শেষের পাতা
সহনশীল মুদ্রানীতি গ্রহণের সুপারিশ টাস্কফোর্সের
স্টাফ রিপোর্টার
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার
বাংলাদেশ ব্যাংককে কঠোর মুদ্রানীতির পরিবর্তে সহনশীল মুদ্রানীতি গ্রহণের সুপারিশ করেছে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ টাস্কফোর্স। তাদের মতে, সহনশীল মুদ্রানীতি গ্রহণ করা হলে দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হবে এবং মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো যাবে। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ টাস্কফোর্স গঠন করে সরকার। গত ৩০শে জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তারা এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সরকারের কাছে জমা দেয়া টাস্কফোর্সের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সুদের হার সমন্বয় এবং রিজার্ভের প্রয়োজনীয়তার সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর ফলে নীতিগত সুদের হার ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যার কারণে ঋণের সুদের হার ১৫ শতাংশেরও বেশি হয়ে গেছে। এটি ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া অর্থ সরবরাহে অতিরিক্ত কড়াকড়ি আরোপের ফলে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায়নি। কারণ দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় দুর্বলতা ও দুর্বল মুদ্রানীতি সংক্রমণ প্রক্রিয়ার কারণে সামগ্রিক চাহিদা ব্যবস্থাপনা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে, উচ্চ সুদের হার অভ্যন্তরীণ পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি করে এবং মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
টাস্কফোর্স বলছে, দেশের প্রধান রপ্তানি খাত আরএমজি বর্তমানে ঋণ পরিশোধের সমস্যায় পড়েছে। উচ্চ সুদের কারণে তাদের আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য সমন্বয় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ জন্য টাস্কফোর্স সুপারিশ করেছে, বাংলাদেশ ব্যাংককে সহনশীল মুদ্রানীতি গ্রহণ করতে হবে, যেখানে অর্থ সরবরাহের পরিমিত কড়াকড়ি বজায় রেখে ঋণের সুদের হার ১৫ শতাংশের নিচে রাখা সম্ভব হবে। এতে বিনিয়োগ ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতির চাপ কমবে।
এদিকে সংকটাপন্ন ব্যাংকগুলোর জন্য তারল্য সহায়তা প্রদানের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করার সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স। তারা বলছে, সংকটাপন্ন ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দেয়ার জন্য অর্থ মুদ্রণের মাধ্যমে তারল্য সহায়তা প্রদান করলে মূল্যস্ফীতির চাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা আরও অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে রাজস্ব নীতির সঙ্গে মুদ্রানীতির সমন্বয়ের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেছে টাস্কফোর্স। তারা সতর্ক করে বলেছে, সরকার যদি অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ করে এবং বড় বাজেট ঘাটতি চালায়, তবে জনগণের মধ্যে অতিরিক্ত অর্থ সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। তাই বাজেট ঘাটতি ও সরকারি ঋণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রাজস্ব শৃঙ্খলা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে অপ্রয়োজনীয় সরকারি ব্যয় এড়িয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংককে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি সহজতর করার জন্য এলসি খোলার প্রক্রিয়া সহজ করার নির্দেশনা দিয়েছে টাস্কফোর্স। তারা বলেছে, ভোজ্য তেল, চিনি, এলএনজি ইত্যাদির খুব কমসংখ্যক আমদানিকারক রয়েছে, যা বাজারে একচেটিয়া প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করছে। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে নতুন আমদানিকারকদের বাজারে প্রবেশের সুযোগ তৈরির ওপর জোর দিতে হবে। এ ছাড়া জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি অর্থনীতির সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তাই, কৌশলগত রিজার্ভ বা ভর্তুকির মাধ্যমে জ্বালানির মূল্য অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত, যাতে মূল্যস্ফীতির প্রভাব নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। জ্বালানির মূল্য পুনর্নির্ধারণ সতর্কতার সঙ্গে করা উচিত, যাতে এর মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব নিয়ন্ত্রিত থাকে।
টাস্কফোর্সের সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি কার্যকর বাজার পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। এই ব্যবস্থা সরবরাহ, চাহিদা ও মূল্যের ওঠানামা রিয়েল-টাইমে পর্যবেক্ষণ করবে। সরকারি সংস্থাগুলোর উচিত এই প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধান করা, যেখানে উৎপাদক, খুচরা বিক্রেতা এবং ভোক্তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এটি বাজারে মূল্যের কারসাজি বা অযৌক্তিক মূল্যের প্রবণতা চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে।