের পতন এবং অন্তর্র্বর্তী সরকার নিয়োগের মধ্যে বিদ্যমান শূন্যতার সময় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল না এবং অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল। এগুলো বিশেষ করে পূর্ববর্তী শাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ব্যক্তিদের প্রভাবিত করেছে। তাদের অধিকাংশই মুসলমান। কিছু হিন্দুও রয়েছেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর অন্তর্র্বর্তী সরকার এসব অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়। এমনকি সারা দেশের জনগণও সাহসিকতার সঙ্গে হিন্দু ধর্মাবলম্বী, তাদের পরিবার ও মন্দিরের সুরক্ষা দিতে এগিয়ে আসে। তা সত্ত্বেও ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে’ ভারতের গণমাধ্যম ও সাইবারস্পেস অতিরঞ্জিত ও প্রায়শই পুরোপুরি ভুয়া তথ্য প্রকাশ করে নেতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে।
বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তী সরকার তাদের ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বাংলাদেশের হিন্দুরাও সমানভাবে দেশের নাগরিক। ভয়েস অফ আমেরিকা পরিচালিত একটি স্বাধীন সমীক্ষা দেখে আমরা খুশি হয়েছিলাম। যেখানে দেখা গেছে, আমাদের জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বিশ্বাস করে যে, অন্তর্র্বর্তী সরকারের অধীনে সংখ্যালঘুদের চিকিৎসার উন্নতি হয়েছে। আমরা দক্ষিণ এশিয়া এবং তার বাইরেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মডেল হতে চাই। কোনো বিধিনিষেধ ছাড়াই যা ঘটছে তা রিপোর্ট করার জন্য, আমরা ভারতীয় সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানাই। ভারতীয় জনগণ তাদের নিরপেক্ষ তদন্ত রিপোর্ট থেকে সঠিক তথ্য জানতে পারবেন।
অন্তর্র্বর্তী সরকার সার্ক জোটকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই সংস্থার কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম নেই। তবে এ বিষয়ে ভারতের কাছ থেকে এখনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। আমরা জানি, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। তবে হাজারো মাইলের যাত্রা ছোট একটি পদক্ষেপের মাধ্যমেই শুরু হয়। প্রথম ধাপ হিসেবে আমরা কি পারি না এ অঞ্চলের সব নেতার পরবর্তী কোনো বৈশ্বিক সম্মেলনে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে একটি ছবি তুলতে, যা আমাদের আঞ্চলিক সহযোগিতার দীর্ঘমেয়াদি অঙ্গীকারের সদিচ্ছা প্রকাশ করবে?’
চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কিছু ইতিবাচক লক্ষণ দেখা গেছে। যেমন- সাম্প্রতিককালে মৎস্যজীবীদের বিনিময় এবং নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির ত্রিপক্ষীয় চুক্তি। এই ইতিবাচক উদ্যোগগুলোর ওপর ভিত্তি করে এমন একটি অংশীদারিত্ব তৈরি করতে হবে, যা দুই দেশের মানুষ, এই অঞ্চল ও বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের জন্য মঙ্গলজনক হবে। এক্ষেত্রে একটি ভালো উদ্যোগ হতে পারে সীমান্তে নিরস্ত্র বেসামরিকদের হত্যার অনুশীলন বন্ধ করা। এই ইতিবাচক এবং বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উভয়দেশের জনগণেরই অনেক কিছু অর্জন করার আছে। এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না।
(লেখক: মো. তৌহিদ হোসেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত তার কলামের অনুবাদ)
পাঠকের মতামত
Adviser Towhid should NOT have written this article as he appears to be submissive and pleading to India in it. As an adviser to the Interim government of a sovereign country, he should act firmly and speak with strong voice. India will definitely find or try to find weaknesses in the soft tone of this article and will try to exploit Bangladesh as it does not understand anything other than its own interests.
কোনও দরকার নেই এত ওদের সাথে এক সঙ্গে কাজ করা। সাপের সাথে সন্ধি হয় না। সে সুযোগ পেলেই ছোবল মারবে!
এদের মুখে এক অন্তরে আরেক । ভারতকে কোন অবস্থাতেই বিশ্বাস করা যাবে না । এরা পাকিস্তানের চেয়েও ভয়াবহ ভাবে বাংলাদেশকে শোষন করেছে । প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে অবৈধ ভাবে । বিমানের এক রাডার থেকে নিকো কয়েক লাখ কোটি টাকা । দেশে আমাদের টাকা নিতো ভারত এই হচ্ছে, মুজিব হাসিনার গোলামীর চুক্তি ।