দেশ বিদেশ
ইউজার আইডি লক্ড বিপাকে কমিউনিটি ব্যাংক
সাজ্জাদ হোসেন
২৬ জানুয়ারি ২০২৫, রবিবার
বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি’র ইউজার আইডি লক্ড করে দিয়েছে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ফার্মসমূহের পরিদপ্তর। এতে সব ধরনের লেনদেন করতে না পারায় বিপাকে পড়েছে দেশের চতুর্থ প্রজন্মের বাণিজ্যিক ব্যাংকটি।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) ও তার পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত। বেনজীর আহমেদ ছিলেন কমিউনিটি ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও শেয়ারহোল্ডার। এ কারণে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ফার্মসমূহের পরিদপ্তর ব্যাংকটির ইউজার আইডি লকড করে দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে বেনজীরের সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও কয়েক বছর আগের তথ্যের ভিত্তিতে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ফার্মসমূহের পরিদপ্তর কমিউনিটি ব্যাংকের ইউজার আইডি লকড করে দিয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত রিটার্ন দাখিল না করতে পারা, কোম্পানির নিয়মিত তথ্য আপডেট না করতে পারাসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
সূত্রমতে, বেনজীর আহমেদ ২০২২ সালের ২রা নভেম্বর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তার ধারণকৃত শেয়ার ২০২৩ সালে ৪ঠা জানুয়ারি মো. কামরুল আহসান বিপিএম-এর নামে হস্তান্তর হয়, যা যৌথ মূলধনী কোম্পানি ফার্মসমূহের পরিদপ্তর কর্তৃক যথাযথভাবে অনুমোদিত হয়েছে। ফলে কমিউনিটি ব্যাংকের কোনো পরিচালক বা চেয়ারম্যান অথবা শেয়ারহোল্ডার এবং ব্যাংকের বর্তমান কার্যক্রমের সঙ্গে তার কোনোভাবেই সম্পৃক্ততা হওয়ার সুযোগ নেই। ফলে কমিউনিটি ব্যাংকের কোনো পরিচালক/চেয়ারম্যান এবং ব্যাংকের বর্তমান কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও শুধুমাত্র আগের তথ্যের ভিত্তিতে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ফার্মসমূহের পরিদপ্তর ব্যাংকটির ইউজার আইডি লকড করে দিয়েছে। এমতাবস্থায় কমিউনিটি ব্যাংকটির ইউজার আইডি আনলক করতে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে আবেদন করেও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে নানা বিড়ম্বনায় পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর দেশের চতুর্থ প্রজন্মের বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে পথ চলা শুরু করে কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ। বর্তমানে সারা বাংলাদেশে ব্যাংকের ১৮টি শাখায় প্রায় ২.২ লাখ গ্রাহক ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছে। ব্যাংকটি তার যাত্রালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক এবং রেজিস্ট্রার অব জয়েন স্টক কোম্পানির সকল নিয়মকানুন মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ২০১৮ থেকে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে প্রতি বছর নিয়মিত রিটার্ন, শেয়ার ট্রান্সফার ও ট্রানজেকশনের সকল ডকুমেন্ট আপডেট করে আসছে।
মামলার সূত্র মতে, মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে গত বছরের ২৩ ও ২৬শে মে দুদক বেনজীর আহমেদ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামীয় জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অপরাধ সংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করণের আবেদন করে। এতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বেনজীর আহমেদ, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে, স্ত্রী-জীশান মির্জা ও মেয়েদের নামে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এতে আরও বলা হয়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের স্থাবর/অস্থাবর সম্পদসমূহ অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। এছাড়া অভিযুক্তরা বাংলাদেশে তাদের নামে-বেনামে অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিক্রয়/হস্তান্তর করে বিদেশে পাচারের চেষ্টা করছেন। অনুসন্ধান/মামলা নিষ্পত্তির আগে বর্ণিত সম্পত্তিসমূহ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের বড় ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া বর্ণিত স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করণ এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা না হলে তা হস্তান্তর হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে, যা পরে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে বেনজীর ও তার স্ত্রী সন্তানদের নামের সবল স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করে রায় দেয় আদালত।
ফলে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ফার্মসমূহের পরিদপ্তর বেনজীর ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে শেয়ারটি জব্দ করার পাশাপাশি কমিউনিটি ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবহারকারী আইডিও জব্দ করে দেয়।
যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি অ্যান্ড এফ) কর্তৃক ব্যাংকের ইউজার আইডি ব্লক করে রাখার ফলে
যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে: যখন কোনো কোম্পানি ব্যাংকে করপোরেট অ্যাকাউন্ট খুলতে চায়, তখন ব্যাংক কোম্পানিটির আইনগত অবস্থা যাচাই করে থাকে আরজেএসসি’র মাধ্যমে। কিন্তু ব্যাংকের ইউজার আইডি ব্লক থাকলে আরজেএসসি থেকে ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট অব ইনকরপোরেশন, সার্টিফিকেট অব মেমোরেন্ডম, পরিচালকদের তালিকা, ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন এবং ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন-এগুলো সঠিক আছে কিনা, তা যাচাই করা সম্ভব হয় না। যার প্রভাব পরে ব্যাংকটির করপোরেট গ্রহকদের উপড়। ব্যাংকের একটি নিয়মিত কার্যক্রম হচ্ছে ঋণ দেয়া এবং তা আদায় করা। এক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ দেয়ার আগে আরজেএসসি মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কোম্পাানর মালিকানা কাঠামো, শেয়ারহোল্ডিং প্যাটার্ন, অনুমোদিত এবং পরিশোধিত মূলধন ইত্যাদি তথ্য যাচাই করে। কিন্তু ব্যাংকটির ইউজার আইডি ব্লক থাকার কারণে তথ্যগুলো যাচাই করা সম্ভব হয় না, যার ফলে ব্যাংকটি মন্দ ঋণের ফাঁদে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
আইনজীবীর বক্তব্য: এ বিষয়ে ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী ও কোম্পানিটির আইনি সহায়তাকারী এডভোকেট রাজন চন্দ্র ঘোষের দাবি, যৌথ মূলধনী কোম্পানি ফার্মসমূহের পরিদপ্তর দ্বারা কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-এর ইউজার আইডি ব্লক করায় প্রকিষ্ঠানটি নিয়মিত ব্যাংকিং ব্যবসা যেমন ঋণচার্জ, ঋণ অনুমোদন, রিটার্ন জমা এবং ব্যাংকের অন্যান্য প্রয়োজনীয় কার্যসম্পাদন করতে পারছে না।
ঘোষ আরও বলেন, কোম্পানি আইন অনুযায়ী বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) হওয়ার ২১ দিনের মধ্যে শেয়ার মূলধনের বার্ষিক সারাংশ এবং শেয়ারহোল্ডারদের, পরিচালকদের তালিকা যৌথ মূলধনী কোম্পানি ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও, ব্যাংকটির ইউজার আইডি ব্লক থাকায় তা করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। এতে কোম্পানিটি তাদের প্রয়োজনীয় তথ্যের আপডেট করতে না পারা সহ প্রতিনিয়ত অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা আইনিভাবে মোকাবিলার পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা ব্যক্ত করেন। ব্যাংকটির স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফেরাতে তিনি এর দ্রুত এর সমাধান চান।