শেষের পাতা
পাকিস্তানে সমঝোতার ইঙ্গিত
মানবজমিন ডেস্ক
২২ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার
পাকিস্তানে সরকার এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহ্রিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) মধ্যে সমঝোতা সংলাপে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। এমন জল্পনা- কল্পনার মধ্যে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ তার রাজনৈতিক শত্রু ও পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের সঙ্গে সমঝোতা সংলাপের জন্য উন্মুক্ত বলেই মনে হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন জিও নিউজ। এতে বলা হয়, সরকার এবং এস্টাবলিশমেন্ট স্বীকার করে পিটিআই একটি জনপ্রিয় দল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। এস্টাবলিশমেন্ট এ বিষয়ে পক্ষে মনে হলেও প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সরকার এখনও সতর্কতা অবলম্বন করছে। সূত্রগুলো বলেছেন, উভয়পক্ষের মধ্যে কথার লড়াই চললেও তারা আলোচনার জন্য উন্মুক্ত। এখনও আলোচনার পক্ষে কথাবার্তা, বিবৃতি দেয়া হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সংলাপ শুরু হয়নি। সবাই এটা মনে করেন যে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং দেশের ভিতর চলমান উত্তেজনা সমাধানে একসঙ্গে আলোচনায় বসা জরুরি। এক্ষেত্রে সরকার, পিটিআই এবং এস্টাবলিশমেন্টের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা সবাই সংলাপের জন্য প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে। উল্লেখ্য, পাকিস্তানের রাজনীতিতে বড় প্রভাব বিস্তার করে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। যেকোনো সংলাপের অগ্রগতি নির্ভর করবে তার ইঙ্গিত বা অনুমোদনের ওপর। এর আগে পিটিআইয়ের সঙ্গে তার মেয়ে ও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াহের সংলাপের সম্ভাব্যতা প্রত্যাখ্যান করেন। ওই সময় তিনি পিটিআই’কে একটি বিঘ্নসৃষ্টিকারী দল হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তবে এবার পিএমএলএন’র একজন সিনিয়র নেতা নিশ্চিত করেছেন যে, এবার ইমরান খানের সঙ্গে সংলাপে রাজি হতে পারেন নওয়াজ। কিন্তু সংলাপ নিয়ে সরকার তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে পিটিআই।
অন্যদিকে সরকারের বক্তব্য গণ-অসংহতি অথবা ডেডলাইনের হুমকির ভিতর সংলাপ হতে পারে না। এমন অবস্থায় সরকার ও পিটিআই’র মধ্যে সহসা যে সংলাপ শুরু হবে- এমন কোনো দৃশ্যমান লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে সংলাপের জন্য সরকার ও পিটিআই উন্মুক্ত বলে দাবি করা হচ্ছে। সূত্র বলেছেন, ২৬শে নভেম্বরের আগে পিটিআই এবং সুনির্দিষ্ট মহলের মধ্যে সংলাপ প্রক্রিয়া ইতিবাচকভাবে অগ্রসর হচ্ছিল। পিটিআই’কে এই বার্তা দেয়া হয়েছে যে, ইসলামাবাদের ডি-চকের র্যালি থেকে সরে এলে তবেই তা পিটিআই’র জন্য স্বস্তির হতে পারে। কিন্তু ২৬শে নভেম্বর রাতের বিক্ষোভ এবং এসব নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের প্রেক্ষিতে সৃষ্টি হয় বিরূপ পরিবেশ। এ সব সত্ত্বেও সব দলের মধ্যে একটি ঐকমত্য ছিল যে, অস্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক উত্তেজনা নিরসনে সংলাপ অপরিহার্য। এজন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছেন পিটিআই প্রধান ইমরান খান। বৃহস্পতিবার সাত সদস্যের ওই কমিটিকে তিনি আদিয়ালা জেলে ডেকে নেন। বর্তমানে এই কারাগারেই অবস্থান করছেন ইমরান। এ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে, বর্তমান যে রাজনৈতিক সংঘাতময় অবস্থা বিরাজমান তা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত চলতে পারে না। একইভাবে সরকার এবং এস্টাবলিশমেন্ট স্বীকার করে নিয়েছে যে, পিটিআই এখনও একটি জনপ্রিয় দল। তাদেরকে চাইলেই রাজনীতি থেকে মুছে ফেলা যাবে না। সরকার আরও অনুধাবন করতে পেরেছে যে, পিটিআই’র সঙ্গে পুনরেকত্রীকরণের ক্ষেত্রে ইমরান খানকে যুক্ত রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দলের সিদ্ধান্ত এখনও তার কাছ থেকে আসে। কিছুটা আসে ইমরান খানের স্ত্রী ও সাবেক ফার্স্টলেডি বুশরা বিবির কাছ থেকে। তাদেরকে আলোচনায় যুক্ত করা না গেলে সংলাপ কোনো ফল বয়ে না-ও আনতে পারে। এখনো সংলাপের পক্ষে এস্টাবলিশমেন্ট। কিন্তু সরকার সতর্ক অবস্থানে। তাদের আতঙ্ক- সংলাপের পর কারাবন্দি ইমরান খান ও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারেন। ফলে সংলাপের সফলতার জন্য মনে করা হয়, পিটিআই, বিশেষত ইমরান খানকে অবশ্যই আগামী দুই থেকে তিন বছরের জন্য রাজি হতে হবে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখা। বিনিময়ে আগাম নির্বাচন বিবেচনা করা যেতে পারে।
উভয়পক্ষকে সমঝোতায় আসতে হবে। সরকারের ম্যান্ডেটকে অবশ্যই স্বীকৃতি দিতে হবে পিটিআইকে। তারা অবিলম্বে নির্বাচন দেয়ার যে দাবি তুলেছে, তা বাদ দিতে হবে। সম্প্রতি সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন জাতীয় পরিষদের স্পিকার আয়াজ সাদিক। বলেছেন, তার অফিস এবং তার বাসা এ উদ্দেশ্যে সব সময় সহযোগিতা করতে চায়। স্পিকারের এ বক্তব্যের পর সূত্রগুলো জিও নিউজকে বৃহস্পতিবার বলেছেন, আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরুর জন্য পার্লামেন্টারি একটি কমিটি গঠন করা হবে। সংলাপের বিষয়ে তাদের পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্ব থাকবে। উপরন্তু ইমরান খানের দলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠানের ‘অগ্রগতি’ হচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা রানা সানাউল্লাহ।