ঢাকা, ১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

কলকাতায় ‘মিনি বাংলাদেশে’ হাহাকার

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবারmzamin

মধ্য কলকাতার মারকুইজ স্ট্রিট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট, কিড স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড, নিউমার্কেট ও আশপাশের এক বর্গকিলোমিটার অঞ্চলের পরিচিতি ‘মিনি বাংলাদেশ’ হিসেবে। প্রায় সারা বছরেই বাংলাদেশিদের আনাগোনায় সরগরম থাকতো গোটা এলাকা। বাংলাদেশি খাবার থেকে শুরু করে নানা ধরনের ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশিদের জন্যই গড়ে উঠেছিল। এই অঞ্চলের হোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে এক সময় ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই অবস্থা ছিল। শীতকালে ও ঈদের সময় বাংলাদেশিদের ভিড়ে হাঁটাচলাও কঠিন হয়ে পড়তো। বিভিন্ন দোকান ও মলগুলোতে উপচে পড়তো ভিড়।

কোথায় সেই ভিড়? গোটা এলাকা থেকে বাংলাদেশিরা যেন উবে গিয়েছেন। চারদিক এখন সুনশান। স্থানীয় মানুষ ও মেডিকেল ভিসায় আসা নামমাত্র কিছু বাংলাদেশির আনাগোনা ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবের ধাক্কায় কলকাতার মিনি বাংলাদেশে এখন শুধুই হাহাকার। চারদিকে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে- বলছিলেন এক ব্যবসায়ী।
জুলাই থেকেই বাংলাদেশিদের আসা কম ছিল। তবে গত ছয় মাসে তা কমতে কমতে এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, হোটেল মালিকরা সহ সব ব্যবসায়ীরাই মাছি তাড়াচ্ছেন। অনেক হোটেল বন্ধ হয়ে গিয়েছে, বন্ধ হয়েছে অনেক রেস্তরাঁ, ট্র্যাভেল এজেন্সির অফিস ও মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রও।       

বিশিষ্ট হোটেল ব্যবসায়ী ও মারকুইজ স্ট্রিট-ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র সহ- সম্পাদক মনতোষ সরকার এই প্রতিবেদককে জানান, এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য সবই বাংলাদেশিদের ওপর নির্ভর করে ব্যাপক আকার নিয়েছিল। গত ছয়-সাত মাসে বাংলাদেশিদের আসা কমতে কমতে প্রায় শূন্যে নেমে আসায় এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা  সবাই অর্থনৈতিকভাবে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত। হোটেলগুলোতে আবাসিক বোর্ডার নেই বললেই চলে। বিশাল খরচের বোঝা সকলের কাঁধে। একই কথা জানান, সম্রাট হোটেলের ম্যানেজার প্রেম ঘোষ। তিনি বলেন, একসময় আমরা বাংলাদেশি আবাসিকদের জায়গা দিতে পারতাম না। এখন দু’চার জন ছাড়া কোনো আবাসিক  বোর্ডার নেই।

এক রেঁস্তরার মালিক জানালেন, আর বলবেন না। রেস্তরাঁ খুলে রাখাই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। আগে যেখানে বাংলাদেশি পর্যটকদের বসার জায়গার জন্য অপেক্ষা করতে হতো এখন সেখানে চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া কোনো কাজ নেই। তিনিই জানালেন, ফুটপাথের খাবারের দোকানগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয়। ক্রেতার অভাবে অনেকে দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন। নিউমার্কেটের সামনে দেখা সিরাজগঞ্জের  মোহাম্মদ সিরাজের সঙ্গে। পিতাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। তিনি কথায় কথায় বলেন, চারদিক এমন সুনশান চেহারা আগে কখনো দেখিনি। ফুটপাথের সস্তার খাবারের দোকানগুলোর সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। কাপড়ের দোকান, পোশাকের দোকানগুলোতে তেমন কোনো ক্রেতা নেই। তিনি জানান, যে হোটেলে তিনি রয়েছেন সেখানে বাংলাদেশি পর্যটক মাত্র দু’জন। তার কথায়, এমন দৃশ্য কোনোদিন দেখবো বলে ভাবিনি।

নিউমার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলছিলেন, বাংলাদেশিদের ওপরই আমরা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলাম। ফলে তাদের অনুপস্থিতিতে সব কাপড়ের দোকানে কর্মী কমিয়ে দিতে হয়েছে। অনেক আর্থিক ঋণের বোঝা চেপে রয়েছে। কী হবে তা নিয়ে তিনি ও তার মতো সব ব্যবসায়ীরাই চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ঈদ আসছে। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি যা চলছে তাতে কোনো আশা দেখতে পাচ্ছি না। ফলে ঈদের জন্য আগে থেকে যে সব অর্ডার দিয়ে রেখেছিলাম সেগুলো বাতিল করতে হচ্ছে।
পার্ক স্ট্রিটের বিলাসবহুল শাড়ি ও শেরওয়ানির দোকানগুলোরও এখন করুণ অবস্থা। স্থানীয়রা ছাড়া আর কোনো পর্যটকের দেখা মিলছে না। বাংলাদেশিরাই ছিলেন এসব দোকানের বড় বড় ক্রেতা- জানান এক দোকানের কর্মচারী। 

মিনি বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চলের সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট পরিবহন ব্যবসায়ী শ্যামলী যাত্রী পরিবহনের মালিক অবনী কুমার ঘোষ বলেন, এক কথায় ভয়াবহ। পরিস্থিতি যেভাবে চলছে তাতে খুব শিগগিরই কোনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছি না। তিনি বলেন, সৌহার্দ্যের বন্ধন হিসেবে দুই বাংলার মধ্যে যে যাতায়াতের সেতুবন্ধন গড়ে উঠেছিল তা এক প্রকার ভেঙে পড়েছে। দুই বাংলার মধ্যে যাতায়াতের জন্য অসংখ্য পরিবহনের বাস চলতো সেগুলো সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

তিনি জানান, এখন তাদের সৌহার্দ্য বাস প্রতিদিনের বদলে চলে সপ্তাহে একটি বা দু’টি। সেগুলোতেও আট/দশ জনের বেশি যাত্রী থাকে না। ফলে ঘোর সংকটে রয়েছেন তিনিও। আর বাংলাদেশিদের ওপর নির্ভর করে যে অসংখ্য পরিবহন সংস্থা গড়ে উঠেছিল সেগুলোর অনেকেই পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হয়েছে।         

বণিকসভার এক কর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে পর্যটক আসা ভিসা ও অন্যান্য কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। হাসপাতালের ব্যবসা মার খাচ্ছে। নিউমার্কেট থেকে ই এম বাইপাসে তৈরি বহু হোটেল বাংলাদেশি রোগী ও তাদের পরিবারের উপরে নির্ভরশীল। সেখানে কলকাতা ও রাজ্যের ছেলেমেয়েরা কাজ করেন। বাংলাদেশিরা না আসায়  হোটেলের ব্যবসাও মার খেয়েছে। ফলে অনেকেই রুটি-রুজি হারিয়েছেন। বিভিন্ন দোকানের কর্মচারীদেরও ছাঁটাই করা হচ্ছে।

শুধু নিউমার্কেট অঞ্চল নয়, গড়িয়াহাট, হাতিবাগানের মতো এলাকাগুলোর ব্যবসায়ীরাও বাংলাদেশিদের ওপর নির্ভর করতেন। তারা এখন হা-হুতাশ করছেন। একই চিত্র বড় বাজারের বড় বড় শাড়ির আড়তগুলোতেও। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণ শাড়ি ও পোশাক কিনে বাংলাদেশে পাঠাতেন- সে সব এখন এক প্রকার বন্ধ।

 

পাঠকের মতামত

এতদিন ভারতবাসিরা মনে করত ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভাল না থাকলে শুধু বাংলাদেশেরই ক্ষতি হবে। কিন্তু বাস্তবে দু দেশেরই ক্ষতি। এর মধ্যে বাংলাদেশ যদি অন্য কোন দেশের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে তাহলে ভারত স্থায়ীভাবে অনেক ক্ষতির মুখে পড়বে।

কায়সার
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৫:৪৪ পূর্বাহ্ন

বেশি ভাব নিলে যা হয় আর কি।

Md.Sanoar Hossain.
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৭:০৯ অপরাহ্ন

Very good news

Idris
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ২:৫৫ অপরাহ্ন

আমাদের জন্য খুবই দুঃখের কারণ চিকিৎসা ও কাপড়ের জন্য আমরা বেঁচে আছি।

fokrul Islam
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১১:৫০ পূর্বাহ্ন

আল-হামদুলিল্লাহ্‌

মঈনুল
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১০:০৫ পূর্বাহ্ন

পরের জন্য খাদ কাটলে সেই খাদে নিজেকেই পড়তে হয়

Foyshal
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৯:৩২ পূর্বাহ্ন

Good news for us

Md. Sanwar Hossain
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৬:৫০ পূর্বাহ্ন

আমরা নাকি উনাদের ছাড়া চলতে খেতে পারব না, আর এখন কে মরছে ভাতে পানিতে। বাংলাদেশ জেগে উঠেছে দাদারা, আমাদের নিয়ে মস্করা তামাসার দিন শেষ।

Ashraf
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১২:১৯ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status