মত-মতান্তর
রিকশার গতি থেকে ব্যাটারির দুর্গতি
শায়ের খান
২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবারতিন চাকার বাহন বা থ্রি-হুইলারের ধারণা সম্ভবত প্রাচীন ঘোড়ায় টানা গাড়ি থেকে এসেছে। ঘোড়ার বদলে সামনে চাকা। চালাবে মানুষ। কিছু সুশীল টাইপ মানুষ একে অমানবিক বললেও আমরা তা বলি না। প্যাডেল চালিত হওয়ায় এতে রিকশাচালককে স্মার্ট লাগে, ওরা স্বচ্ছন্দে তা চালিয়ে মজাও পায়। বহু বাংলা মুভি’তে নায়ক রিকশা চালিয়ে সিগারেটে সুখটান দিয়ে রোমান্টিক গান গেয়েছে। নায়িকাকেও পেয়েছে। অমানবিক রিকশা হচ্ছে কলকাতার রিকশা। সামনে চাকা নেই। ঘোড়ার জায়গায় মানুষ রিকশা টানে। কলকাতা আমাদের কাছ থেকে রিকশার আইডিয়া নিতে পারে। তাদের আমরা তো দিতে কিছু বাকি রাখি নাই। এই আইডিয়াটাও দিতে পারবো।
রিকশা আবিষ্কার হয় জাপানে। প্রায় দেড়শ’ বছর আগে। জাপানে একে বলা হয় রিকি’শ। ঢাকায় এসে রিকি’শ হয়েছে রিকশা। ইংরেজিতে একে ট্রাই’সাইকেলও বলে। ট্রাই মানে তিন। বাই মানে দুই। বাই’সাইকেল দুই চাকার, ট্রাই’সাইকেল তিন চাকার।
ঢাকার সঙ্গে রিকশার রয়েছে নাড়ির সম্পর্ক। বহু বিদেশির ঢাকায় প্রথম ভালোলাগা হচ্ছে এয়ারপোর্ট থেকে নেমে চারিদিকে জলতরঙ্গের আওয়াজ। জলতরঙ্গ মানে রিকশার টুংটাং।
একসময় মধ্যবিত্তের অভিজাত বাহনই ছিল রিকশা। আমার এক বন্ধুর বোনের প্রেম থেকে বিয়ে হয়েছিল এক ‘রিকশা ঘটনা’য়। আপার ওড়না রিকশার চাকায় জড়িয়ে যাচ্ছে দেখে পাশের রিকশার এক হ্যান্ডসাম ছেলে বলেছিল- এক্সকিউজ মি, আপনার ওড়না ঠিক করেন। ব্যস, ফোঁস করে ওঠেন আপা। তার ওড়না নিয়ে কেন সেই ছেলের চিন্তা? ছেলেটি শান্তভাবে রিকশার চাকায় ওড়না জড়ানোর ভয়াবহতা বোঝালো। সে ছিল মেডিকেলের স্টুডেন্ট। এরপর মন দেয়া-নেয়া। বাসার সবার পছন্দ হওয়ায় আপার বাকি জীবনের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন ডক্টর পল্টু ভাই।
থ্রি-হুইলার আরেকটিও ছিল। যান্ত্রিক। উদ্ভট শব্দে কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে দ্রুত বেগে চলতো। ধোঁয়া ছড়ালেও নাম ছিল কিউট- বেবি ট্যাক্সি। ২০০১-এ জোট সরকার দায়িত্বে এসেই বেবি ট্যাক্সি বাদ দিয়ে সিএনজিচালিত থ্রি-হুইলার আনে। পরিবেশবান্ধব। সিএনজি হচ্ছে ‘কনসেন্ট্রেটেড ন্যাচারাল গ্যাস’-এর সংক্ষেপ।
আগে ঢাকায় জনে জনে গাড়ি ছিল না। মানুষ কম থাকায় পাবলিক ট্রান্সপোর্টও কম ছিল। তাই একই রাস্তায় রিকশা আর অন্য গাড়ি চললে সমস্যা হতো না। যখন সমস্যা হলো, বড় রাস্তাগুলোয় রিকশা নিষিদ্ধ হলো। এই রাস্তাগুলোর নাম হলো ‘ভিআইপি রোড’। এই নামে আমার আপত্তি আছে। এতে দেশের বেশির ভাগ দুর্বৃত্ত ভিআইপি হয়ে যায় আর রিকশায় চড়া সৎ মানুষটা হয়ে পড়েন নন-ভিআইপি। ভিআইপি রোডকে মোটর রোড, ইঞ্জিন রোড বা স্পিডি রোড জাতীয় কিছু ডাকা যেতে পারে।
রিকশার স্পিডেই হয়েছে সমস্যা। গড়ে তুলেছে বৈষম্য। রাস্তার পাশে রিকশার বাই-লেইনগুলোয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে রিকশাচালকরা বিরক্ত হয়ে যেত। খুঁজতো চোরাগোপ্তা বড় রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশের লাঠিচার্জে সেই পথ আরামদায়ক হতো না।
‘ক্রিয়েটিভ পটেনশিয়াল’ দুটো ইংরেজি শব্দ। এর অর্থ- মানুষের সৃষ্টিশীলতা বিকাশের সক্ষমতা। ক্রাইসিসেই সেটার বিকাশ হয়। বোঝাচ্ছি। বহু আগে মানুষ কালির দোয়াতে কলম চুবিয়ে চুবিয়ে লিখতো। কালির দোয়াতেই কলমটা থাকতো। একজনের মাথায় এলো- যেখানেই কালির দোয়াত, সেখানেই কলম। তাহলে কলমের মধ্যে কালি না কেন? দোয়াত হাতে নিয়ে ছুটোছুটির ঝামেলা বাদ। ব্যস, আবিষ্কার হলো ফাউন্টেন পেন। এই যে উদ্ভাবনের সক্ষমতা- এটাই ক্রিয়েটিভ পটেনশিয়াল।
আমাদের রিকশা বিজ্ঞানীরা বসে থাকবে কেন? তাদের ক্রিয়েটিভ পটেনশিয়াল রিকশায় ব্যাটারি জুড়ে বানিয়ে ফেললো ‘ব্যাটারি রিকশা’। চালাতে আরাম, ছুটেও ঝাক্কাস। কিন্তু তিন চাকার রিকশা উঁচু হওয়ায় অনেক ব্যাটারি রিকশা গতির চোটে উল্টে পড়লো। কিন্তু গতির দুর্গতিও থামাতে পারেনি। ছোট হাইটের বিভিন্ন ডিজাইনের রিকশা বের হলো। এগুলোর সবই অবৈধ। শুরু হলো প্যাডেল আর ব্যাটারি’র বৈষম্য। তা থেকে একের পর এক অস্থিরতা আর নৈরাজ্য।
এর সমাধান আছে কি? আছে। ক্রিয়েটিভ পটেনশিয়াল আমাদেরও আছে। আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে।
প্রায় ৩ দশক আগের কথা। বুয়েটের একদল ছাত্র গবেষণা করে বিশেষ ধরনের এক রিকশার ডিজাইন করেছিল। স্পেশাল গিয়ারের এই রিকশা চালাতে একেবারেই কষ্ট হয় না। প্যাডেলে পা দেয়ামাত্র ছুটে দুরন্ত গতিতে। এমনকি উঁচু জায়গায় উঠতেও রিকশাচালককে নামতে হবে না, সহজেই সিটে বসে প্যাডেল মেরে উঠে যাবে। এটা নিয়ে পত্রিকায় তখন অনেক লেখালেখিও হয়েছিল। অনেকে মনে করেন, যান্ত্রিক বাহনের সিন্ডিকেটের কারণে এই চমৎকার রিকশাটি আর আলোর মুখ দেখেনি। এই রিকশা যদি আবারো নিরীক্ষা করে রাস্তায় নামানো যায়, তবে প্যাডেল আর ব্যাটারি রিকশা- দুটোই উধাও হবে। ওরা সবাই চালাবে গিয়ারের রিকশা। এই রিকশা খুবই পরিবেশবান্ধব। পরিবেশের কথা বললেই উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান চলে আসেন। উনার চোখ সুন্দর, সম্ভবত দৃষ্টিও তীক্ষ্ণ। তিনি এদিকে দৃষ্টি দিতে পারেন।
লেখক-নাট্যকার-ফিল্মমেকার
রিক্সা। দরিদ্র বা দারিদ্রতা থেকে বাঁচার জন্য মানুষকে এখন পর্যন্ত সব সময় সংগ্রাম করতে হচ্ছে। যাদের আছে তাদের কথা বাদই দিলাম । ১৮-১৯ কোটির মধ্যে তিন চার কোটি লোক দারিদ্র সীমার নিচে রয়েছে। পত্রিকা যা বলে। এদের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করা উচিত। তাহলে ভবিষ্যতে হয়তোবাএই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে।।
বিকল্প কিছু নেই। তাহলে কি আর করা। রিক্সার দরকার আছে। তবে।।
ই-রিক্সা চালু করলেতো ঝামেলা চলে যায়,ভারত, চিনে ই-রিক্সা চালু আছে।
ব্যাটারি রিক্সার পার্টস আমদানি নিষিদ্ধ করা হোক। যখন খুচরা যন্ত্রপাতি পাবে না তখন এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে এই বাহন।