ঢাকা, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ২৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

শরীর ও মন

হাঁটা ব্যায়াম নয়!

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুল হাই
৩১ অক্টোবর ২০২৪, বৃহস্পতিবার

আশপাশে কোনো পার্কের দিকে কিছুদিন ভালো করে তাকালে লক্ষ্য করবেন, প্রতিদিনই কিছু সংখ্যক হৃষ্টপুষ্ট পুরুষ বা মহিলা নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করেন, কিন্তু মাস বছর পেরোবার পরেও তাদের শরীরে কোনো পরিবর্তন হয় না। কেন? হাঁটা কিন্তু সকলেরই পছন্দের। প্রায়ই চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশনে লেখা থাকে, ‘প্রতিদিন এক ঘণ্টা হাঁটুন’।
‘হাঁটা’ কি সত্যিই ব্যায়াম? 
এক কথায় এটার উত্তর হয় না, এটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। কেউ হাফ ম্যারাথন দৌড়ায়। হাঁটা তার জন্য ব্যায়াম নয়। আবার ৬০ বা ৭০ বছর বয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ১৫ মিনিট হাঁটা একটি ভালো ব্যায়াম। তবে বেশির ভাগ মানুষের জন্য হাঁটা একটি শারীরিক কার্যকলাপ, ব্যায়াম নয়। শারীরিক কার্যকলাপ ও ব্যায়ামের মধ্যে পার্থক্য আছে।
শারীরিক কার্যকলাপ হলো: মাংসপেশি দ্বারা উৎপাদিত যেকোনো শারীরিক ক্রিয়ালাপ, যার মাধ্যমে শরীরের শক্তি ব্যয় হয়।
আবার ব্যায়াম হলো, বিশেষায়িত কিছু শারীরিক কার্যকলাপ, যা পরিকল্পিত, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, পুনরাবৃত্তিমূলক, এবং স্বাস্থ্য এবং ফিটনেস বজায় রাখতে বা উন্নত করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। 
তাই, যদি আপনি পরিকল্পনা মতো এবং শরীরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মাত্রায় হাঁটেন, যা আপনার ‘স্বাস্থ্য ও ফিটনেসকে উন্নত করে, তবেই এটাকে পরিপূর্ণভাবে ব্যায়াম বলা যাবে।’
হাঁটাকে কী ব্যায়ামে রূপান্তরিত করা যায়? 
আপনি আপনার হাঁটাকে ইচ্ছে করলেই ব্যায়ামে রূপান্তর করতে পারেন, তবে এজন্য নিম্নের কিছু তত্ত্ব-উপাত্ত মাথায় রাখতে হবে।
* মনে রাখবেন, হাঁটা এক ধরনের কার্ডিও। কার্ডিও হলো হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ানো সম্পর্কিত শারীরিক কার্যকলাপ। 
* কার্ডিও পারফরম্যান্স পরিমাপ করতে, আমরা ঐজ গধী (সর্বোচ্চ হৃদস্পন্দন) ব্যবহার করি এবং ঐজ তড়হব (হৃদস্পন্দনের পর্বগুলো) বের করি।
ধাপ-১: আপনার সর্বোচ্চ ঐবধৎঃ জধঃব (ঐজ) গণনা করুন। নিচের নিয়ম এটা গণনা করা যায় -
এইচআর ম্যাক্স=আপনার হার্ট প্রতি মিনিটে সর্বোচ্চ কতোবার বিট করে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ঐজ গধী কমে যায়। আপনার ঐজ গধী=২২০- আপনার বয়স (অর্থাৎ যদি আপনার বয়স ৫১ হয়, তবে আপনার ঐজ গধী= ২২০-৫১=১৬৯)
ধাপ-২: আপনার ঐজ তড়হব গুলো জানুন:
* জোন-১: সহজ  ৫০-৬০% ঐজ মাক্স (৮৫ু১০২)
* জোন-২: অ্যারোবিক  ৬০-৭০% ঐজ গধীক্স (১০২ু ১১৮)
* জোন-৩: টেম্পো ৭০-৮০% ঐজ গধীক্স (১০৮ু১৩৫)
* জোন-৪: ল্যাকটেট থ্রেশহোল্ড- ৮০-৯০% ঐজ গধীক্স(১৩৫ু১৫২)
* জোন-৫: অ্যানেরোবিকু ৯০-১০০% ঐজ গধীক্স (১৫২ু১৬৯)
হাঁটাকে ব্যায়ামে পরিণত করতে, জোন-২ এ প্রশিক্ষণ শুরু করুন। আপনি এটি ট্র্যাক করতে বা এটি জানতে আপনার ফোনে যেকোনো অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। আপনি হাঁটার কোনো পর্যায়ে যদি জোন ২ কার্ডিওতে পৌঁছান, তবে তা বুঝার সহজ পদ্ধতি হলো- হাঁটার সময় আপনার কথোপকথন করতে কষ্ট হবে। এবার আপনি আরও দ্রুত যান এবং লক্ষ্য করুন, আপনার পক্ষে স্বাভাবিক কথোপকথন আর সম্ভব হচ্ছে না। যাইহোক, পরের বার হাঁটার সময় আরও দ্রুত হাঁটুন, আপনার ঐজ বা হৃদস্পন্দন বাড়ান।
* বর্ধিত হৃদস্পন্দন আপনার পেশিগুলোকে আরও অক্সিজেন গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করবে, এতে হৃদপিণ্ড আরও ও রক্ত ??পাম্প করবে এবং এতে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে।
* ঐজ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের মূল তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, তখন শরীরকে শীতল করতে শরীর ঘামবে ও শরীর থেকে তাপ নির্গত হবে। আপনি অক্সিজেনের জন্য আরও দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেবেন, এতে আপনার ফুসফুস আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। 
আপনি যদি এটি অর্জন করেন, ইউরেকা, আপনি জোন-২ কার্ডিও এবং হাঁটা=ব্যায়ামে আছেন।
এখন সত্যি করে জিজ্ঞাসা করুন, আপনি কি হাঁটেন, নাকি ব্যায়াম করেন।
লেখক: (চর্ম, যৌন ও এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ), জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চেম্বার-১২, স্টেডিয়াম মার্কেট, সিলেট। 
ফোন- ০১৭১২২৯১৮৮৭

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status