শরীর ও মন
পায়ের তালুতে ব্যথা
ডা. মো. বখতিয়ার
১৬ জানুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবারপ্রায়ই দেখা যায় ঘুম থেকে ওঠার পর হঠাৎ দেখা গেল মাটিতে পা ফেলা যাচ্ছে না পায়ের তালুতে তীব্র ব্যথার কারণে। সাধারণত এটা চলাফেরা বা জীবনযাপন সংক্রান্ত কোনো কারণে হতে পারে। আবার কোনো কোনো রোগের উপসর্গ হিসেবেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। পায়ের তালুতে ব্যথার অনেক কারণের মধ্যে প্লান্টার ফ্যাসাইটিস অন্যতম। এটা খুবই বিরক্তিকর ও বেদনাদায়ক, যা দৈনন্দিন চলাফেরায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে।
হঠাৎ খেলাধুলার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে, পায়ের জুতা বিশেষ করে শক্ত সোলের ভারী জুতা পরলে, উঁচু-নিচু স্থানে হাঁটলে বা দৌড়ালে; এ ছাড়া কিছু রোগ যেমন- গাউট, এনকাইলোসিং স্পন্ডেলাইটিস, রেইটার্স ডিজিজ ইত্যাদি কারণে এ রোগ হতে পারে। এ রোগে সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথম কয়েক কদম ফেলতে বেশ কষ্ট এবং পায়ের তালুতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। তবে দিন শেষে ব্যথার তীব্রতা আস্তে আস্তে কমে আসে। এমনকি দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর হাঁটতে গেলে একই রকম তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
রোগ নির্ণয়ের জন্য এর ইতিহাসই যথেষ্ট। তেমন কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দরকার হয় না। এ সংক্রান্ত অন্যান্য রোগ থেকে আলাদা করার জন্য এক্স-রে করা হয়।
চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে জীবনযাত্রার পরিবর্তন, ওষুধ, ব্যায়াম ও ফিজিক্যাল থেরাপি। জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে ওজন বেশি থাকলে কমানো, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকা, নরম সোলের ফিট জুতা পরা, খালি পায়ে না হাঁটা, বিছানা থেকে নামার সময় নরম সোলের জুতা বা স্যান্ডেল পরে নামা, পায়ের তালুর ওপর অত্যধিক ভর না দেয়া ইত্যাদি।
ব্যথানাশক ওষুধ এবং ব্যথা তীব্র হলে ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে।
প্লান্টার ফ্যাসা স্ট্রেস, ফুট সার্কল, টো কার্ল, টো টাওয়েল কার্ল ইত্যাদি ব্যায়াম করলে উপকার পাওয়া যায়। এর সঙ্গে পায়ের তালুতে কিছু ম্যাসাজ করা যেতে পারে। তবে ব্যায়ামের আগে ব্যথার জায়গায় বরফ ব্যবহার করা ভালো। আর ফিজিওথেরাপির মধ্যে আলট্রাসাউন্ড থেরাপি দেয়ার দরকার হয়। এ ছাড়া রাতের বেলা পায়ের তালুর অবস্থান ঠিক রাখার জন্য রেস্টিং প্যাডে স্পিন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। একজন ফিজিয়াট্রিস্ট বা ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে এ রোগের সমন্বিত চিকিৎসা নেয়া একান্ত প্রয়োজন।
লেখক: জনস্বাস্থ্যবিষয়ক লেখক ও গবেষক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, খাজা বদরুদজোদা মডার্ন হাসপাতাল, সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।