ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

নির্বাচন পরে, সরকারের অগ্রাধিকার সংস্কারে

স্টাফ রিপোর্টার
১০ নভেম্বর ২০২৪, রবিবারmzamin

দায়িত্ব গ্রহণের তিন মাস পার করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সময়ে নির্বাচন আয়োজনের দৃশ্যত কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। দায়িত্ব নিয়েই সরকার সংস্কার কার্যক্রমের পরিকল্পনা প্রকাশ করে। গঠন করা  হয় ১০টি কমিশন। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল দায়িত্ব নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে শুরুতেই কিছু্‌ বলা হয়নি। তিন মাস পরও এ নিয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই। গঠন হয়নি নির্বাচন কমিশন। কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সংস্কারে গুরুত্ব দিয়ে চলায় ইতিমধ্যে মানুষের মাঝে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে নানা ক্ষেত্রে। সরকারের উপদেষ্টা, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করাও নির্বাচন এবং সংস্কার ইস্যুতে নানা কথা বলছেন। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের মাঝে সংশয় তৈরি করছে। এক এগারোর মতো মাইনাস চেষ্টা হতে পারে এমন আশঙ্কাও করছেন কেই কেউ। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দলগুলোর নেতারা বলছেন, অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেখানে ৯০ দিনের মধ্যে পুরো নির্বাচন আয়োজন করে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে পেরেছে সেখানে বর্তমান সরকার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপই ঘোষণা করছে না কেন? দলগুলোর নেতারা জোর দিয়ে বলছেন, টেকসই সংস্কারের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া সংস্কার টেকসই হবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের সুপারিশ রেখে যেতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং সংস্কারগুলো তারা করতে পারে। কিন্তু এখনো দৃশ্যত এমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা চালানো, অতীতে রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুটপাটকারীদের গ্রেপ্তার এবং বিচারে তেমন কোনো অগ্রগতিও দৃশ্যমান হয়নি। প্রশাসন স্থবির। পুলিশ প্রশাসন কার্যকর করা যায়নি। বাজারে এখনো আগের মতোই মানুষের বোবাকান্না। এই পরিস্থিতি যে সহসা ভালো হবে তারও কোনো লক্ষণ নেই। এতে মানুষের মাঝে হতাশা তৈরি হচ্ছে। যে পরিবর্তনের আশা নিয়ে মানুষ জীবন দিয়েছে, আহত হয়েছে তার প্রতিফলন  দেখা যাচ্ছে না। 

রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা মনে করছেন, সরকার নির্বাচিত নয় বলে অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারছে না। নির্বাচিত সরকার না এলে অনেক সমস্যারই সমাধান মিলবে না। 
এসব যুক্তি সামনে রেখেই দলগুলোর পক্ষ থেকে নির্বাচনের বিষয়ে চাপ দেয়া হচ্ছে। বক্তৃতা, বিবৃতি ও সমাবেশের মাধ্যমে তারা সরকারকে এই বার্তা দিতে চাইছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সর্বশেষ শুক্রবার বিএনপি ঢাকাসহ সারা দেশে যে বড় শোডাউন করেছে এটিও সরকারের জন্য একটি বার্তা। 
গতকাল কৃষক দলের এক আয়োজনে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনি প্রসঙ্গক্রমে বাজার সিন্ডিকেটের বিষয় আনেন। বলেন, এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে প্রকৃত জনপ্রতিনিধি প্রয়োজন। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই সেটা সম্ভব। 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও শনিবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সংস্কারই সফল হতে পারে না। জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ সম্ভব একটি নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে। 
ওদিকে সরকারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত সংস্কারেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে মনে করছে দলগুলো। সরকারের তরফে দেয়া বক্তব্যেও এটা অনেকটা স্পষ্ট। সর্বশেষ বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এক অনুষ্ঠানে এ প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিএনপি’র দাবি অমূলক নয়, তবে জনগণ আগে সংস্কার চায়। 
সরকারের এমন মনোভাবের সঙ্গে কিছু দলেরও সমর্থন রয়েছে। নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর তেমন কোনো তাড়াহুড়ো দেখা যাচ্ছে না। দলটির নেতারাও এ নিয়ে কৌশলী বক্তব্য দিচ্ছেন। নূরুল হক নুরের গণঅধিকারও নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কথা বলছে। 

সর্বশেষ গতকাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, শুধু নির্বাচনের জন্য দুই হাজার মানুষ জীবন দেয়নি। অর্ধ লাখ মানুষ রক্ত দেয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সিস্টেমগুলোর যৌক্তিক সংস্কার করে অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনে যাওয়া উচিত। শনিবার দুপুরে সিলেটে এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। 

সারজিস আলম বলেন, গত ১৬ বছর, এমনকি ৫৩ বছর ধরে সংবিধান এই বাংলাদেশকে, মানুষকে পাঁচ বছরের জন্য ‘জনতার সরকার’ উপহার দিতে পারেনি। পাঁচ বছর পরপর অনেক বড় বড় ইশতেহার দিয়ে সরকার নির্বাচন করে, ক্ষমতায় আসে। কিন্তু ক্ষমতায় আসার কয়েক দিনের মধ্যে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তারা ভুলে যায়, তারা কী ইশতেহার দিয়েছিল। তারা ভুলে যায়, তারা জনতার সরকার। নির্বাচন প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা বলছি না রাষ্ট্রের সবকিছু সংস্কার করে নির্বাচনে যান। আমরা এটাও বলছি না আগামী পাঁচ-ছয় বছর সংস্কার করেন। কিন্তু সংস্কারের জন্য ন্যূনতম একটা যৌক্তিক সময় লাগবে।
ওদিকে এতদিন নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের তরফে কৌশলী বক্তব্য দিলেও গতকাল দলের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের অবশ্য সরাসরিই কথা বলেছেন। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশনসহ সকল সেক্টর দ্রুত সংস্কার করে নির্বাচন দিন। নির্বাচন নিয়ে কালক্ষেপণ করবেন না। এই কালক্ষেপণ জনগণ মেনে নেবে না। 
শনিবার লক্ষ্মীপুরে দলীয় এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বলেন, এখনো দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। বাংলাদেশের আকাশে কালো মেঘ দেখা যাচ্ছে। কোনো ষড়যন্ত্রের কাছে দেশের গণতন্ত্রকে ব্যাহত হতে দেয়া হবে না। ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবিলা করা হবে। 

কৃষক দলের সভায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও নেতাকর্মীদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। বিষয়টি তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরও অবহিত করতে নির্দেশনাও দিয়েছেন। 
নির্বাচন নিয়ে সরকারের রোডম্যাপ ঘোষণা না করার সঙ্গে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠনগুলোর নেতাদের আলাদা রাজনৈতিক  ও নাগরিক প্ল্যাটফরম গঠন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা আছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে এসব সংগঠনের কী ভূমিকা হয় তাও স্পষ্ট নয়। তারা দল গঠন করে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন এমন আলোচনাও আছে। এ ছাড়া এক এগারোর সময় দুই প্রধান দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে মাইনাস করতে কিংস পার্টি তৈরির যে তৎপরতা ছিল সেই আশঙ্কাও আছে দলগুলোর। এ ছাড়া সরকার দুর্বল ও নমনীয়ভাবে দীর্ঘ সময় রাষ্ট্র পরিচালনা করলে সামনে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে বলেও নেতারা মনে করছেন। এসব কারণেই নির্বাচন আয়োজনে সরকারকে গুরুত্ব দিতে চাপ দিচ্ছেন তারা।  

পাঠকের মতামত

অবশ্যই আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন। কারন নির্বাচিত সরকার নিজেদের সুবিধামতো সংস্কার করে, যা আমরা বিগত সকল সরকারের আমলে দেখেছি।

Ataur Rahman
১০ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১১:০১ অপরাহ্ন

সংষ্কার, সংষ্কার, সংষ্কার, আমরা সবাই যখন বৈষম্য বিরোধী আসুন না সবাই একযোগে দাবি জানাই ঃ স্বাধীন( ২.০) দেশের সকল মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জেম এর জন্য সরকারি কর্মকরতাদের মতো একটি পে স্কেলে বেতন, ভাতাদি প্রদান করা হউক। অন্যান্য ধর্মের বেলায় ও একই নিয়ম প্রযোজ্য।

no name
১০ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৭:০২ অপরাহ্ন

সংস্কার করতে কয় দশক লাগবে?? এদের উদ্দেশ্য শেষ পযন্ত ভারতের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী লীগকে ক্ষমতায় বসানো।

মিম মাসাদ
১০ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৬:২৯ অপরাহ্ন

At first reformation, than election

Zaman
১০ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ২:১৯ অপরাহ্ন

At frist need reformation and then Election.

Zia
১০ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১২:২৭ অপরাহ্ন

Should give a time for reform in all sector. We are frusteted for all political parties activities.

Md.Shahidullah
১০ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১০:২০ পূর্বাহ্ন

অবশ্যই আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন। কারন নির্বাচিত সরকার নিজেদের সুবিধামতো সংস্কার করে, যা আমরা বিগত সকল সরকারের আমলে দেখেছি।

Shakhaoat Hossain
১০ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৯:৫৫ পূর্বাহ্ন

নির্বাচনের পর ক্ষমতায় গিয়ে , জনস্বার্থে কোন সংস্কার কখনও হয়নি -বরং ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য , মুল সংবিধানকে কাটা ছেড়া করা হয়েছে ।

কাজী মুস্তাফা কামাল
১০ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৮:৪৮ পূর্বাহ্ন

সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দিলে নব্য ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে। সতরাং রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে সংস্কার চাই। আমরা আমাদের দেশটাকে বারবার ব্যার্থ হতে দিতে পারিনা।প্রয়োজনে এ সরকারের রূপকে বিপ্লবী সরকারের রূপ দেয়া যেতে পারে।তথাপিও সংস্কার চাই।

মোঃ নুরুজ্জামান
১০ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৭:০৭ পূর্বাহ্ন

মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে আগেও হয়েছে। নিজের টাকা ব্যাংক থেকে তুলতে পারছেনা, দ্রব্যমুল্য আমাদের দিশেহারা করে দিচ্ছে প্রতিদিন। লোডশেডিং এ নাকাল জাতি। সংস্কারও চলুক নির্বাচনের রোড ম্যাপও ঘোষনা হউক। মানুষের অস্থিরতা কাটুক।

Sohidul islam
১০ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১২:১৪ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status