প্রথম পাতা
কূটনীতিকদের মুখ বন্ধ করতে দূতাবাসগুলোতে চিঠি
কূটনৈতিক রিপোর্টার
২৯ জুলাই ২০২২, শুক্রবারঢাকাস্থ বিদেশি কূটনীতিকদের ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও রীতিনীতি’ মেনে চলার তাগিদ দিয়েছে সরকার। ঢাকার সব দূতাবাস, জাতিসংঘ কার্যালয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার অফিসে এ সংক্রান্ত অভিন্ন নোট ভারবাল পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই চিঠির একটি কপি পেয়েছে মানবজমিন। যেখানে ১৮ই জুলাই ডেটলাইন রয়েছে। অবশ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকার একাধিক কূটনৈতিক মিশন সূত্র বলছে, নোট ভারবালটি বিদায়ী সপ্তাহেই মিশনে মিশনে পৌঁছেছে। চিঠিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় আমরা সকলকে সম্মানের সঙ্গে এটা স্মরণ করাতে চাই যে, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ বা কাজে কূটনৈতিক সুবিধাপ্রাপ্তদের ১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশন এবং ১৯৬৩ সালের কনস্যুলার নীতি পুরোপুরি মেনে চলা উচিত। বিদেশি কূটনীতিকদের শিষ্টাচার মেনে চলার তাগিদ দিয়ে প্রায়শই এমন নোট পাঠানোর দাবি করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। নোট ভারবাল পাঠানোর আগে এবং পরে একাধিকবার গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপেও তিনি বিদেশিদের তৎপরতায় উষ্মা প্রকাশ করেন। কিন্তু বিদেশিদের মুখে কুলুপ আঁটতে মিশনে মিশনে চিঠি পাঠানোর এমন নজির বাংলাদেশে খুব একটা নেই বলে মনে করেন পেশাদার কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।
তারা বলছে, নজিরবিহীন এমন চিঠি বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে চিড় ধরাবে। বিশেষত: বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার প্রশ্নে সরব পশ্চিমা উন্নয়ন সহযোগীরা বিষয়টিকে মোটেও ভালোভাবে গ্রহণ করবে না, যা তারা এরইমধ্যে ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছে।
কিন্তু আমাদের এখানে সেটা অনেকেই মানেন না। জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, সমপ্রতি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা নির্বাচন কমিশনে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছেন, রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে হয়তো সরকার এটা চাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের মতে, সরকার হয়তো তার সক্ষমতা প্রকাশ করেছে এই চিঠির মাধ্যমে। বডি ল্যাঙ্গুয়েজে পরিবর্তন আনছে।
ঢাকায় কূটনীতিকদের উল্লেখযোগ্য তৎপরতা: গত ৪ঠা জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)-র সঙ্গে দেখা করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বে অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টভুক্ত (ওইসিডি) ১৪টি দেশের কূটনীতিক? বৈঠকের পর প্রতিনিধি দলের পক্ষে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ দেখতে চাই। এজন্য নাগরিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত, দেশের গণতন্ত্র আরও কার্যকর ও নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে যেকোনো প্রকার সহযোগিতা দিতেও আমরা প্রস্তুত।
ওইসিডি সদস্য দেশগুলো বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারাকে আরও শানিত করার মধ্য দিয়ে নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে সহায়তা করতে চায়। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তখন জানান, ওটা ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎ, নির্বাচন নিয়ে তারা কোনো পরামর্শ দেননি। তারা নির্বাচনের আইন-কানুন ও প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। এদিকে চিঠি পাওয়ার পরপরই ঢাকায় নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত এনি ভন লিউয়েন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি আওয়ামী লীগের সাাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন। টুইট বার্তায় ২৪শে জুলাই’র সেই বৈঠকের বিষয়টি জানান দেন জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার। বৈঠকের ছবি প্রকাশ করে তিনি লিখেন- স্বাগতিক দেশের রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কূটনীতিকদের প্রধান দায়িত্ব। প্রায় অভিন্ন টুইট করে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত এনি ভন লিউয়েন। তিনি লিখেন- স্বাগতিক দেশের পরিস্থিতি বোঝার জন্য এবং উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে একজন কূটনীতিক সকল অংশীদারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সব সময়ই চেষ্টা করেন।
এদিকে গত ১৭ই মার্চ ঢাকায় জার্মান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক হয় বিএনপি নেতাদের। গুলশানস্থ বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও শামা ওবায়েদ। ওই বৈঠকের আলোচনার বিষয় নিয়ে বিএনপি’র পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করা হলেও তাদের বক্তব্য নিয়ে পরে জার্মান রাষ্ট্রদূত অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বৈঠকের বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি জানান, নির্বাচন নিয়ে কোনো কথাই হয়নি। বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার বিষয়টিও তখন নাকচ করেন জার্মান রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, এটা যদি আমার কথা হয়ে থাকে, আমি নিজেই আমার কথা বলতে পারি। ওদিকে গত ২রা জুন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত তার বাসভবনে নাগরিক সমাজের ৫ জন প্রতিনিধিকে মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ জানান। ওই আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)-র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ব্রতীর শারমিন সোনিয়া মুর্শিদ।
সেখানে কি কি বিষয়ে কথা হয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ অভিযোগ করেন বিদেশি কূটনীতিকরা সারাক্ষণই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলেন। ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তারা কি ভারতে এটা পারবে? আমরা কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গান ফাইট বন্ধের কথা বলতে পারবো?
তারা পরাশক্তি, তাই তাদের ব্যাপারে বলা যাবে না। কিন্তু আমরা দুর্বল, তাই তারা আমাদের ব্যাপারে বলবে। তার মতে, বাংলাদেশে যখন যে বিরোধী দলে থাকে, তারা তখন কূটনীতিকদের কাছে ধরনা দেয়। সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে চায়। আর বিদেশিরাও সুযোগটি নেয়। অধ্যাপক ইমতিয়াজের মূল্যায়ন হচ্ছে- বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়েছে। একক কোনো উন্নয়ন সহযোগীর ওপর নির্ভরতা কমেছে। তাই বাংলাদেশ চাইলেই এখন বিদেশিদের নাক গলানো বন্ধ করতে পারে। হয়তো তারই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এই চিঠির মাধ্যমে।
পাঠকের মতামত
ইমতিয়াজ সাহেবেরা চুপ থাকতেন যদি সরকারের পক্ষে ভারতীয় লবিং জোরালো হত।
Diplomats are not bind and deaf. They see and hear. They report back to their authorities back home whatever they see and hear. It is foolish to think and expect otherwise.
সরকারের এখন এতো গায়ে লাগছে কেন? তারা ১৯৯৫-৯৬ সালে বিদেশী দুতাবাসে গিয়ে কম পানি ঘোলা করে নাই। নিজের বেলায় ষোল আনা, অন্যের বেলায় চিমটি কণা। বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন করার পরিস্থিতি সৃষ্টি করলেই ল্যাটা চুকে যায়। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিদেশী দুতাবাসে দেনদরবার করবে না, বর্তমান সরকারের নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন দিতে এতো ভয় কেন? তারা এইদেশে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়েছে, সুতরাং বর্তমান সরকার খুব দ্রুত নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই বিদেশী দুতাবাসগুলো আলাপ আলোচনা করার কোন সুযোগই পাবে না! কাজের কাজ না করে শুধু শুধু পাঁঠার কান মলে রাগান্বিত করে তোলা কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়! এইদেশের জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দিন, আর কোন দেনদরবার হবে না।
Blaming others is the easy thing to do. Seeing the writing on the wall is very hard to look at.
বিদেশীরা কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে কথা বলছেনা, তারা দেশের জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। নিজেদের ইচ্ছামত বাতিল করা তত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনুক একটি অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে দেশ এগিযে যাক তাহলে কেউ নাক গলাবেনা। শাসকদল চায় উন্নয়ন সহযোগীদের মুখ বন্ধ করে আবারো যেনতেন ভাবে ২০১৮ এর মত আরেকটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় আখড়ে থাকতে। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ চায় বিদেশীদের চাপে হলেও তত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসুক বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক।
সকল দেশের কূটনীতিকরা হস্তক্ষেপ করে না। যে সমস্ত দেশের উপর বাংলাদেশ বিভিন্ন ভাবে নির্ভরশীল, ঐ সমস্ত দেশের কূটনীতিকরা তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে। দেশকে আত্মনির্ভরশীল করুন, এই সমস্যা হবে না।
যেকোন দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে কুটনীতিকদের নাক গলান অবশ্যই শিষ্টাচার বহিঃভূত এবং সে দেশের আত্মমর্যাদার প্রতি আঘাত। এই ধরনের তৎপরতার সুযোগ আওয়ামীলীগই প্রথম তাদেরকে দিয়েছে। এক কথায়,খাল কেটে কুমির আনা।
কেউ অথৈজলে হাবুডুবু খেতে থাকলে হাতের কাছে যা কিছু পায় তাই ধরে কিন্তু তাতে লাভ হয় নয় না।
গনতন্ত্র আর মানবাধিকারের কথা বলে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা। মধ্য পাচ্যে এরা খোজে মৌলবাদীদের, ফিলিস্তিনে ইস্রাইলে এরা খোজে আত্নরক্ষার অধিকার।
ময়লা ঘাটাঘাটি করতে থাকলে দুর্গন্ধই শুধু বের হয়। দুর্গন্ধ বন্ধ করতে হলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে হবে। সরকার মনে করতে পারে অতীতের মতো ভারত অথবা চীন শেষ মুহূর্তের খেলা খেলবে। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গনতন্ত্র ও মানবাধিকারের দাবি থেকে পিছু হটে যাবে। কিন্তু, অবস্থা থেকে এমনটা মনে হয়না। ভবিষ্যতে আরো সময় আছে। নির্বাচনের বাকি দেড় বছর। তাই অপেক্ষা করতে হবে।
“আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের মতে, সরকার হয়তো তার সক্ষমতা প্রকাশ করেছে এই চিঠির মাধ্যমে। বডি ল্যাঙ্গুয়েজে পরিবর্তন আনছে। “ উনি এখন পুরাই সরকার পক্ষের। উনার কথা ধরবেন না কেউ।
বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়েছে। একক কোনো উন্নয়ন সহযোগীর ওপর নির্ভরতা কমেছে। তাই বাংলাদেশ চাইলেই এখন বিদেশিদের নাক গলানো বন্ধ করতে পারে। হয়তো তারই প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ নিজের নাকটি কেটে!
This should have done much earlier.
এটা সব সময় হয়ে আসছে। এবং হবে এটা বন্ধ করার ক্ষমতা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। এই বিনা ভোটের সরকার একেবারে ভেংগে পড়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর বেশ কয়েক জনের ভিসা বাতিল হয়েছে। আপনি কি জানেন না গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে আজকের প্রধানমন্ত্রী মোদির ভিসা যুক্তরাষ্ট্র বাতিল করেছিল।
The BAL government is getting the message. Foreign diplomats - Please keep up the pressure!