বাংলারজমিন
কলাপাড়ায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী মহিববুরের সম্পদের পাহাড়
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
২ নভেম্বর ২০২৪, শনিবারনিতে আসিনি দিতে এসেছি, শিল্পপতির পরিচয়ে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। এলাকায় শিল্পপতি বংশের সন্তান হিসেবে পরিচিত। সম্পদ নিয়ে কেউ প্রশ্ন করলে তিনি এ পরিচয় দিতেন। জড়িয়েছেন বিভন্ন ব্যবসায়। ১১৪ পটুয়াখালী-৪ আসনের আওয়ামী লীগের দলীয় সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান ২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনী ব্যবহার করে খাস জমি দখল, টেন্ডারবাজি, সাগরে মাছ ধরা জেলেদের কাছ থেকে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্নভাবে করেছেন টাকার পাহাড়।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন’র ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে উল্লেখ করেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মহিব ও তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার রেখা ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালে ৩৫টি সাব-কবলা দলিলে ৫০ একর জমি খরিদ করেছেন। এ ছাড়া নামে-বেনামে রয়েছে অর্ধশত একর জমি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অবৈধ সম্পদ আয়ের সিন্ডিকেট ছিল মহিব। সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যমে করতেন নিয়োগ বাণিজ্য, কোথাও নিজেই তদারকি করতেন। শিক্ষক নিয়োগে অন্তত ২০০ কোটি টাকা কামিয়েছেন। কলাপাড়া-রাঙ্গাবালি শীর্ষ এসব নিয়োগ বাণিজ্য করতেন। ২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত হয়ে দলীয় কর্মসূচি পালনের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের করেছেন জিম্মি। দলীয় পদ বাণিজ্য করে কামিয়েছেন অঢেল টাকা। সূত্রে জানা গেছে, মহিব ২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত হয়ে টাকা আদায়ের জন্য দলীয় নেতাদের ব্যবহার করতেন। প্রথম দিকে কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস,এম,রাকিবুল আহসানকে ব্যবহার করতেন। তার সঙ্গে মতের অমিল দেখা দিলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব তালুকদার, সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতিসহ নেতাকর্মী, স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কাজে লাগিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এক সহচর জানান, এতিমখানা এমপি মহিবের বাসভবনে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক কার্যালয়ে রাত ১১টার পর নেতাকর্মীদের সেখান থেকে সরিয়ে দিয়ে তার ব্যক্তিগত ব্যবসায়ী কাজ কর্ম করতেন। এরমধ্যে এমপি’র বেশি বিশ্বাসী যাতায়াত ছিল কলেজ শিক্ষক মো.শাহ আলম, ও স্কুল শিক্ষক মো. হারুন অর রশিদ। তার বড় ব্যবসা ছিল, পায়রা সমুদ্রবন্দর ঠিকাদারদের কাছ থেকে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন। মহিবের নির্বাচনী এলাকায় বছরে টিআর ও কাবিখা প্রকল্পে বরাদ্দ আসতো তিনবার। এ বাবদ বরাদ্দ ছিল ৬ কোটি টাকা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন সামজিক সংগঠনকে কিছু টাকা বরাদ্দ দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে মাস্টার রুল জমা দেখিয়ে শীর্ষভাগ নিজে আত্মসাৎ করেছেন। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির দুই উপজেলায় বরাদ্দ প্রতি বছর ৪ কোটি টাকা। এ বরাদ্দের ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে ৮০ ভাগ টাকা হাতিয়ে নিতেন মহিব ও তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার রেখা। ৬ বছরে তিন খাত থেকে প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কলাপাড়া-রাঙ্গাবালি অর্ধশতাধিক হাটবাজার ঘাট নিয়ন্ত্রণ করতেন মহিব ও তার সহযোগী নেতাকর্মীরা। অন্যদের সরিয়ে দিয়ে এগুলো স্বল্প মূল্যে নিলাম নিয়ে নিজে সব লোকজন বসিয়ে তার শাসনামলে শতকোটি টাকা কামিয়েছেন। এ ছাড়া বাবলাতলা বাজার সংলগ্ন খাস জমি দখল করে অর্ধশত দোকানঘর ও মার্কেট করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছেন। এ ব্যাপারে মরহুম একেএম খালেকুজ্জামান জামাল খলিফার পুত্র মো. প্রিন্স খলিফা অভিযোগ করে বলেন, ভূমিহীন কৃষক আদম আলীর ১৯৬৭-৬৮ সালে ধুলাসার মৌজার ৩৬৬ নম্বর খতিয়ানে ৩.০০ একর জমি বন্দোবস্ত প্রাপ্ত হয়। পরে আদম আলী মৃত্যুবরণ করেন। ওয়ারিশ স্ত্রী মোসা.জায়েদা খাতুন, কন্যা সেফালী বেগমপুত্র মো. খলিল নগদ টাকার প্রয়োজনে ২০১০ সালে ২.৩৭ একর জমি একেএম খালেকুজ্জামান জামাল খলিফার নিকট বিক্রি করেন। একেএম খালেকুজ্জামান জামাল খলিফা ক্রয়কৃত জমিতে ‘খলিফা মার্কেট’ নামে ১৫টি দোকান ঘর নির্মাণ করে বাবলাতলা ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দেয়। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের নৌকা মার্কা প্রতীক নিয়ে জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে আলহাজ মো. মহিববুর রহমান মহিব নির্বাচিত হন। তারপর বিএনপি নেতা একেএম খালেকুজ্জামান জামাল খলিফার নির্মাণাধীন খলিফা মার্কেটের ওপর লোলুপদৃষ্টি পড়ে। জাতীয় সংসদ সদস্য মহিব কলাপাড়া উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভাব খাটিয়ে ভুয়া ৩৬৬নং খতিয়ান বাতিল দেখিয়ে নতুন ৩৫৭নং খতিয়ান সৃষ্টি করে বিএনপি নেতার মার্কেট নিজ দখলে নিয়ে জামান খলিফার নির্মিত মার্কেটের ওপর ১৩টি রুম তৈরি করে নিজের পছন্দনীয় ব্যবসায়ীদের নিকট ভাড়া দেয়। এতে একেএম খালেকুজ্জামান জামান খলিফা আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এবং নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালতে তিনি রায় পান। কিন্তু মহিব ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে পুনরায় জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। এতে জামান খলিফা জমির দখল নিতে পারেনি।
গত ৫ই আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে প্রতিমন্ত্রী আলহাজ মো. মহিববুর রহমান মহিব ও তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার রেখা আত্মগোপনে থাকায় তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।