প্রথম পাতা
সার্ভিস চার্জ নিলেও ভ্যাট ফাঁকি সাড়ে ৮ কোটি টাকার
পিয়াস সরকার
৯ নভেম্বর ২০২৪, শনিবারবিনামূল্যের পাঠ্য বই নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। বইয়ের মান, ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছাপার সঙ্গে লুটপাট হয়েছে সরকারি অর্থ। অর্থ লুটের ঘটনা ঘটলেও সময়মতো পৌঁছায়নি পাঠ্যপুস্তক। অনেক স্থানে বই গেছে তিন থেকে চার মাস পর।
২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় ৩৪ কোটি পাঠ্য বই ছাপানো হয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৪৫ কোটি ৬৪ লাখ ২৮ হাজার ৭৭৩ টাকা। পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের দায়িত্বে থাকা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্তারা (এনসিটিবি) সার্ভিস চার্জের বিল নিয়েছেন ঠিকই কিন্তু এ থেকে কেটে রাখা হয়নি ভ্যাটের অংশ। যার কারণে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি ৪৫ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬৩ টাকা। আওয়ামী লীগের শাসনামলেই এই দুর্নীতির বিষয়টি উঠে আসে বাংলাদেশ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের অধীন শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর। সংস্থাটি ১১ খাতে দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে। এতে দেখা যায় সার্ভিস চার্জের টাকা পকেটে পুরেছেন এনসিটিবি’র সাবেক কর্মকর্তারা। এসবের নেতৃত্ব দিতেন এনসিটিবি’র সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মশিউর রহমান।
এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল চক্রটি যে এক কর্মশালার জন্য ব্যয় দেখানো হয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা। শিক্ষক সহায়িকা কর্মশালা যার আদতে কোনো প্রয়োজনই ছিল না। এসব প্রশিক্ষণের নামে একাধিক কর্মশালা করে হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। চলতি বছরে হওয়া ১০টি কর্মশালায় টাকা খরচ দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৪২ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮৬ টাকা। এপ্রিল থেকে ৪ঠা আগস্ট পর্যন্ত হয় এসব কর্মশালা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের অবস্থান খারাপ দেখে আগস্টের প্রথম চারদিনে কর্মশালার খরচ দেখিয়ে উঠিয়ে নেয়া হয় প্রায় ১১ লাখ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনসিটিবি কর্মকর্তা বলেন, ভ্যাট ফাঁকির অডিট আপত্তির পরও যোগ্য জবাব দেয়নি সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মশিউর রহমানের সিন্ডিকেট। এমনকি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সান্নিধ্যে থেকে অডিট আপত্তির জবাবদিহিতা এড়িয়ে যাওয়া হয়। এরপরও হওয়া কর্মশালাগুলোতেও ভ্যাট কাটা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, বই ছাপানোর কাজে গঠিত বিভিন্ন কমিটিকে অতিরিক্ত হারে ৬৪ লাখ ৭২ হাজার ৩০ টাকার সম্মানি দেয়া হয়েছিল। যা হয়ে উঠেছিল ওপেন সিক্রেট। কিন্তু সে সময় কেউ কিছু বলেনি। এই অতিরিক্ত সম্মানীর প্রশিক্ষণ ২০২২-২৩ অর্থবছরে রোডম্যাপে ছিল না। এরপরও প্রাপ্যতা না থাকার পরও সম্মানী ও অন্যান্য ভাতা দেয়া হয়। আবার প্রশিক্ষণ-কর্মশালায় ভাতা ও নির্দিষ্ট সীমার বাইরে অতিরিক্ত অর্থ অগ্রিম দেয়ায় প্রায় ২৫ কোটি টাকার অনিয়ম হয়।
২০২৩ শিক্ষাবর্ষের বইয়ের মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা একজন লেখক বলেন, আমরা প্রশিক্ষণে যেতাম। সেখানে আমাদের জন্য একটা সম্মানী বরাদ্দ থাকতো। সেটা নিতাম। কিন্তু এতে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছিল কিনা তা আমি জানি না, জানার কথাও না।
সরকারি খাতের বিপুল পরিমাণ টাকা খরচের গরমিলের এই খতিয়ান তলব করেছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর। জরুরিভাবে এনসিটিবি’র গত ১৫ বছরের বিভিন্ন খাত উপ-খাতে যে টাকা খরচ হয়েছে তার একটি পূর্ণাঙ্গ হিসাব চেয়ে এনসিটিবিকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রিয়াজুল হাসান বলেন, বিগত সরকারের আমলে নানা ধরনের আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে। এগুলো আমরা বের করতে কমিটি গঠন করেছি। উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি আর্থিক অনিয়ম বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রদান করে উপদেষ্টার দপ্তরে পৌঁছে দিতে।