ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

অনলাইন

সহযোগীদের খবর

ইসলামি দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা বিএনপির

অনলাইন ডেস্ক

(৫ মাস আগে) ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৯:৪০ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:০১ পূর্বাহ্ন

mzamin

প্রথম আলো

দৈনিক প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম ‘ইসলামি দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা বিএনপির’। খবরে বলা হয়, ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে ধর্মভিত্তিক ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। ইসলামি দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টার অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার খেলাফত মজলিসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে দলটি। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান–পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে আরও দলের সঙ্গেও বৈঠক হতে পারে।

একসময় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক ছিল খেলাফত মজলিস। ২০২১ সালের অক্টোবরে একটি ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ তারা জোট ছেড়ে যায়। তিন বছর পর গতকাল দল দুটির শীর্ষ পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হলো। এই বৈঠকে বিএনপির পক্ষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বে দলটির নয়জন নেতা বৈঠকে অংশ নেন।

বিএনপি তার পুরোনো জোটসঙ্গী খেলাফত মজলিসের সঙ্গে এমন সময় বৈঠক করল, যখন এক দিন আগে গত মঙ্গলবার জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বরিশালে চরমোনাইয়ের পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তাঁরা মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। অবশ্য বরিশালে জামায়াতের আমিরের দলীয় সমাবেশ ছিল। এর ফাঁকে তাঁরা চরমোনাইতে মিলিত হন। যদিও ইসলামপন্থী এ দুটি দলের মধ্যে আদর্শিক বিরোধ রয়েছে। ৫ আগস্টের পর দল দুটিকে পরস্পরের প্রতি নমনীয় দেখা যায়। এর মধ্যেই জামায়াতের কোনো আমির ও বা শীর্ষ পর্যায়ের নেতা প্রথমবারের মতো চরমোনাইয়ের পীর বাড়িতে আতিথেয়তা নিলেন। পরস্পর বৈরী দল দুটির এই সম্পর্কোন্নয়নকে আগামী নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ইসলামি দলগুলো কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছি। এটা তারই অংশ। যদিও বৈঠকটি ছিল সৌজন্যমূলক। জামায়াত আমিরের বরিশালে কর্মসূচি ছিল। তবু দুই দলের আমিররা বৈঠক করেছেন, একসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেছেন। এর একটা তাৎপর্য আছে। আমরা এটাকে শুভসূচনা বলেই মনে করি।’

গতকাল খেলাফত মজলিসের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক শেষে জামায়াতের আমির ও ইসলামী আন্দোলনের আমিরের বৈঠকের বিষয়টি ব্রিফিংয়ে সামনে আনেন সাংবাদিকেরা। এ বিষয়ে তাঁরা বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানতে চান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিভিন্ন দলের সঙ্গে লিয়াজোঁর দায়িত্বে থাকা নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বাংলাদেশে যাঁরাই রাজনীতি করেন, তাঁরা তাঁদের রাজনীতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যাঁদের সঙ্গে মতের মিল হবে, তাঁদের সঙ্গে কাজ করার চিন্তা করতে পারেন, সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এ নিয়ে কারও কোনো দুশ্চিন্তা থাকার তো কোনো কারণ নেই।’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘একসময় এক দল আরেক দলের বিরোধিতা করেছে, সমালোচনা করেছে, আবার আন্দোলনের একপর্যায়ে তারা একমত হয়েছে। এতে অস্বাভাবিক কী আছে! আজকে যারা একমত, কালকে তারা একমত না-ও হতে পারে। তাতে অবাক হওয়ার কী আছে! কাজেই এ বিষয়গুলো নিয়ে দুশ্চিন্তার বা মন্তব্য করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। তারা (জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন) তাদের রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে যা উচিত মনে করবে, নিশ্চয়ই তা করবে।’

অবশ্য চরমোনাইয়ের পীরের সঙ্গে এ বৈঠকটিকে ‘চূড়ান্ত কিছু নয়’ বলে মন্তব্য করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েই গিয়েছি (চরমোনাইয়ের পীর), তাঁরাও আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছেন। এটা চূড়ান্ত কিছু নয়, আমরা সমঝোতায় এসে গেছি—এ রকমও নয়। বিষয়টি আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি, তাঁরাও ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন।’

বিএনপি-খেলাফত একমত যেসব বিষয়ে

বিএনপি ও খেলাফত মজলিস—দুই দলই দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ সাতটি বিষয়ে একমত হয়েছে। বৈঠক শেষে গুলশানের কার্যালয়ে যৌথ ব্রিফিংয়ে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের সেগুলো তুলে ধরেন। সেই সাতটি বিষয় হলো জাতীয় ঐক্য সুসংহত করার জন্য বিভিন্ন দলের সঙ্গে সংলাপ অব্যাহত রাখা। বড় দল হিসেবে বিএনপিকেই এ উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া; ইসলামি মূল্যবোধ সমুন্নত ও ধর্মীয় সম্প্রীতির রক্ষায় সবার ইতিবাচক ভূমিকা রাখা; পতিত স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সে জন্য জাতীয় ঐক্য অটুট রাখা; খুন, গুম, হত্যা, নির্যাতনে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা; বিগত আওয়ামী সরকারের সময় আলেম-ওলামা ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করা।

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব বলেন, ‘জাতির স্বার্থে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি মনে করি। এ ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি।’

এর আগে বিএনপির নেতা নজরুল ইসলাম খান কোন প্রেক্ষাপটে এবং কেন খেলাফত মজলিসের সঙ্গে এ বৈঠক, সে বিষয়ে সংক্ষেপে ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক এবং আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে কী করণীয়, সে সম্পর্কে আলোচনা করেছেন তা। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একমত হয়েই একসঙ্গে আন্দোলন করেছি বহু বছর ধরে। এ আলোচনায় (গতকাল) আমাদের মধ্যে তেমন কোনো দ্বিমত নেই, আমরা একমতই হয়েছি।’

২০২১ সালে জোট ছাড়ার তিন বছর পর এই প্রথম খেলাফত মজলিসের সঙ্গে বিএনপি আনুষ্ঠানিক বৈঠক করল; যদিও গত ডিসেম্বর মাসে দলটি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত তাদের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিবসহ নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।

যুগান্তর

‘মাস্টারমাইন্ড গভর্নর আতিউর’-এটি দৈনিক যুগান্তরের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ১০১ মিলিয়ন ডলার লুটের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার ‘মাস্টারমাইন্ড’ তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তার নির্দেশনায় রিজার্ভ থেকে ওই অর্থ সরানোর পর এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ডাটা ও তথ্য মুছে ফেলার সব আয়োজন সম্পন্ন হয়। রিজার্ভ লুটের স্পর্শকাতর বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জেনে গেলে বোর্ডরুমে সবাইকে ডেকে সভা করে তাদের মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন ড. আতিউর। রিজার্ভ থেকে অন্তত ২ বিলিয়ন ডলার লুট করার পরিকল্পনার অংশ হিসাবে সুইফটের সঙ্গে হঠাৎ করেই আরটিজিএস (রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট) কানেকশন স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর শুভংকর সাহার মধ্যস্থতায় হ্যাকিংয়ের প্রথম অধ্যায়ে আরটিজিএস প্রকল্প আনা হয়।

হ্যাকারদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সুইফটের এক্সেস। পরিকল্পনামতো আরটিজিএস সংযোগ স্থাপনের জন্য ভারতীয় নাগরিক নীলা ভান্নানকে ভাড়া করে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়ে আসেন আতিউর। তাকে এ কাজে সহায়তা করেন বেসরকারি দুটি ব্যাংকের এমডি। আরটিজিএস স্থাপনের পর নীলা ভান্নান বাংলাদেশ ব্যাংকের ইন্টারনেটের সঙ্গে সুইফটের সংযোগ স্থাপন করে দেন। এরপর ধাপে ধাপে শুরু হয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর্ব। হ্যাকিংয়ের ঘটনার পরপর আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট সার্ভার রুমে এসে কর্মকর্তাদের শাসিয়ে বলেন, ‘যদি তোমরা কেউ বলো যে হ্যাক হয়েছে, তোমাদের কারও চাকরি থাকবে না। সবাইকে বরখাস্ত করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এবিডি শাখার (অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড বাজেটিং) কর্মকর্তা বদরুল হককে হুমকি দিয়ে আতিউর বলেন, এই ঘটনা চেপে যেতে হবে। তিনি চাকরি রক্ষায় চুপ হয়ে যান। তিনি হ্যাকিং ঘটনার পরবর্তী পর্বে আতিউরের অপরাধনামার একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। আরেকজন সাক্ষী হলেন-তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম। তিনি সুইফটের মাধ্যমে আরটিজিএস সংযোগ প্রদানের বিরোধিতা করেছিলেন। যে কারণে আরটিজিএস-এর ফাইল তার মাধ্যমে কানেকটিভিটিসংক্রান্ত অনুমোদন হওয়ার কথা থাকলেও গভর্নর আতিউর ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সেই ফাইলে নিজেই সই করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেন।

অথচ ড. আতিউর এতদিন একজন সজ্জন ও সুশীল হিসাবে দেশের সবার কাছে সুপরিচিত ছিলেন-এমন মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। তাদের মতে, ভদ্রলোকের মুখোশ পরে আতিউরের এমন ভয়াবহ অপকর্মের ঘটনা মনে করিয়ে দেয় রবিঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার লাইন-‘বেটা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয়।’

অপরাধ তদন্ত সংস্থা, যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতভর বাংলাদেশ ব্যাংকের ফেডারেল রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ১৬২৩ মার্কিন ডলার (১০১ মিলিয়ন) হ্যাক করে সরিয়ে নেওয়া হয়। এতে আতিউরের পক্ষে কাজ করেন তার বিশ্বস্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিভাগের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। হ্যাকিংয়ের ক্ষেত্র তৈরির প্রথম ধাপে গভর্নর আতিউরের পিএস আসাদুজ্জামান একটি মেইল আদান-প্রদানের সূত্রপাত করেন। সেটি সেন্ড ও রিসিভ করার পর তিনি হ্যাকারদের রিপ্লাই দেন। আর এর মধ্য দিয়েই পরিকল্পনার প্রথম ধাপের কাজটি সম্পন্ন হয়।

হ্যাকিংয়ের পর এ সংক্রান্ত আলামত ধ্বংস ও অপরাধ ধামাচাপা দিতে রাকেশ আস্তানা নামে ভারতীয় আরেক নাগরিককে ক্রাইম সিনের (সার্ভার কক্ষ) এক্সেস হাতে তুলে দেন। তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, রাকেশ আস্তানাকে দিয়ে ৩৯ দিন পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে প্রকারান্তরে সব আলামত ডিলেট করান আতিউর। নিয়ম হচ্ছে, সরকারি প্রতিষ্ঠান যদি কাউকে এ ধরনের (মুছে ফেলা তথ্য পুনরুদ্ধার) কাজ দিতে চায় তাহলে টেন্ডার করে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তাকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। তথ্য গোপনের অসৎ উদ্দেশ্যে এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। ঘটনার পর মামলা কিংবা জিডি করতে দেননি আতিউর। জরুরি ভিত্তিতে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহায়তা নেওয়া হয়নি বা তাদের অবহিত করা হয়নি। এমনকি সাবেক অর্থমন্ত্রীকেও কিছু জানাননি। এ অবস্থায় ‘আন-অথরাইজড’ ব্যক্তিকে সার্ভারের কর্তৃত্ব হাতে তুলে দেন আতাউর। যা বড় ধরনের অপরাধ। গভর্নর ও তার ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের সহায়তায় হ্যাকিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট করে বেরিয়ে যান রাকেশ আস্তানা।

আরও জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের পর তা চাপা দেওয়াসহ পুরো বিষয়টি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি না করতে হুকুম জারি করেন আতিউর। অপরাধে জড়িতদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রেও বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন তিনি। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ লুটের পর তিনি ঘটনাটি আড়াল করতে কোনো দপ্তর যেমন-গোয়েন্দা সংস্থা, আইসিটি মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের বিষয়ে অপরাধীদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে সহায়তাকারী কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানেরও সহায়তা নেননি। ফিলিপিনসের একটি পত্রিকার মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের বিষয়টি সামনে আসে।

কালের কণ্ঠ

দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান শিরোনাম ‘মার্কিন সাহায্য স্থগিতে শঙ্কা’। খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈদেশিক সহায়তা স্থগিতের সিদ্ধান্তে সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশে। গত সোমবার রাতে দ্বিতীয় দফায় শপথ নেওয়ার দিনই বিদেশে মার্কিন সহযোগিতা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। উন্নয়ন সহযোগীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তের বিরূপ প্রভাব পড়বে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার বিভিন্ন প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএসএআইডির ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র জোরালো বন্ধুত্ব বজায় রেখে আসছে। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত অংশীদার হিসেবে স্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারিও অভিন্ন স্বার্থ থেকে নির্ধারিত হয়।

ইউএসএআইডির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইউএসএআইডির কর্মসূচি এশিয়ায় বৃহত্তম।

এই কর্মসূচিতে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য কর্মসূচির পাশাপাশি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ গণতন্ত্র ও সুশাসন, মৌলিক শিক্ষা এবং পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ও আছে।

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বড় ধরনের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম দেখভাল করে। ২০৩১ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ইউএসএআইডি অনেক পুরনো অংশীদার হিসেবে আছে।

গত সোমবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে রোহিঙ্গাদের সংকটে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নতুন একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে।

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় সবচেয়ে বেশি অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে আড়াই শ কোটি ডলারেরও বেশি সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য সহায়তার পরিমাণ ২১০ কোটি ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র ইউএসএআইডি ছাড়াও পররাষ্ট্র, কৃষি, বিচার, জ্বালানিবিষয়ক দপ্তর এবং ফেডারেল ট্রেড কমিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়ে থাকে। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ৪৯ কোটি ডলার (প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা) সহায়তা দিয়েছে।

২০২৪ সালের আংশিক হিসাবেও সহায়তার পরিমাণ প্রায় কাছাকাছি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র এখন তার বৈদেশিক সাহায্য পুনর্মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হিসেবে নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট শিল্প এবং আমলাতন্ত্র আমেরিকান স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং অনেক ক্ষেত্রে আমেরিকান মূল্যবোধের পরিপন্থী। তারা বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত করে।

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে নীতি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন কোনো সহায়তা বিদেশে যুক্তরাষ্ট্র আর দেবে না। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচির কার্যকারিতা মূল্যায়ন ও সংগতি যাচাইয়ের জন্য বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সহায়তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত থাকবে।

সমকাল

‘মূল্যস্ফীতির মধ্যে শুল্ক-কর বৃদ্ধিতে জনরোষের বার্তা’-এটি দৈনিক সমকালের প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, এমনিতেই মূল্যস্ফীতির গতি বলগাহীন। নিত্যপণ্যের দামের চাপে গজগজ করছে মানুষ। এর মধ্যে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর বাড়তি শুল্ক-কর বসিয়ে সরকার যেন ‘আগুনে ঘি ঢেলেছে’। এ সিদ্ধান্তে পণ্যের দরে প্রভাব পড়বে না বলে অর্থ উপদেষ্টা বারবার নির্ভয় দিলেও দামের ঘোড়া ঠিকই ছুটছে। শুল্ক-কর বাড়ানোর এ সিদ্ধান্তের ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে খোদ সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থাও জানিয়েছে, এর ফলে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিতে পারে অসন্তোষ। এই জনরোষ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল সরকারবিরোধী আন্দোলনের পথে হাঁটতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ প্রতিবেদনটি সম্প্রতি কয়েকজন উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠানো হয়। নানামুখী সমালোচনা ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গতকাল বুধবার ওষুধ, মোবাইল ফোন ও আইএসপি সেবা, রেস্তোরাঁ, নিজস্ব ব্র্যান্ডের পোশাকসহ কয়েক ক্ষেত্রে শুল্ক-কর পুনর্বিবেচনা করেছে সরকার। গত ৯ জানুয়ারি রাতে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ এবং দি এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করে এ শুল্ক-কর বাড়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর পর থেকেই সরকারের এ হঠকারী সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছেন অর্থনীতিবিদরা।

এ ব্যাপারে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, কয়েক বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির রাশ টানা যাচ্ছে না। জিনিসপত্রের দামের স্তরও অনেক ওপরে উঠে গেছে। এতে করে শুধু নিম্ন বা প্রান্তিক আয়ের মানুষ নন, মধ্যবিত্তরাও হিমশিম খাচ্ছেন। তাদের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। এখন নতুন শুল্ক-কর আরোপের ফলে এই শ্রেণির মানুষের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে। তিনি বলেন, বুধবার কয়েকটি পণ্যের শুল্ক-কর আগের অবস্থায় নেওয়া হয়েছে, এটি ইতিবাচক। রাজস্বের উন্নতির ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে চাপে না ফেলে প্রত্যক্ষ কর ও বিলাস পণ্যে কর বাড়ানো উচিত।

গত শনিবার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘শ্বেতপত্র ও অতঃপর: অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক এক সিম্পোজিয়ামে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা বিস্মিত, কীভাবে অবিবেচনাপ্রসূত শুল্ক-কর বাড়ানো হলো। কোনো দেশে সরকার যদি কার্যকর কর আদায় করতে চায় তাহলে তাকে ধীরে ধীরে প্রত্যক্ষ করের দিকে নজর দিতে হবে। তবে প্রত্যক্ষ কর আদায়ের কোনো পরিকল্পনা দেখছি না।’

গত শনিবার গুলশানের বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে শুল্ক-কর বাড়িয়ে নয়, বরং খরচ কমিয়ে, বিকল্প উপায়ে রাজস্ব বাড়াতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, কর বাড়িয়ে রাজস্ব আয় বাড়ানোর মতো সহজ রাস্তায় হেঁটে সরকার দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলবে। তিনি জনগণের ওপর পরোক্ষ কর আরোপের মতো অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। এর আগে ব্যবসায়ীরাও এ সিদ্ধান্তের প্রত্যাহার চেয়েছিলেন।

ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রত্যক্ষ কর হিসেবে ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক সরাসরি করদাতার ওপর আরোপিত না হয়ে পণ্য ও সেবার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে জনগণের ওপর প্রভাব ফেলে। এসব করের খরচ মূলত জনগণের ওপর স্থানান্তরিত হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তৈরি পোশাক, মোবাইল ফোনে কথা বলা, ইন্টারনেট, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেস্তোরাঁ, মিষ্টি, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, এলপি গ্যাস, গুঁড়া দুধ, বিস্কুট, সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, হোটেল সেবাসহ শতাধিক পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট থেকে ১৫ শতাংশ এবং সম্পূরক শুল্ক ১০০ শতাংশ পর্যন্ত করা হয়। ফলে এসব পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব পড়তে পারে। প্রতিবেদন গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাসভিত্তিক সার্বিক মূল্যস্ফীতির তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, এ সময় সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। একই সময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ। গত জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে উঠেছিল।

ইত্তেফাক

দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান শিরোনাম ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না ইসি’। খবরে বলা হয়, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এখন ইসির কাছে মূল ফোকাস জাতীয় নির্বাচন। চলতি বছরের ডিসেম্বরকে টার্গেট করে জোরেশোরে প্রস্তুতি শুরু করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। জাতীয় নির্বাচনের তপশিলের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, সমাজের বিশিষ্টজন এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি একাধিক নির্বাচন কমিশনারও জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে তারা অন্য নির্বাচনে মনোযোগী দিতে চায় না। সেক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটবে। তখন প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে না।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, আমাদের মূল ফোকাস জাতীয় নির্বাচনে। জাতীয় নির্বাচনের আগে একটা রি-অ্যাকশন টাইম দিতে হবে। এমন ইভেন্ট আসা ঠিক হবে না, যা জাতীয় নির্বাচনকে ব্যাহত করে। জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি থাকলে সব নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে যায়।

গত ৬ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. তোফায়েল আহমদে জানিয়েছিলেন, জাতীয় নির্বাচেনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হয়ে যাওয়া উচিত। এরপর গত ৮ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি সরকার স্থানীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচন সংস্কার কমিশন জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সুপারিশ করেছিল।

বুধবার বরিশালে এক মতবিনিময় সভায় আরেক নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানিয়েছেন, সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন নিয়ে আমরা জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ। আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভাবছে কমিশন। জাতির সামনে সবথেকে বড় ফোকাস সংসদ নির্বাচন।

ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আয়োজনের পক্ষ নয় ইসি। এই বিষয়ে কমিশনারও ঐকমত্য হয়েছেন। কেননা স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আয়োজন করতে গেলে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটবে। যথাসময়ে নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না ইসি। যে কোনো জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আগে নির্বাচন কমিশনকে বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা। সেই কার্যক্রম শুরু করেছে ইসি। গত ২০ জানুয়ারি থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রম আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।

এবার যাদের জন্ম ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে তাদের তথ্যসংগ্রহ করা হবে। তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হলে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু ছবি তুলে নিবন্ধন সম্পন্ন করার কাজ। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করা। ভোটার তালিকার হালনাগাদ সম্পন্ন করতে প্রায় জুন পর্যন্ত সময় লেগে যাবে ইসির। এছাড়া সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক নিবন্ধন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে আইন-বিধি সংশোধন, ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতকরণ, নির্বাচনি কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুত, নির্বাচনী রোড ম্যাপ ঘোষণা, নির্বাচনি মালামাল ক্রয়, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করতেই আগস্ট মাস সময় লেগে যেতে পারে ইসির। এর পরই জাতীয় নির্বাচনের তপশিলের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে নির্বাচন কমিশন।

এদিকে, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের দাবিকে নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার চক্রান্ত হিসেবে মনে করছেন। তারা বলছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে আয়োজনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক সম্প্রতি পরিচালিত জরিপটি ছিল একপেশী। বিশেষ এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশবিশেষ।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, কোনোভাবেই সরকার প্রতিষ্ঠান এই ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কোনো জরিপ পরিচালনা করতে পারে না। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আয়োজনের দাবি একটি দুরভিসন্ধিমূলক।

নয়া দিগন্ত

কৌশল ব্যর্থ হচ্ছে আ’লীগের-এটি দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ভয়াবহ পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলে রাজনীতিতে ফের পুনর্বাসনের জন্য একের পর এক কৌশল গ্রহণ করেও ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী লীগ। সর্বশেষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করলেও গেল সোমবার শপথ গ্রহণের দিনই এ দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করায় এখানেও বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে দলটি। এই পরিস্থিতিতে নতুন কর্মকৌশল নির্ধারণেও খেই হারিয়ে ফেলছেন দলটির পালিয়ে থাকা নেতারা। অবশ্য ভবিষ্যৎ নতুন কৌশল নির্ধারণে কাজ চলছে বলে দলটির তৃণমূল ও মধ্যম সারির একাধিক নেতার সাথে আলাপকালে এ তথ্য জানা গেছে।

ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট পতন হয় টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের। ওই দিন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে নিরাপদ আশ্রয় নেন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সব মন্ত্রী-এমপিও আত্মগোপনে চলে যান। আওয়ামী লীগ এবং তার সরকারের টপ টু বটম সবাই পালিয়ে গেলেও হাল ছাড়েনি তারা।

রাজনীতিতে পুনর্বাসন হওয়া ও অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য নানা কৌশল বেছে নেয় দলটির ঘাপটি মেরে থাকা সুবিধাভোগীরা। নেতারা কেউ প্রকাশ্যে রাজনীতির মাঠে না এলেও নীলনকশা বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগের ছায়া হয়ে কাজ করছেন তাদের দোসর সরকারি-বেসরকারি পদস্থ বিভিন্ন কর্মকর্তা ও দেশের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এসবের পেছনে খোদ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাসহ শেখ পরিবারের ডজনখানেক নেতা ভারতে অবস্থান করে কলকাঠি নাড়ছেন বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

সম্প্রতি মধ্যরাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে ভয়াবহ আগুন লাগে। অগ্নিকাণ্ডে ওই ভবনের ষষ্ঠ থেকে নবমতলা পর্যন্ত সব কিছু পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। সচিবালয়ের মতো সুরক্ষিত জায়গায় আগুন লাগার ঘটনা নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সন্দেহের তীর এখন আওয়ামী লীগ আমলের সুবিধাভোগী আমলাদের দিকে। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে মন্ত্রী-এমপিরা পলায়ন করলেও সচিবালয়ে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন আওয়ামী লীগের দোসর সেই আমলারা।

অন্তর্বর্তী সরকার হাতেগোনা দু-চারজন আমলাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠালেও বেশির ভাগই স্বপদে বহাল রয়েছেন, আবার কেউ কেউ পদোন্নতি পেয়ে নতুনরূপে প্রভাব খাটাচ্ছেন। আবার কারো কারো দফতর বদল হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে ওই আমলারা মিলেমিশে একাকার হয়ে কাজ করছেন এবং ভেতরে ভেতরে সেই আগের প্রভাবই খাটাচ্ছেন তারা। বলা যায়, আওয়ামী লীগের দোসর আমলাদের হাতে শুধু সচিবালয় নয়, পুরো রাষ্ট্রেরই নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। তাদের ওপর ভর করেই আওয়ামী লীগ কর্মকৌশল নির্ধারণ করে বাস্তবায়নের পথে আগায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বণিক বার্তা

দৈনিক বণিক বার্তার প্রধান শিরোনাম ‘এশিয়ায় অন্যতম অদক্ষ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত’। খবরে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনামে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৮১ হাজার মেগাওয়াট। দেশটিতে পিক আওয়ারে গত বছর বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ৪৬ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি। সক্ষমতার বড় একটি অংশ অব্যবহৃত থাকলেও দেশটির বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ শূন্যের কাছাকাছি। আর কিলোওয়াটপ্রতি ট্যারিফ (ভ্যাট ছাড়া) বাংলাদেশী টাকায় ৯ টাকা ৮ পয়সার সমান।

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতের সক্ষমতা ভিয়েতনামের এক-চতুর্থাংশ। বিদ্যুতের সর্বোচ্চ ব্যবহার পিক আওয়ারে ৬০ শতাংশের ওপরে। ট্যারিফ প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টায় গড়ে সাড়ে ৮ টাকার কিছু বেশি। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনে মাথাপিছু ভর্তুকির পরিমাণ ১৮ ডলার ৫৩ সেন্টের সমান। প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ টাকা ৯৯ পয়সায়। মাথাপিছু ও প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা—সব হিসাবেই বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে দেয়া ভর্তুকির পরিমাণ ভিয়েতনাম এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার ভারত ও পাকিস্তানের চেয়েও অনেক বেশি।

বিদ্যুৎ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বিদ্যুতে ভর্তুকি বেড়ে যাওয়ার বড় একটি কারণ হলো এ খাতে একের পর এক অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ। বিগত সরকারের আমলে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ খাতের ব্যয় কমিয়ে আনায়ও কখনো মনোযোগ দেয়া হয়নি। পাশাপাশি প্রাথমিক জ্বালানির স্থানীয় উৎসগুলোকে কাজে লাগাতে না পারা এবং নবায়নযোগ্য খাতে বিনিয়োগে অনিচ্ছার কারণেও খাতটিতে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকির পরিমাণ ক্রমেই বেড়েছে। যদিও এর বিপরীতে জনগণের মধ্যে বিদ্যুতের ব্যবহার সেভাবে বাড়েনি। কমানো যায়নি খাতটির অনুৎপাদনশীল ব্যয়গুলোও। বরং তা দিনে দিনে আরো বড় হয়েছে। সব মিলিয়ে গোটা এশিয়ায়ই বিদ্যুৎ খাতে দক্ষতার দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর অন্যতম হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।

ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ ক্যাম্পাসের উপ-উপাচার্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এ কে এনামুল হক বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে আজকে যে ব্যয় বেড়েছে তার কারণ মূলত অপ্রয়োজনীয় খরচ বৃদ্ধি ও পরিকল্পনাহীনভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন। এসব করে মূলত বিদ্যুৎ খাতে চুরি ও দুর্নীতি বাড়িয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ সরানো হয়েছে। অতীতে করা চুক্তিগুলো হয়তো বাতিলের সুযোগ নেই। তবে দীর্ঘমেয়াদি ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনা করে এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ রয়েছে। সরকারের সে কর্মকৌশল তৈরি করা উচিত।’

বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে বিদ্যুতের সক্ষমতা ছিল ২৬ হাজার ৮৮৭ মেগাওয়াট (নভেম্বর থেকে এপ্রিল-২০২৪ পর্যন্ত)। যেখানে ওই অর্থবছরে সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট। আর বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে এ সময় ভর্তুকি দিতে হয়েছে ৩২১ কোটি ৬২ লাখ ডলার। এক্ষেত্রে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভর্তুকির পরিমাণ ৩ টাকা ৯৯ পয়সা। আর জনসংখ্যার হিসাবে মাথাপিছু ভর্তুকি ছিল ১৮ ডলার ৫৩ সেন্টের সমান। একই সময়ে প্রতিবেশী ভারতে মাথাপিছু ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ১৪ ডলার ২৯ সেন্টের সমান। আর পাকিস্তান ও ভিয়েতনামে তা ছিল যথাক্রমে ৮ ডলার ৭১ সেন্ট ও মাত্র ৪ সেন্ট।

বিদ্যুতের চাহিদা বিবেচনায় প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯৭০ মেগাওয়াট। দেশটিতে বিদ্যুতে মাথাপিছু ভর্তুকি ১৪ ডলার ২৯ সেন্ট। প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ গড়ে ১০ টাকা ৩২ পয়সার সমান। প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টায় এ ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়ায় ১ টাকা ৫৫ পয়সায়।

আজকের পত্রিকা

‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কাজে অসন্তুষ্ট আহতরা’-এটি দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, জয়নুল আবেদিন শাহেদ এখন আর কিছু মনে রাখতে পারে না। ১৬ বছরের এই ছেলেটি কোরআনের হাফেজ, পড়াশোনা করছিল দশম শ্রেণিতে। চট্টগ্রামের পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গত ৪ আগস্ট মাথায় গুরুতর আঘাত পায় সে। অস্ত্রোপচার শেষে অচেতন ছিল প্রায় দুই সপ্তাহ। সেই আঘাতের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো সহযোগিতা পৌঁছায়নি তার কাছে।

জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়ে পা ও কোমরে এক শর বেশি ছর্‌রা গুলি বিদ্ধ হয়েছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ সেলিম। অনেকটা অবশ হয়ে বেঁকে গেছে ডান পায়ের পাতা। কোনোরকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কয়েক কদম হাঁটাচলা করলেও পেছনে সাপোর্ট ছাড়া স্থির হয়ে বসতে পারেন না। পাঁচ মাস ধরে অভাব-অনটনে চলছে তাঁর সংসার। তাঁর হাতেও পৌঁছায়নি জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কোনো সহযোগিতা।

আন্দোলন চলাকালে ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে পাঁজরের হাড় ভেঙে যায় হাবীবুল্লাহ হামীমের। ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হামীমের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায়। বর্তমানে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ আবেদন করেও কোনো সহযোগিতা পাননি তিনি।

শাহেদ, সেলিম ও হাবীবুল্লাহ হামীমের মতো অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা আন্দোলনে আহত হয়েও এখনো কোনো সহযোগিতা পাননি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পাঁচ মাস পার হয়ে গেলেও শহীদ পরিবার ও আহতদের সহায়তার কাজ শেষ করতে না পারাকে ‘ব্যর্থতা’ হিসেবে দেখছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

শহীদ পরিবার ও আহতরা সহায়তা না পাওয়ার কারণ হিসেবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দায়ী করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক শিক্ষার্থী ও অ্যাকটিভিস্ট আজহার উদ্দিন অনিক। তিনি বলেন, ‘আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের সহায়তা ঠিকভাবে পৌঁছানো হচ্ছে না।

একই সঙ্গে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের কোনো ত্রুটি আছে কি না, সেটা দেখাও দরকার। তবে আমাদের আমলাতন্ত্রের দিকে আঙুল তোলা জরুরি।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারকে স্বাস্থ্যসেবা, আর্থিক সহায়তা এবং দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা দেওয়ার বিষয়কে সামনে রেখে ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের’ কার্যকরী পরিষদের অনুমোদন দেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি ও শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমানকে (স্নিগ্ধ) সাধারণ সম্পাদক করে সংস্থাটির সাত সদস্যের কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২১ অক্টোবর ফাউন্ডেশনের দ্বিতীয় সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনার মুখে গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক এক পোস্টে সারজিস জানান, তিনি জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ‘সাধারণ সম্পাদক’ পদে আর নেই।

দেশ রূপান্তর

দৈনিক দেশ রূপান্তরের প্রধান শিরোনাম ‘সিসি ক্যামেরায় ভিনদেশি!’। খবরে বলা হয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশ হত্যাকান্ডের ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। স্থাপনাগুলোর ভেতর ও বাইরে থাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত চলছে। ফুটেজে চিহ্নিত হচ্ছে হামলার সঙ্গে কারা সম্পৃক্ত আছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলার সময় প্রায় সব ঘটনায় বহিরাগতরা অংশ নিয়েছিল। কেউ কেউ ভিনদেশি বলে তদন্তে বেরিয়ে আসছে। বিষয়টি আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তাছাড়া হামলার সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের কিছু নেতাও রয়েছেন বলে পুলিশের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।

এদিকে গণঅভ্যুত্থানের সময় নিরীহ শিক্ষার্থী ও জনতাকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত ৯৫২ জনের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। এর মধ্যে আরও ২১২ জন কর্মকর্তাসহ অন্য সদস্যদের বরখাস্ত ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে তাদের তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করে আনা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রথমে এসব ঘটনায় থানায় মামলা বা জিডি হয়নি। তবে গত দুই মাসের ব্যবধানে হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় তদন্ত করতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিটপ্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপারদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। থানার ভেতর ও বাইরে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। কিছু ফুটেজে ভিনদেশি কিছু লোকের অস্থিত্ব মিলেছে। আবার আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে। বহিরাগতও আছে অনেক।

তারপরও বিষয়টি আমরা আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করছি। আশা করছি, পুলিশের স্থাপনা ও সদস্যদের হত্যাকান্ডের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত আছে তাদের দ্রুত সময়ে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নিরপরাধ লোকজন যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে ‘বিশেষ নির্দেশনা’ দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আগে ও পরে পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ব্যাপক। একদল দুর্বৃত্ত থানা ও ফাঁড়িসহ পুলিশের একাধিক স্থানে হামলা চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র লুট করার পাশাপাশি ৪৪ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। এখনো লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা বাকি আছে। মামলার তদন্ত ও আসামিদের বিষয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা। ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনার বাইরে ও ভেতরে এবং আশপাশে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। কিছু দুর্বৃত্তকে চিহ্নিত করা হয়েছে। হামলার ঘটনার বেশিরভাগ মামলার বাদী পুলিশ নিজেই। ইতিমধ্যে পুলিশের স্থাপনায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ সদস্যদের হত্যার ঘটনায় সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশের স্থাপনায় দফায় দফায় হামলা চালানো হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ১৬ জুলাইয়ের পর আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। দুর্বৃত্তদের হামলায় ৪৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গুলিতে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ও নিরীহ লোকজন মারা যান। আহত হন ২২ হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ লোকজন। এখনো সংকটাপন্ন আছেন অনেকে। হামলার সময় থানা, ট্রাফিক অফিস ও বক্সে হামলা চালিয়ে এসি, কম্পিউটার, চেয়ার-টেবিল লুটপাটও করা হয়। বেশিরভাগ স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়। নষ্ট করা হয় গুরুত্বপূর্ণ আলামত। পাশাপাশি লুট করা হয় পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র।

পাঠকের মতামত

পৃথিবীতে যদি কোনো গাধা দল থাকে তাহলে সেটা বিএনপি। সাধারণ জনগণ এখন তৃতীয় দল খুঁজছে।

শোভন
২৩ জানুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১০:২৯ পূর্বাহ্ন

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

নবীজীর সাহাবীদের নিয়ে কটূক্তি/ মৌলভীবাজারে নারী আইনজীবী আটক

১০

গুঁড়িয়ে দেয়ার দাবি অসত্য/ বাংলাদেশি কূটনীতিকের তেহরানের বাসা অক্ষত!

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status