প্রথম পাতা
যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন হলে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব হবে
স্টাফ রিপোর্টার
৮ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবারস্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখতে প্রয়োজনে বিএনপি আরও বেশি শক্তিশালী আন্দোলন করবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শেরেবাংলা নগরে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের পতিত সরকার বিএনপিকে ধ্বংস করতে সব সময়ে ষড়যন্ত্র করেছে, নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন করেছে। এই আওয়ামী লীগ প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে এবং সহস্রাধিক মানুষকে গুম করে, হাজার হাজার লোককে হত্যা করে, নির্যাতন করে তারা এখানে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে, একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। কিন্তু আল্লাহ’র অশেষ রহমতে ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এই আধিপত্যবাদকে পরাজিত করা হয়, ফ্যাসিস্টদের পরাজিত করা হয়।
তিনি বলেন, আজকের এই দিনে আমরা ৭ই নভেম্বরের প্রধান নায়ক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে এসে জিয়ারত করেছি, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছি। আমরা আজকে শপথ নিয়েছি যে, আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সবসময়ই আধিপত্যবাদকে রুখে দেবো, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখবো এবং এর জন্য প্রয়োজনে আরও বেশি শক্তিশালী আন্দোলন করবো।
ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে সুসংহত করতে সমগ্র মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে বলে প্রত্যাশা করেন বিএনপি মহাসচিব।
সরকারের তিন মাস অতিক্রান্ত হয়েছে- তারা কোনো কার্যকর ভূমিকা রেখেছে কি- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অবশ্যই অবশ্যই রাখছে। কারণ তারা অনেকগুলো কাজ করেছে এবং করছে। আমরা বিশ্বাস করি, তাদের যদি আমরা সকলে সহযোগিতা করি এবং উপযুক্ত সময়ে একটা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে তারা নির্বাচন দিতে সক্ষম হয় তাহলে এই জাতির সামনে যে চ্যালেঞ্জ আছে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বরের জিয়াউর রহমানের ভূমিকার পটভূমি তুলে ধরে ফখরুল ইসলাম বলেন, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস ৭ই নভেম্বর এ দিনে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সৈনিক এবং জনতা তারা অভ্যুত্থানের মাধ্যমেই দ্বিতীয়বারের মতো আধিপত্যবাদ ও তাদের দোসরদের পরাজিত করে এবং যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল তাদের পরাজিত করে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে সামনে নিয়ে এসে তারা নতুন এক রাজনীতির সূচনা করে। সেই রাজনীতি ছিল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের রাজনীতি, সেই রাজনীতি ছিল স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রাজনীতি, সেই রাজনীতি ছিল বাংলাদেশের আধিপত্যবাদ, গণতন্ত্রের শত্রুদের পরাজিত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতি।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারই ধারাবাহিকতায় আমরা দেখেছি, ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর সিপাহী- জনতার বিপ্লবের পরে জিয়াউর রহমান দায়িত্ব পাবার পর পুরো অবস্থাকে পরিবর্তন করলেন, তিনি এক দলীয় শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন করে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে আসলেন। তিনি রুদ্ধ-বদ্ধ অর্থনীতিকে মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে পরিণত করেন এবং বাংলাদেশে একটা সম্ভাবনাময় অবস্থার সৃষ্টি করেন। জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের যে দর্শন সেটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে দীর্ঘকাল তারা সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ক্ষমতায় গেছে তিনবার।
সকাল ১১টায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র নেতা শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, রফিকুল ইসলাম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাইফুল আলম নিরবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে প্রয়াত নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তারা নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন।
এরপর আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, তানভীর আহমেদ রবিন, মোস্তফা জামানের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে নেতৃবৃন্দ প্রয়াত নেতার কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।
৭ই নভেম্বর উপলক্ষে ভোরে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় অফিসে দলীয় পতাকা উত্তালন করা হয়। দিবসটিকে সামনে রেখে প্রকাশ করা হয়েছে জিয়াউর রহমান ছবি সংবলিত পোস্টার।