বাংলারজমিন
এবার তিনপর্বে বিশ্ব ইজতেমা
এম এ হায়দার সরকার, টঙ্গী থেকে
২৮ জানুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবারটঙ্গী তুরাগ নদীর তীরে আগামী ৩১শে জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে তাবলীগ জামাতের বার্ষিক সমাবেশ বিশ্বি ইজতেমা। সাদপন্থী ও জোবায়ের পন্থীদের বিবদমান দ্বন্দ্বের কারণে এবার বিশ্ব ইজতেমা তিনপর্বে হবে।
দুইপর্বে বিশ্ব ইজতেমা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জুবায়েরপন্থীরা। তাদের প্রথমপর্ব ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২রা ফেব্রুয়ারি ও দ্বিতীয় পর্ব ৩রা ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ৫ই ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে জুবায়ের পন্থীদের দুই পর্বের ইজতেমা শেষ হবে। সাতপন্থীদের এক পর্বের ইজতেমা ১৪ই ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ১৬ই ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ২০২৫ সালের তিনি পর্বের বিশ্ব ইজতেমা সমাপ্তি ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করছেন প্রশাসন।
বিশ্ব ইজতেমা আগত মসজিদের জন্য মাঠের প্রস্তুতি কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। প্রথম পর্বের জুমারপন্থী মুরুব্বী প্রফেসর আব্দুস সালাম মানবজমিনকে বলেন, আমাদের দুই পর্বের ইজতেমা প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে যারা মানুষ হত্যা করে তাদের এসব লোক দেখানো। আমরা দুই পর্বের ইজতেমা করব। তৃতীয় পর্ব হবে কিনা আমরা জানিনা। তবে না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যারা মানুষ খুন করে তাদের ইজতেমা করার যৌক্তিকতা নাই।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন জানান, ময়দানে আগত মুসল্লিদের আগমন ও স্থান সংকলন করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এবারের বিশ্ব ইজতেমাকে সামনে রেখে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরবর্তী সুবিশাল এলাকায় প্রায় ১৬০ একর জমির উপর তাবলীগ জামায়াতের সদস্যদের থাকার জন্য বিশাল চটের প্যান্ডেল তৈরি করা হচ্ছে। মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে টিনের চালা দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে বিদেশি মেহমানদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা। আন্তর্জাতিক নিবাস বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিফোন সংযোগসহ আধুনিক বিভিন্ন সুবিধাসমূহ সহ সর্বাত্মক ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইজতেমার মাঠে আগত মুসল্লীদের সুবিধার্থে খাবার পানি, অজুখানা, পুরানো টিউবল, বাথরুম ও কাঁচা পাকা টয়লেট সংস্কার করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে যাবতীয় সব কিছু সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য ইটের সলিং করার রাস্তা তৈরি ও পুরানো ভাঙাচোরা রাস্তা সংস্কার করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ লাইন, গ্যাস লাইন,পানির পাইপলাইন, পানির ট্যাংকি বসানোর সহ বাঁশের খুঁটি বসানো ও প্যান্ডেল সাজগোজের কাজ করা হচ্ছে। মুসল্লিদের যাতায়াতের কাজ যাতে কোনরকম ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য তুরাগ নদীতে এবার সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং করে সদস্যরা ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছেন।
এদিকে আগামী ৩০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে জামাতবদ্ধ মুসল্লীর ইজতেমা মাঠে আসতে শুরু করবেন। এবার ইজতেমায় বিশ্বের শতাধিক দেশের প্রায় ১০-২০ হাজার বিদেশি মেহমান আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করছেন আয়োজক কমিটি। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে নেত্রকোনা থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে আসা নুরুন্নবী (৬৫) জানান, প্রতিবছর ইজতেমায়ার সময় হলে মনের টানে কাজ করতে ময়দানে চলে আসি। টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠে কাজ করতে এসে নিজেকে ধন্য মনে করছি। স্থানীয় আরিচপুর এলাকার সজীব (৩০) জানায় ইজতেমা ময়দানে কাজ করতে আমার ভালো লাগে। আমি আমার বাবার সাথে আগে ময়দানে প্যান্ডেলের কাজ করতে আসতাম এখন আমি নিজেই আরো কিছু স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে মাঠে কাজ করতে এসেছি। ইজতেমা ময়দানে আগত মসজিদের জন্য রান্নাবান্নার জন্য প্রস্তুত করছেন সজীব। মাইক লাইন সংযোগকারী ময়মনসিংহ জেলার আবুবক্কর বলেন, পুরো ইজতেমা ময়দানে মাইক লাইন টানার কাজ প্রায় শেষ পথে। আশা করি আগামী দিনের মধ্যেই মাইক টানার কাজ শেষ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে প্রায় ৪৫০ মাইক টানানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এ ব্যাপারে ইজতেমা আয়োজক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজ জানান, ইজতেমা ময়দানের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার নাজমুল করিম খান জানান, ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীও গাজীপুর জুড়ে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন ভেসে ইজতেমা স্থালে অবস্থান নিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। ইজতেমার শুরুর আগের দিন থেকে পুলিশ, র্যাব, মোতায়েন থাকবে। এজন্য ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা থেকে পুলিশ টঙ্গীতে আনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েক হাজার পুলিশ টঙ্গীতে আনা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ ও র্যাবের
জন্য পর্যবেক্ষণ টাওয়ার তৈরি করা হয়েছে। স্থাপিত করা হয়েছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও র্যাবের কন্ট্রোল রুম। হেলিকপ্টার আকাশপথে টহল থাকবে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের মাধ্যমে মসজিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য তুরাগ নদীর উপর পল্টন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। মুসলিমদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে সরকারি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা: বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে স্টেশন রোডসহ ময়দানের চারপাশে প্রায় অর্ধশত বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা চিকিৎসা সেবা প্রদান করবেন বলে জানান গেছে। টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি ও হাতে নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে টঙ্গী সরকারী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আফজাল হোসেন বলেন, টঙ্গী ২৫০ শয্যা সরকারি হাসপাতালকে ইজতেমার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সেবা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও একটি হৃদরোগ ইউনিট, একটি বক্ষব্যাধি ইউনিট, এজমা ইউনিট, ট্রমা ইউনিট, অর্থপেডিক ইউনিট ও বাণ ইউনিট ১৫ টি স্যানিটেশন টিম এবং ২৫ টি অ্যাম্বুলেন্স এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।