খেলা
সভাপতির অনুরাধেও সাড়া মেলেনি
সাবিনাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নির্বাহী সভায়
স্পোর্টস রিপোর্টার
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার
নারী ফুটবলে কোচ-খেলোয়াড় দ্বন্দ্বের সমাধান হচ্ছে না। কোচ পিটার বাটলারের অধীনে অনুশীলন না করার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন ১৮ ফুটবলার। বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের অনুরোধ সত্ত্বেও তারা অনুশীলনে ফেরেননি। নিরুপায় বাফুফে সভাপতি শেষ পর্যন্ত বিষয়টি ছেড়ে দিতে যাচ্ছেন নির্বাহী কমিটির ওপর। চলতি সপ্তাহে বসতে পারে বাফুফের নির্বাহী কমিটির সভা। সেই সভাতে মেয়েদের বিষয়ে আসতে পারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। বাফুফে সভাপতি তাবিথ প্রায় এক মাস পর গত বুধবার দেশে ফিরেছেন। এর পর থেকেই নারী ফুটবলের সংকট উত্তরণে কাজ শুরু করেন। তাবিথ নারী ফুটবলারদের সঙ্গে সংকট সমাধানে আলোচনা করেন। সভাপতি খেলোয়াড়দের অভাব-অভিযোগ সব শুনে খেলোয়াড়দের সম্মান-মর্যাদা নিশ্চিতের পরে, পিটারের অধীনেই গতকাল থেকে অনুশীলন করার নির্দেশনাও দিয়েছিলেন। প্রথমে ছয় জনকে বাইরে রেখে বাকিদের অনুশীলন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বাফুফে বস। ছয় জনের বিষয়ে বাকিরা অনড় থাকলে সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনেন তাবিথ। গতকাল সবাইকে অনুশীলনে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেন। বাফুফে কর্মকর্তাদের মারফতে জানা গেছে এমন তথ্য। শুক্রবার বাংলাদেশ নারী দলের অনুশীলন ছিল না। বাফুফে কর্তাদের অনুমান ছিল সভাপতির আশ্বাস ও নির্দেশনায় শুক্রবার সারাদিন চিন্তা ভাবনা করে ১৮ জন ফুটবলারের মধ্য থেকে কয়েকজন হলেও গতকালের অনুশীলনে যোগ দিবেন। গতকালও দুই বেলা অনুশীলন করিয়েছেন বাটলার। সকালে ব্রাদার্স ইউনিয়নের মাঠে, বিকালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে হয়েছে ক্লোজডোর অনুশীলন। দুই সেশনের কোনটিতে বিদ্রোহী ফুটবলারদের দেখা মেলেনি। সভাপতির অনুরোধও সাবিনাদের অবস্থান টলাতে পারেনি। পিটার বাটলারকে বয়কট করা ১৮ জনের একজনও অনুশীলনে যাননি। সিনিয়র দলে থাকা অবশিষ্ট ১২ জন এবং অনূর্ধ্ব-২০ দলের ফুটবলারদের নিয়ে গতকাল দুইবেলা অনুশীলন করান এই ব্রিটিশ কোচ। অনুশীলনের উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করেই ফেডারেশন একটি সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিল। ১৮ জনই তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় এখন বাফুফের জন্য কাজটা কঠিন হয়ে গেল। আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ৫-৬ জনকে শাস্তি দিলে বাকিরাও ক্যাম্প ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন আগেই। এই ১৮ জনের মধ্যে ১৬ জন অক্টোবর সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য। বাফুফে পিটারের পক্ষে থাকলে এবং ১৮ ফুটবলার বর্জন করলে নারী ফুটবল দল বড় সংকটের মধ্যে পড়বে। এই সংকট নিরসনেই দ্রুতই নিবার্হী কমিটির সভা ডাকছেন বাফুফে সভাপতি। সেখানেই বিশেষ তদন্ত কমিটির সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে চান তাবিথ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাফুফে সদস্য জানিয়েছেন, সভাপতি চেষ্টা করেছেন দুই পক্ষকে ম্যানেজ করে এই সমস্যা সমাধানের। কিন্তু কোচ ও মেয়েরা তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এখানে মেয়েদের যেমন দায় আছে, তেমনি বাফুফের নারী উইংও দায় এড়াতে পারে না। পাশাপাশি তদন্ত চলাকালে কোচের সংবাদ মাধ্যমের সামনে কথা বলাও পছন্দ করেনি সভাপতি। তাইতো নিজে কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে সকলের মতামত নিয়েই কাজ করতে চান তাবিথ। কোচ ফুটবলরের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। যার শুরুটা হয় সর্বশেষ সাফের আগে প্রস্তুতি ক্যাম্পে। বসুন্ধরা কিংসের মাঠে অনুশীলনের সময় সাবিনা খাতুন-মাসুরা পারভীনদের সঙ্গে বাটলারের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছিল, যার শীতলতা আরও বাড়ে কাঠমাণ্ডুতে গিয়ে। ড্র করা পাকিস্তান ম্যাচে সিনিয়র দুই খেলোয়াড় মারিয়া মান্দা ও মাসুরাকে বেঞ্চে রাখেন বাটলার। পরদিনই কোচের ঋতুপর্ণার কোচের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সিনিয়রদের পছন্দ করেন না তিনি। বাটলারও চুপ করে থাকেননি। মেয়েরা ফেসবুক-টিকটকে আসক্ত হওয়ায় মাঠের খেলায় পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি। একইসঙ্গে কয়েকজনের দলীয় শৃঙ্খলা না মানার বিষয়টিও সামনে আনেন। এরপর বাটলার বিস্ফোরক মন্তব্য করে বলেছিলেন, বাইরের হস্তক্ষেপে ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না তিনি। যদিও বাইরের সব বিতর্ক একপাশে রেখে বাটলারের কৌশলে মানিয়ে নিয়ে মেয়েরা শিরোপা ধরে রাখেন। এরপর বাটলারের সঙ্গে পুনরায় চুক্তি নবায়ন করলে বিষয়টি আবার সামনে চলে আসে।
পাঠকের মতামত
"মেয়েরা ফেসবুক-টিকটকে আসক্ত হওয়ায় মাঠের খেলায় পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি"