যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির ৫৪তম বিজয় দিবস উদযাপন

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং এর সহযোগী সংগঠনসমূহের উদ্যোগে ৫৪তম বিজয় দিবস উদযাপন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের নবন্না পার্টি সেন্টারে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের প্রতীক, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠনসমূহের উদ্যোগে ৫৪তম বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. মুজিবুর রহমান মজুমদার।

সভার শুরুতেই মৃধা মোহাম্মদ জসীম পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত এবং বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন। এ সময় স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের ও জুলাই ২৪ এর শহীদ, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। এ ছাড়া মরহুম আরাফাত রহমানের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক সুস্থতার জন্য দোয়া করা হয়।

সভায় স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। অংশগ্রহণকারীরা 'পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিবর্তন ১৯৪৭-১৯৭১', 'উত্তল মার্চ ১৯৭১', 'রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার সত্য ঘটনা', 'মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস', 'মুজিব বাহিনীর তথাকথিত মুক্তি যুদ্ধ ও ভারতীয় ষড়যন্ত্র', 'বামপন্থীদের মুক্তি যুদ্ধ' 'আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা', 'স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের হস্তক্ষেপ, লুটপাট ও হত্যাকাণ্ড' শীর্ষক আলোচনা হয়। সবার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদযাপন কমিটির আহবায়ক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। সভা যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও সাবেক ছাত্রনেতা এবং যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মোশারফ হোসেন সবুজ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক যুগ্ন সম্পাদকের পদমর্যাদা সাবেক ছাত্রনেতা মাকসুদুল হক চৌধুরী, সাবেক ছাত্রনেতা ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা মোতাহার হোসেনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সর্বাধিক মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে গঠিত এ অনুষ্ঠানে ব্যাপক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিল। সভার শুরুতে ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য সম্মাননা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে টেলিফোনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় অধ্যায় এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিজয় দিবসের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালে পালিয়েছে এবং ২০২৪ সালেও পালিয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ কখনোই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না এবং এটি একটি ফ্যাসিস্ট দল।

প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ত্যাগ ও সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন এবং প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।

মূল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মুক্তিযোদ্ধা কামাল সাঈদ মোহন, মুক্তিযোদ্ধা কাজী আজাহারুল হক মিলন, মুক্তিযোদ্ধা আনিসুজ্জামান খোকন মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা আলী ইমাম সিকদার, মুক্তিযোদ্ধা মাঈনউদ্দিন নাসের, জাকির এইচ চৌধুরী, ডা. জাহিদ দেওয়ান শামীম। সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা সোলাইমান ভূঁইয়া, ডা. আব্দুস সবুর, আবু সুফিয়ান, মুক্তিযোদ্ধা সুরুজ্জামান, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন, সৈয়দ এ আর ফারুক, মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, কাজী মনির হোসেন ও বাতেন সরকার। 
সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শহীদুল্লাহ তালুকদার, যুবদল নেতা ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ কাশেম, তারিক চৌধুরী দিপু, শহিদুল ইসলাম সিকদার, সাবেক ছাত্রনেতা পারভেজ সাজ্জাদ, মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া, নুরে আলম, আশরাফুজ্জামান আশরাফ, মাযহারুল ইসলাম মিরন, মনিরুল ইসলাম মনির, মো. মাসুদ হোসেন, মুস্তাক আহমেদ,  প্রফেসর আহসান উল্লাহ মিন্টু, আবুল কালাম,  রাশেদ রহমান,  সাইফুল ইসলাম সৈকত ভূঁইয়া, জান্নাতুল ফেরদৌস অশ্রু প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. মুজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তিনি বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন এবং তার ঘোষণার পরে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে এবং আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছিলাম। ৭৫ পরবর্তী ঘটনার পরে এদেশের মানুষ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্র পরিচালনা করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন এবং তিনি একটি আধুনিক বাংলাদেশ গঠনের কাজ যখনই শুরু করেন ঠিক তখনই একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র উদ্ধার ও বাংলাদেশকে একটি আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এদেশের গণতন্ত্রকে বিগত ১৬ বছর হত্যা করা হয়েছে এবং ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে গত ১৬ বছর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন এবং সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার হাসিনার পতন হয়েছে এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। বাংলাদেশের মানুষ একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামী দিনের একটি আধুনিক বাংলাদেশ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা মিজানুর রহমান মিল্টন ভূঁইয়াকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান।