ঢাকা, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২ রজব ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

সাঈদীর পর সিলেটে আজহারীর বাজিমাত

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১২ জানুয়ারি ২০২৫, রবিবারmzamin

সিলেটের আলীয়ার ময়দান। উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম-ওলামার স্মৃতিবিজড়িত মাঠ। এই মাঠে সমাবেশ করে নির্বাচনী যাত্রা শুরু করেন রাষ্ট্রপ্রধানরাও। ২৬ বছর আগে এই আলীয়া মাদ্রাসার মাঠে প্রখ্যাত আলেম ও জামায়াত নেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর হাত ধরে তাফসির মাহফিল শুরু হয়েছিল। তাকে ঘিরেই মূলত তিনদিনের এ তাফসির মাহফিলের আয়োজন হতো। আল্লামা সাঈদীর বয়ান শোনার জন্য মাদ্রাসার মাঠে জমায়েত হতেন হাজার হাজার মুসল্লি। শুধু যে সিলেট নগর তা নয়, গোটা বিভাগ থেকেই তার তাফসির মাহফিল শোনার জন্য লোকজন দলে দলে আসতেন। আর মাহফিলের আয়োজক আঞ্জুমানে খেদমতে কোরআন, সিলেট। এ সংগঠনের নেতারা জানান, আল্লামা সাঈদীকে কেন্দ্র করে সিলেট বিভাগে এটাই ছিল সবচেয়ে বড় তাফসির মাহফিল। ২০১২ সাল পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে এ তাফসির মাহফিলের আয়োজন চলে। এরপর থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়। দেলোয়ার হোসেন সাঈদী কারান্তরীণ হওয়ার কারণে মাহফিলের আয়োজন করা হয়নি। সরকারেরও নানা বিধিনিষেধ ছিল। তারা জানান, সিলেটের এ মাহফিলকে ধরা হতো প্রধান মাহফিল। এর বাইরে অন্যান্য ইসলামী দল ও গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে প্রতি বছরই আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবার মুক্ত পরিবেশ। ফলে এক যুগ বন্ধ থাকার পর এবার আয়োজক সংগঠন আঞ্জুমানে খেদমতে কোরআন সিলেট’র উদ্যোগে সিলেটে তিন দিনব্যাপী তাফসির মাহফিলের আয়োজন করেছে। প্রথমে তারা ঘোষণা দিয়েছিলেন আল্লামা সাঈদীর স্মৃতিবিজড়িত আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে মাহফিলের আয়োজন করবেন। এবারের তাফসির মাহফিলের মূল আকর্ষণ মুফাসসিরে কোরআন ড. মিজানুর রহমান আজহারী। মুক্ত পরিবেশে সিলেটে এবার তার প্রথম অনুষ্ঠান এটি। এর আগে সিলেটে তিনি একাধিকবার অনুষ্ঠান করলেও তাকে নিয়ে এত আকর্ষণ ছিল না। বিগত সরকারের রোষানলে পড়ে তিনিও হয়েছিলেন দেশান্তরী। এরপর থেকে আলেম, ওলামা ও মুসল্লিদের কাছে তার জনপ্রিয়তা বাড়ে। এবার আজহারীও সব ওয়াজ মাহফিলে অংশ নিচ্ছেন না। তার ইচ্ছে ছিল প্রতিটি বিভাগে একটি করে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করবেন। আর সেটি হচ্ছে সাজানো, গোছানো। থাকছে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়াও। তার ইচ্ছে অনুযায়ী সিলেটের আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানে এবার তিন দিনব্যাপী তাফসির মাহফিলের আয়োজন চলছিল। কিন্তু লোক সমাগম বেশি হওয়ার কারণে প্রায় তিন সপ্তাহ আগেই মাহফিলের স্থান পরিবর্তন করে এমসি কলেজ মাঠে নেয়া হয়। আয়োজকরা জানান, এমসি কলেজ মাঠে আলীয়া মাদ্রাসা মাঠের তিনগুণ লোক সমাগম ঘটানো সম্ভব। এ কারণে লোক সমাগম বিবেচনা করে তারা সিলেটে তাফসির মাহফিলের স্থান পরিবর্তন করেছেন। আয়োজন চলছে এক মাস ধরে। দফায় দফায় বৈঠক। চুলচেরা বিশ্লেষণ। কোনো কমতি যেন না থাকে। সিলেটের জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা একজোট হয়েই এবারের ওয়াজ মাহফিল সফল করতে মাঠে নামেন। কয়েক কোটি টাকার আয়োজন। সাউন্ড, এলইডি পর্দা সহ যাবতীয় সব কিছু আনা হয় ঢাকা থেকে। এ যেন এক মহাযজ্ঞ। ১০ দিন আগে থেকে মঞ্চ, প্যান্ডেল নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। ৯ই জানুয়ারি থেকে সিলেটে শুরু হয় তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিল। এ মাহফিলের সব খানেই আল্লামা সাঈদীকে স্মরণ। আবেগে আপ্লুত সবাই। একইসঙ্গে সন্তুষ্টিও তাদের মধ্যে। আসছেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী। এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। গতকাল দুপুরে ঢাকা থেকে ফ্লাইটে সিলেটে এসে পৌঁছান ড. মিজানুর রহমান আজহারী। আয়োজকদের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরেই তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। মাগরিবের পর থেকে সিলেট নগরের ধর্মপ্রাণ মানুষের গন্তব্য ছিল এমসি কলেজ মাঠমুখী। শুধু নগর নয়, গোটা বিভাগ থেকে দলে দলে লোকজন সিলেটে আসেন ড. মিজানুর রহমান আজহারীর তাফসির শুনতে। এ তাফসিরের সর্বশেষ বক্তা ড. আজহারী। তার বয়ানের আগেই মাঠ কানায় কানায় ভরে ওঠে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন এমসি’র মাঠে সুশৃঙ্খল অবস্থায় বসে বয়ান শোনেন। কত মানুষ সিলেটের এই তাফসির মাহফিলে শরীক হয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে আয়োজকদের একাধিক নেতা জানিয়েছেন- আগে থেকেই আমাদের ধারণা ছিল ১৫ লাখ মানুষ উপস্থিত থাকবেন। সেই লক্ষ্যেই সিলেটে এত বিশাল আয়োজন। তারা জানান, আল্লামা সাঈদীর স্মৃতি বিজড়িত এ তাফসির মাহফিল সিলেটে এখন থেকে নিয়মিত আয়োজন করা হবে। এ আয়োজনে শুধু আঞ্জুমানের খেদমতে কোরআন সিলেট’র সংশ্লিষ্টরা নয়, সব ধর্মপ্রাণ মানুষের যেন অংশগ্রহণ থাকে সে আহ্বান জানাবেন তারা। মাহফিলকে ঘিরে এমসি কলেজ মাঠের চারদিকে হাজারো মাইক বসানো হয়। এতে করে নগরের পূর্ব এলাকার লোকজন ঘরে বসেই তাফসির শুনতে পেরেছেন। মাহফিলে আসা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে অস্থায়ী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। মাহফিলের দ্বিতীয় দিনে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (র.)-এর ছেলে শামীম বিন সাঈদী বয়ান পেশ করেন। সিলেটের এ আয়োজনে তিনি শুকরিয়া প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার বাবার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশে কোরআনের রাজ কায়েম করা। শুধুমাত্র এই কারণেই ফ্যাসিস্ট সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোরআনের পাখি আল্লামা সাঈদী (র.) এর ওপর সীমাহীন জুলুম নিপীড়ন চালিয়েছে। সকল জুলুম উপেক্ষা করে তিনি দ্বীনের ব্যাপারে ছিলেন আপসহীন। তাই ভারতের প্রেসক্রিপশনে হাসপাতালে আল্লামা সাঈদীকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে। ২ হাজার ছাত্র-জনতার জীবন ও ৪০ হাজারের বেশি ছাত্র-জনতা রক্তের বিনিময়ে দীর্ঘ এক যুগ পর কোরআনের পাখির স্মৃতি বিজড়িত মাহফিলে উপস্থিত থাকতে পারায় আমি কৃতজ্ঞ।’

পাঠকের মতামত

আলহামদুলিল্লাহ

M.A Jinnah
১২ জানুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ৫:১১ অপরাহ্ন

আলহামদুলিল্লাহ।

MD REZAUL KARIM
১২ জানুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ১:২৪ অপরাহ্ন

আলহামদুলিল্লাহ

ma Haque
১২ জানুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ১:০২ অপরাহ্ন

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

Bangladesh Army

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status