নতুন বাংলাদেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব প্রয়োজন: মালয়েশিয়ার সাবেক মন্ত্রী

মালয়েশিয়ার প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিক সাবেক পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তান শ্রী ড. সৈয়দ হামিদ আলবার নতুন বাংলাদেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব এবং বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি পোষণের পরামর্শ দিয়েছেন। শনিবার  কুয়ালালামপুর গলফ অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবের কুরেশি রেস্টুরেন্টে মুসলিম ওয়ার্ল্ড রিসার্চ সেন্টার (এমডব্লিউআরসি) এবং ইনস্টিটিউট অব পলিসি, গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিজিএডি) এর উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক অবস্থা এবং আঞ্চলিক ক্ষেত্রে এর প্রভাব নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন তিনি।

আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আলবার বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করে বলেন, বাংলাদেশ একটি বিপ্লবী পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এবং এই মুহূর্তে দেশটির সামনে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা অত্যন্ত দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রয়োজন। মানুষ এখন আর অতীতে ফিরে যেতে চায় না। তারা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখে এবং এখনই তার মোক্ষম সময়। কিন্তু এটি কেবল আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জনগণের জীবনমানের পরিবর্তন আনতে হবে।

দৈনিক মানবজমিন প্রতিনিধির এক প্রশ্নের জবাবে এ কূটনীতিক বলেন, বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বকে কাজে লাগিয়ে আসিয়ানের সদস্যপদ অর্জন সম্ভব। তবে, এজন্য সঠিক কূটনৈতিক কৌশল এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান এবং চীন ও ভারতের সাথে সম্পর্কগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের ইতিহাস, বিশেষত ১৯৭১ সালের যুদ্ধের স্মৃতি, জাতীয় পরিচয়ের মূল ভিত্তি। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুনর্গঠন করার এখনই সময়। আসিয়ানের সদস্য হওয়ার জন্য কেবল আলোচনা নয়, বরং বাস্তব পদক্ষেপ প্রয়োজন। একটি আধুনিক এবং গতিশীল বাংলাদেশ গড়তে আন্তর্জাতিক ফোরামে শক্তিশালী উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া, সভাপতির বক্তৃতায় এমডব্লিউআরসির প্রেসিডেন্ট এবং ওআইসি স্টাডি গ্রুপের সেক্রেটারি জেনারেল ড. ইশারফ হোসেন বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যোগ্য নেতৃত্বে অচিরেই বাংলাদেশে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ সংসদীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সুশাসন ও অর্থনীতি অগ্রগতি নিশ্চিত হলে তা শুধু বাংলাদেশের জনগণের জন্যই কল্যাণকর হবে না। তা অবশ্যই আঞ্চলিক কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও যোগাযোগ স্থাপনে আঞ্চলিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এক্ষেত্রে আসিয়ানের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ স্থাপন ইতিবাচক হবে। মালয়েশিয়াকে বাংলাদেশের ভাতৃপ্রতিম বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তাগত যেকোনো ভূকৌশলগত প্রয়োজনে আসিয়ান অবশ্যই বাংলাদেশের পাশে থাকবে।

বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে যুক্ত হওয়া ইনস্টিটিউট অব পলিসি, গভর্মেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্টের রিসার্চ ডাইরেক্টর এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা হোছাইন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোকে স্বাগত জানিয়ে আগামীর বাংলাদেশকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রতিফলন হিসেবে ইতিবাচক মনে করে মোস্তফা হোছাইন বলেন, "প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন ভাবে যে পরিকল্পনা নিয়েছেন তা প্রশংসার দাবিদার এবং সংকট সমাধানে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের বাংলাদেশ সফর নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে বৈষম্যহীন এবং গণমানুষের রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে বর্তমান সরকার যে কয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে তা নিঃসন্দেহে আগামী দিনে ভালো ফলাফল নিয়ে আসবে। একই সাথে দেশের সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্যে যাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় অর্জন। এছাড়াও বিভিন্ন ধর্মের এবং গোত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সাথে সরকারের যে আলোচনা হয়েছে তা দেশের গণ্ডির বাইরেও প্রশংসা কুড়িয়েছে।"

মুসলিম ওয়ার্ল্ড রিসার্চ সেন্টারের প্রেসিডেন্ট, ড. ইশারফ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মালয়েশিয়ার সাবেক মিনিস্টার এন্ড ডেপুটি স্পিকার, সেন্টার ফর নিউ ইনক্লুসিভ এশিয়ার চেয়ারম্যান, তান শ্রী অং তে কেয়াত, আইসিস মালয়েশিয়ার প্রাক্তন ফেলো মি: বান নেগারা, ইউনিভার্সিটি অফ মালায়ার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. রয় এ্যান্তনি রোজার, সিঙ্গাপুর নান ইয়াং ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড.এম সাইদুল ইসলাম, ইসলামিক এনজিও অ্যাসোসিয়েশন মালয়েশিয়ার পেসিডেন্ট ও ন্যাশনাল ইন্টারফেইথ কাউন্সিলের সদস্য জামাল বিন শামছুদ্দিন, এমডব্লিউসির ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর দাতো বাহার উদ্দি আহমেদ, আইআইইউএমের অধ্যাপক ড. তাহিরি জান, মালয়েশিয়ার প্রখ্যাত কবি রাজা আব্দুল্লাহ, মাহাশা ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশি অধ্যাপক ড. আবুল বাশার, ইন্সটিটিউট অব পলিসির নির্বাহী পরিচালক, জাতীয় নাগরিক কমিটির গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলাউদ্দীন, বাংলাদেশ হাই কমিশনের কনস্যুলার বিভাগের কাউন্সেলর মো. মোরশেদ আলমসহ আমন্ত্রিত অতিথি।