শেষের পাতা
সরজমিন গাউছিয়া
ভারতীয় পণ্য কম, বেড়েছে দাম
নাজমুল হুদা
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার
রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকার গাউছিয়া মার্কেট। এখানে পোশাক, জুয়েলারি ও প্রসাধনীর দোকানগুলোতে সবসময় ভিড় লেগে থাকে। দেশীয় পণ্যের পাশাপাশি আমদানি করা পণ্য বিক্রি হয় এসব দোকানে। এই পণ্যের বড় একটি অংশ আসে ভারত থেকে। ৫ই আগস্টের পর ভারত থেকে প্রসাধনী পণ্য কম আসায় দোকানগুলোতে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত সেপ্টেম্বর থেকে ভারতীয় পণ্যের সংকট তৈরি হয়েছে। বাজারে কসমেটিকসের কিছু ভারতীয় পণ্য পাওয়া গেলেও জুয়েলারি ও তৈরি পোশাকের সংকট রয়েছে অনেক। সংকটের কারণে এসব পণ্যের দামও বেড়েছে। অনেকে আবার বিকল্প হিসেবে দেশি পণ্য প্রস্তুত করে বিক্রিতে জোর দিচ্ছেন। এ ছাড়া এই সময়ে ব্যবসায়ের পরিমাণও আগের থেকে কমে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
রাজু ইমিটেশন জুয়েলারির বিক্রেতা আজাদ রহমান।
তার দোকানে ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০-১২ হাজার টাকা দামের জুয়েলারি পণ্য রয়েছে। অধিকাংশ পণ্যই ভারত থেকে আমদানি করা বলে জানান তিনি। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে গহনা সেট, ডায়মন্ড কার্ড, চুড়ি, আংটি, লকেট, ব্যাচলেট, নেকলেসসহ বিভিন্ন জিনিস। এসব পণ্য সংকটের পাশাপাশি দাম বাড়ার কথাও জানিয়েছেন আজাদ। বলেন, ভারতীয় পণ্যের চাহিদা আছে। কিন্তু বাজারে এখন সংকট অনেক। এলসি হচ্ছে না। লাগেজে কিছু পণ্য আসছে। দামও বেড়েছে এজন্য। যেসব জুয়েলারির দাম ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে সেগুলোতে ১০০-২০০ টাকা দাম বেড়েছে, আর ১০-১২ হাজার টাকার জুয়েলারিতে ১-২ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণে ক্রেতাও কমে গেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ক্রেতাও কমে গেছে। আগে যেখানে একটা জুয়েলারি পণ্যে ৪০০-৫০০ টাকা লাভ করতে পারতাম এখন সেখানে ১০০-২০০ টাকার বেশি লাভ করা যাচ্ছে না। তাই ব্যবসাও খারাপ যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে ভারতের পণ্য সংকটের কথা জানিয়েছেন আবরণী কসমেটিকসের স্বত্বাধিকার ইলিয়াস হোসেন। সেপ্টেম্বর থেকে সংকট তৈরি হয়েছে। বাজারে চাহিদার তুলনায় জুয়েলারি আর কসমেটিকস পণ্যের সরবরাহ অর্ধেকে নেমে গেছে উল্লেখ করে ইলিয়াস হোসেন বলেন, সংকটের কারণে দামও বেড়ে গেছে। যেসব জুয়েলারি পণ্য আগে ১৫০০ টাকায় বিক্রি করেছি এখন তা ১৮০০ টাকায় বিক্রি করি। কসমেটিকস পণ্যেও ৫০-৬০ টাকা করে বেড়েছে। দাম বাড়ার জন্য ক্রেতারা নিতে চায় না। মিম ওয়ার্ল্ড পার্লার টাচ-এর বিক্রেতা মো. ইউসুফ জানিয়েছেন, ভারতীয় পণ্যের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম, সাবান, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, ফেশওয়াস, বিভিন্ন পাউডার, তেল, আইলাইনার, লিপস্টিকসহ সাজসজ্জার পণ্যগুলো বেশি বিক্রি হয়। বর্তমানে বাজারে যে চাহিদা রয়েছে সে অনুযায়ী এখন পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। ইউসুফ বলেন, লাগেজে আনা পণ্য ৩ পিস বা ৬ পিস করে পাওয়া যায়। সেগুলোর দামও বেশি এখন। বিভিন্ন ক্রিমে ৫০-১০০ টাকা করে দাম বেড়েছে। ১৫০ টাকায় যে আইলাইনার বিক্রি করতাম এখন তা ২৩০ টাকা। সাবানেও ২০-৩০ টাকা দাম বেড়েছে। শ্যাম্পুতেও ৭০-৮০ টাকা করে বেড়েছে দাম। বাকি পণ্যগুলোতেও দাম বেড়েছে। পর্যাপ্ত প্রসাধনী পাওয়াও যাচ্ছে না।
কসমেটিকস আর জুয়েলারি ছাড়াও ভারতীয় তৈরি পোশাকেরও সংকট রয়েছে। গাউছিয়া মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের পর থেকে সংকট শুরু হয়। এখন বাজারে ভারতীয় পোশাক বা ভারতীয় ফেব্রিকে তৈরি পোশাক একেবারে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে দেশি পণ্যগুলোও ভারতীয় বলে বিক্রি করছেন। মিস ইন্ডিয়ার ম্যানেজার রাসেল বলেন, আগে আসা ভারতের অল্পকিছু পণ্য এখনো আছে। তবে নতুন করে পণ্য না আসায় সংকট আছে। আমরাও এখন নিজেদের প্রোডাকশন বাড়িয়ে দিয়েছি। দেশি পণ্যগুলোর কোয়ালিটিও ভালো এখন। আরেকটি দোকানের বিক্রেতা বলেন, ভারত আর পাকিস্তানি পণ্যের চাহিদা আছে। রোজায় এই চাহিদা আরও বাড়বে। কিন্তু ভারতের পোশাকগুলো বাজারে কম থাকায় দেশি পণ্যগুলোই ভারতের বলে বিক্রি করতে হয়। ভারতের তৈরি পোশাক এনে বিক্রি করে ফ্যাশন প্যালেস।
দোকানটির বিক্রেতা সৈকত সরদার জানিয়েছেন, ভারতীয় পোশাকগুলো মৌসুম কেন্দ্রিক অনেক চাহিদা থাকে। এখন সেই মৌসুম চলছে। ঈদে চাহিদা আরও বাড়বে। কিন্তু এখন পণ্যগুলো আমদানি করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, এখন ভারতের ভিসাও পাওয়া যাচ্ছে না। ডলারের দাম বাড়ছে, ট্যাক্স বাড়ছে, বহন খরচও বাড়ছে। আবার পণ্যও পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য আমাদের বিক্রি কমে গেছে। গত ৫-৬ মাস ধরে বিক্রি খারাপ। ফ্যাশন ইন্ডিয়ার স্বত্বাধিকারী ইসমাইল হোসেন বলেন, ভারতের ফেব্রিক্স কমে গেছে। সুতি দিয়ে সেটার চাহিদা মেটানো হচ্ছে। কিন্তু ভারতের ফেব্রিক্সগুলো ভালো হয়। রং ওঠে না। সেগুলোর চাহিদাও বেশি। কিন্তু এখন তো তা পাওয়া যাচ্ছে না। গত ৪-৫ মাস ধরে দামও বাড়ছে।
পাঠকের মতামত
Boycott indian products and goods Support home grown products.create more jobs in Bangladesh for Bangladeshis.
বাংলাদেশেও ভাল মানের প্রসাধনী রয়েছে। বাংলাদেশী কাপড়ের মান ভারত থেকে অনেক ভাল। দেশজ সামগ্রী ব্যাবহার করে দেশের অর্থনীতি চাংগা করি সবাই।
মহিলা জাত দের এসব আটা ময়দা ব্যবহার কমাতে বাধ্য করা অত্যন্ত জরুরি,আর গাউছিয়ার মত এসব মার্কেট ভেজাল আর নকল পন্য সয়লাব,সুতরাং এদের ব্যবসা কমে গেলেই ভালো ।
ভারত নির্ভরতা কমান। দেশি পন্য বাড়ান।
ভারত বয়কট - দেশী পণ্য কিনে হও ধন্য
অপ্রয়োজনীয় পন্য ভারত থেকে আমদানি করার কোন মানেই নাই,ভারতীয়দের পন্য নিরুৎসাহিত করা হোক।