শরীর ও মন
যদি মেরুদণ্ড বেঁকে যায়
ডা. মো. বখতিয়ার
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবারস্কোলিওসিস হলো:
একটি মেরুদণ্ডের এক ধরনের সমস্যা যেখানে জন্মগত বা বয়সজনিত ক্ষয়ের কারণে মেরুদণ্ড বেঁকে যায়, ফলে ঘাড়, কোমর ও মেরুদণ্ডসহ শরীরে বিভিন্নস্থানে ব্যথা এবং অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। এই রোগটি সাধারণত বয়ঃসন্ধি এবং বার্ধক্যে সম্ভাবনা বেশি হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এর কারণ পুরোপুরি নির্ণয় করা সম্ভব হয় না।
# স্কোলিওসিস সম্পর্কে কিছু ধারণা
স্কোলিওসিস সাধারণত পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি বয়ঃসন্ধিকালের মেয়েদের ছেলেদের তুলনায় ইডিওপ্যাথিক স্কোলিওসিস হওয়ার সম্ভাবনা ১০ গুণ বেশি
# বিশ্বের প্রায় শতকরা ৩ ভাগ মানুষ (২০ কোটি) প্রতিবছর স্কোলিওসিস এ আক্রান্ত হয় সারা বিশ্বে ধরনভেদে প্রতি ৪০ জনে ১ জন স্কোলিওসিস এ ভুগছেন
# এটি জীবনের প্রথম অথবা শেষ পর্যায় দেখা যায়। বাচ্চাদের মধ্যে, এটি ৮-১২ বছর বয়সের কাছাকাছি দেখা যায় এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এটি সাধারণত ৬০ বছর বয়সের কাছাকাছি দেখা যায়।
# শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ স্কোলিওসিসের কারণে শারীরিক এবং মানসিক সমস্যায় ভোগেন।
স্কোলিওসিস আক্রান্ত শতকরা ৮০ ভাগ নারী মাসিকের সমস্যায় ভোগেন।
# স্কোলিওসিস সাধারণ জনসংখ্যার তুলনায় হবার সম্ভাবনা অন্ধ ব্যক্তিদের ৫ গুণ বেশি এবং বধিরদের ৩.৭ গুণ বেশি প্রায় ৩০ ভাগ ক্ষেত্রে স্কোলিওসিস বংশগত হতে পারে।
# স্কোলিওসিস আক্রান্ত রোগীদের গড় আয়ু ১৪ বছর হ্রাস করে এবং মৃত্যুর হার ১৫% বৃদ্ধি করায়।
# স্কোলিওসিস আক্রান্ত রোগীদের প্রায় ১০০ ভাগই ঘাড় কোমর এবং মেরুদণ্ডের ব্যথায় ভোগে।
স্কোলিওসিসের ধরন:
বয়সভেদে স্কোলিওসিস ২ ধরনের হয়
Adult scoliosis (এডাল্ট স্কোলিওসিস)
Juvenile scoliosis: (জুভেনাইল স্কোলিওসিস)
কারণসমূহ
# ছোটদের ক্ষেত্রে প্রায় ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে স্কোলিওসিসের কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।
# বয়স্কদের ক্ষেত্রে স্কোলিওসিস মূলত মেরুদণ্ডের ক্ষয়জনিত কারণে হয়, কিছুক্ষেত্রে বয়স্কদের ক্ষেত্রেও কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।
# আমেরিকান এসোসিয়েশন অফ নিউরোলজিক্যাল সার্জনস-এর মতে, ১০% স্নায়বিক, ১৫% জন্মগত এবং ৬৫-৮০% ক্ষেত্রে স্কোলিওসিসের কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। আঘাত বা সংক্রমণ স্কোলিওসিসের আরেকটি কারণ।
স্কোলিওসিসের লক্ষণ সমূহ:
১। অসম কাঁধ, একদিকের কাঁধ আরেকদিকের থেকে বেশি উঁচু থাকা
২। একটি দৃশ্যমান বাঁকা মেরুদণ্ড।
৩। পাঁজর এর হাড় একদিকে বেশি দৃশ্যমান।
৪। অসম কোমর।
৫। একদিকে ঝুঁকে থাকা।
৬। শরীর একদিকে বেঁকে যাওয়া।
চিকিৎসা:
১। পর্যবেক্ষণ
২। ব্যায়াম
৩। ফিজিওথেরাপি
৪। ব্রেসিং
৫। সার্জারি ু শুধুমাত্র ৫-১০ ভাগ ক্ষেত্রে করা প্রয়োজন।
সার্জারি করলে স্কোলিওসিস ভালো হয় এবং রোগী ব্যথামুক্ত জীবন-যাপন করতে পারে।
স্কোলিওসিস এ রোগীর কি সমস্যা হতে পারে?
১। মেরুদণ্ডের আকৃতি পরিবর্তন।
২। শরীর এর আকৃতি পরিবর্তন।
৩। চলাফেরায় সমস্যা।
৪। ঘাড় ব্যথা।
৫। কোমর ব্যথা।
৬। মেরুদণ্ডের ব্যথা।
৭। শ্বাসকষ্ট।
৮। স্বাভাবিক কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া
চিকিৎসা বিলম্বে স্কোলিওসিস গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।
৯। ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে হার্ট এবং ফুসফুসের সমস্যা হয় যা মৃত্যুর সবচেয়ে সাধারণ কারণ।
১০। ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে খাদ্যনালী এবং হজম এ সমস্যা হয়
স্কোলিওসিস নিয়ে ভয় নয় বরং দরকার সচেতনতা। মনে রাখবেন
# স্কোলিওসিস নিরাময়যোগ্য।
# স্কোলিওসিস নিয়ে সচেতনতা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা গেলে সার্জারি করা প্রয়োজন নয়।
# আপনি যদি সন্দেহ করেন যে, আপনার সন্তানের স্কোলিওসিস আছে, প্রাথমিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা ভবিষ্যতে অস্ত্রোপচার এড়াতে সাহায্য করতে পারে।
# স্কোলিওসিস নিয়েও গর্ভধারণ করা সম্ভব।
# স্কোলিওসিস নিয়েও খেলাধুলা করা যায়।
লেখক: জনস্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক ও গবেষক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, খাজা বদরুদজোদা মডার্ন হাসপাতাল, সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।