ঢাকা, ৯ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৩ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

দেশ বিদেশ

তাঁতশিল্পে গ্রামীণ ব্যাংকের পুরুষ ঋণগ্রহীতাদের সাফল্য

সোহেল রানা সবুজ
১৪ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার
mzamin

সুপ্রাচীনকাল থেকে আবহমান বাংলার ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে আসছে তাঁতশিল্প। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এ দেশে তাঁতশিল্পের প্রচলন শুরু হয়। কালের পরিক্রমায় বর্তমানে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও বেশ সমাদৃত বাংলাদেশের তাঁতের শাড়ি। অনেকেই এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে অভাবের গ্লানি মোচন করে গড়েছেন সুখী পরিবার। আর এ কাজে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুদ্র ঋণ সহায়তা প্রদান করে আসছে গ্রামীণ ব্যাংক। 
দিন বদলেছে তাঁতের শাড়ি তৈরির জন্য প্রসিদ্ধ টাঙ্গাইল জেলার বাসিন্দাদের। এখানকার অনেকেই গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য হয়ে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ঋণ সহায়তা নিয়ে গড়ে তুলেছেন তাঁত কারখানা। নিজের আর্থিক উন্নয়ন তো বটেই, এখানে অনেকেরই কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংক টাঙ্গাইল জোনের দেওজান দেলদুয়ার শাখার ২৯/পু কেন্দ্রের ঋণগ্রহীতা সদস্য আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকে আমার আব্বা ১৯৮৪ সালে সদস্য হয়। পরে আমি ও আমার ছোট ভাই সদস্য হই। প্রথমে গ্রামীণ ব্যাংক আমাকে জামানত ছাড়াই ৩০ হাজার টাকা সাধারণ ঋণ দেয়। পরে ৫০ হাজার, ৩০ হাজার এই রকম করে ঋণ নিয়ে তাঁত কিনে, শাড়ি কাপড় বানিয়ে ব্যবসা শুরু করি। বর্তমানে আমার ৫৭টা তাঁত আছে। মাসে আমার ৮ লাখ টাকার মতো বিক্রি হয়। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে এখন পর্যন্ত ২০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। কিছু জমি কিনেছি, বাড়ি করেছি। গ্রামীণ ব্যাংকের মতো সুযোগ-সুবিধা অন্য কোনো ব্যাংক আজ অবধি দেয় নাই।’
ব্যবসায়িক মূলধনের অভাবে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন যখন আকাশ-কুসুম কল্পনা ঠিক সেই সময়টাতেই গ্রামীণ ব্যাংক থেকে জামানতবিহীন ঋণ সহায়তা গ্রহণ করে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে হেঁটেছেন দেওজান দেলদুয়ার শাখার ২/পু কেন্দ্রের সদস্য মো. মাসুদ কায়সার। ছোট্ট তাঁতের কারখানায় বিনিয়োগ করে আজ তিনি একাধিক তাঁত কারখানার মালিক। বংশগত পেশার মাঝেই নিজেকে আবিষ্কার করতে পারার আনন্দ নিয়ে মাসুদ কায়সার জানান, ‘আমার আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। এনজিও বা অনেক ব্যাংকের কাছে ঘুরলেও সেখান থেকে প্রাথমিক অবস্থায় আমাকে লোন দিতে চায়নি। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক আমার পাশে দাঁড়ায়। আমি ২০১০ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য হই। ঋণ নিয়ে ব্যবসাটাকে এগিয়ে নিয়ে যাই। বর্তমানে আমার ১৫টা লোম তাঁত আছে। কারিগর আছে ১৫ জন। মাসে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা আমার প্রফিট থাকে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংক আমাকে ১৫ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে। ঋণ নেয়ার পরে আমি ঘর করেছি, জমি-জমা করেছি।’
টাঙ্গাইল জেলায় তাঁতশিল্পের বিস্তার এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই শিল্পের ভূমিকাকে আরও বিকশিত করার লক্ষ্যে কার্যকরী ভূমিকা রেখে চলেছে গ্রামীণ ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির ঋণ সহায়তায় শুধু নারীরা নয়, পুরুষ ঋণগ্রহীতারাও নতুন নতুন তাঁত কারখানা তৈরি এবং এতে গুণগত মানসম্পন্ন তাঁতের শাড়িসহ বিভিন্ন পরিধেয় বস্ত্র উৎপাদন করে তা বিদেশেও রপ্তানি করে আসছে। এতে বেগবান হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। 
গ্রামীণ ব্যাংক টাঙ্গাইল জোনের জোনাল ম্যানেজার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এই জোনের ৭৮টি শাখায় মোট সদস্য সংখ্যা ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৫৭৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ সদস্য ৪৫ হাজার ২১ জন। দারিদ্র্যসীমা থেকে ৯০ ভাগ পুরুষ সদস্য বেরিয়ে এসেছেন। নতুন একজন সদস্যকে প্রথমেই সহজ ঋণের আওতায় আমরা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকি। পরবর্তীতে সদস্যের কাজের ওপর নির্ভর করে ঋণ প্রদানের পরিমাণ বাড়ানো হয়। দুই বছর পর ওই সদস্যকে আমরা বিশেষ বিনিয়োগ ঋণ দিয়ে থাকি। এই ঋণ নিয়ে তারা তাঁতশিল্প সম্প্রসারণ করে থাকে। তাঁতশিল্পে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছেন টাঙ্গাইল জোনের গ্রামীণ ব্যাংকের পুরুষ ঋণগ্রহীতা সদস্যগণ। এই ব্যবসায় সম্পৃক্ত সদস্যদের আমরা ১০-১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিশেষ বিনিয়োগ ঋণ দিয়েছি।’
দারিদ্র্যবিমোচন, স্ব-কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উদ্যোক্তা তৈরিসহ উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কাজে ভূমিকা রেখে চলেছে গ্রামীণ ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণকারী সদস্যদের মধ্যে বর্তমানে ৬৮% দারিদ্র্যসীমা থেকে বেরিয়ে সচ্ছলতার দেখা পেয়েছেন। 

লেখক: মিডিয়া সমন্বয়কারী, গ্রামীণ ব্যাংক।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status