ঢাকা, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

গোপন নথি ফাঁস

বিদেশে মার্কিন সহায়তা বন্ধ

মানবজমিন ডেস্ক
২৬ জানুয়ারি ২০২৫, রবিবার

বিদ্যমান সবরকম বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা এবং নতুন সহায়তা (এইড) স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে কর্মকর্তা এবং মার্কিন দূতাবাসগুলোতে অভ্যন্তরীণ একটি মেমো পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তা ফাঁস হয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সোমবার ৯০ দিনের জন্য বৈদেশিক  উন্নয়ন সহায়তা স্থগিত করেন। ফাঁস হওয়া নোটিশে তার বৈদেশিক নীতির সঙ্গে দক্ষতা ও সামঞ্জস্যের পর্যালোচনা মুলতবি রাখার কথা বলেছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। সরকারি তথ্যমতে, ২০২৩ সালে বিশ্বে আন্তর্জাতিক সহায়তা বিষয়ক সবচেয়ে বড় ডোনার ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওই বছরে তারা ৬৮০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে এ খাতে। কিন্তু নতুন নোটিশ অনুযায়ী উন্নয়ন সহায়তা থেকে সামরিক সহায়তা পর্যন্ত সবকিছুতেই প্রযোজ্য হবে। তবে ইসরাইল এবং মিশরের জন্য শুধু জরুরি খাদ্য ও সামরিক সহায়তা এই নির্দেশের বাইরে থাকবে। মেমোতে বলা হয়েছে, নতুন কোনো সহায়তা বা বিদ্যমান সহায়তা পর্যালোচনা এবং অনুমোদন না দেয়া পর্যন্ত কোনো নতুন সহায়তা বা বিদ্যমান সহায়তা তহবিল স্থগিত থাকবে। এতে আরও বলা হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যালোচনা ও অনুমোদন না দেয়া পর্যন্ত বিদ্যমান সহায়তার অধীনে ওয়ার্ক-অর্ডার অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে মার্কিন কর্মকর্তাদের। বিবিসি আরও লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে এবং নতুন সাহায্য অনুমোদন বন্ধ  রেখেছে। 

এই স্থগিতাদেশ জরুরি খাদ্য সহায়তা এবং ইসরাইল ও মিশরের জন্য সামরিক তহবিলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। নথি অনুযায়ী, কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, ‘পর্যালোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো নতুন তহবিল অনুমোদিত হবে না বা বিদ্যমান  কোনো চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাবে না’। একই সঙ্গে চলমান প্রকল্পের কাজও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে, যতক্ষণ না পর্যালোচনা  শেষ হয়। কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, পর্যালোচনার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিদ্ধান্ত না দেয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট চুক্তির শর্তানুযায়ী কর্মকর্তারা যেন অনতিবিলম্বে ‘কাজ বন্ধের নির্দেশনা জারি করেন’। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের নথি অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন পররাষ্ট্রনীতি নিশ্চিত করতে সব বিদেশি সাহায্যের বিস্তারিত পর্যালোচনা আগামী ৮৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, এই পর্যালোচনা ৮৫ দিনের মধ্যে শেষ হবে এবং তা নিশ্চিত করবে যে সব সাহায্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করছে। তিনি আরও বলেন, বিদেশে আমাদের ব্যয় শুধু তখনই হওয়া উচিত, যদি তা আমেরিকাকে নিরাপদ, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক সিনিয়র কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই নোটিশ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে বিদেশি সাহায্য কর্মসূচির ওপর অনেক বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

 ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত অস্ত্র সরবরাহে কংগ্রেসের সম্পর্ক দেখভাল করতেন জশ পল। তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ করে দেয়ার কথাটি একবার ভাবুন। এটি অনেক বড় একটি বিষয়। মধ্যপ্রাচ্যে ইউএসএইড মিশনের সাবেক পরিচালক ডেভ হার্ডেন বলেছেন, এই পদক্ষেপ ‘অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ’, যা বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে মানবিক এবং উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচিগুলোকে স্থগিত করে দিতে পারে। তিনি জানান, বিদেশি সহায়তা বন্ধের এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পানীয় জল, স্যানিটেশন এবং আশ্রয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পে পড়তে পারে। এটি শুধু সাহায্য স্থগিতই নয়, বরং ইতিমধ্যে দেশটির অর্থায়নে চলমান চুক্তিগুলোর কাজ বন্ধেরও নির্দেশ প্রদান করে। এএফপি বলছে, এই অর্থায়ন স্থগিতের প্রভাব ইউক্রেনেও পড়তে পারে। সেখানে আগে  থেকে প্রচুর অস্ত্র সহযোগিতা দেয়া হয়েছিল। সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট  জো বাইডেনের প্রশাসনের সময়ে ইউক্রেন অস্ত্র সহায়তায় বড় অংকের সহযোগিতা পেয়েছিল। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও স্বাক্ষরিত নথিতে সহায়তা স্থগিতের পক্ষে যুক্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমান বিদেশি সাহায্যের প্রতিশ্রুতি’ কার্যকর কিনা, পুনরাবৃত্তিমূলক কি না এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা মূল্যায়ন করা অসম্ভব। তবে জরুরি খাদ্য সহায়তার জন্য তিনি ছাড়পত্র দিয়েছেন। অর্থাৎ গাজা ও অন্যান্য যে সব জায়গায় খাদ্য সংকট চলছে সেখানে জরুরি খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপটি এমন একটি সময়ে এসেছে, যখন গাজায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে অস্ত্রবিরতির পর মানবিক সাহায্য বৃদ্ধি পেয়েছে ও সুদানের মতো বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট চলছে।

মার্কিন সরকারের নীতিতে নিজের প্রভাব রাখতে প্রেসিডেন্টদের মূল হাতিয়ার এক্সিকিউটিভ অর্ডার বা নির্বাহী আদেশ। ক্ষমতা নেয়ার পর সেই হাতিয়ার ব্যবহারে এক মুহূর্তও দেরি করেননি ডনাল্ড ট্রাম্প। শুরুতেই একশ’র বেশি নির্বাহী আদেশে সই করেন ট্রাম্প। দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে  ফেরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নির্বাহী আদেশের ঝড় তুলবেন বলে যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তার আক্ষরিক বাস্তবায়ন করে  দেখিয়েছেন দেশটির ৪৭তম  প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এককথায় এক্সিকিউটিভ অর্ডার হলো- যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে  কেন্দ্রীয় সরকারকে দেয়া একটি লিখিত আদেশ, যার জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত জারি করতে পারেন প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ বলে  প্রেসিডেন্ট এই আদেশ জারি করার ক্ষমতা পান।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status