প্রথম পাতা
আমদানির খবরে ডিমের দাম কিছুটা কমছে, সক্রিয় সিন্ডিকেট
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১০ অক্টোবর ২০২৪, বৃহস্পতিবার
সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে ডিমের দাম আবারো বাড়তে শুরু করছে। সরবরাহেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এতে ডিমের ডজন ১৭০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে দাম কমাতে সাড়ে ৪ কোটি পিস ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। এতে ডিমের দাম সামান্য কমছে বলে জানান বিক্রেতারা। তবে সিন্ডিকেট সক্রিয় আছে বলে জানান তারা।
ডিমের দাম নিয়ে ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। কোনো কারণ ছাড়াই কারসাজি করে ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভোক্তারা।
ব্যবসায়ীদের দাবি, এক মাস আগে বন্যায় প্রায় ২০টির মতো জেলায় অনেক মুরগির খামার পানিতে তলিয়ে যায়। অনেক মুরগি মরে যায়। এতে কমেছে মুরগি ও ডিমের উৎপাদন। এ কারণে বাজারে ডিমের দাম বাড়ছে।
গত কয়েক দিনে হু হু করে বেড়ে ফার্মের ডিমের ডজন গত সোমবার ১৭০ টাকায় পৌঁছেছে। পাড়া-মহল্লায় কোথাও কোথাও এর চেয়েও বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। তবে আমদানির খবরে কিছুটা দাম কমতে শুরু করেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ডিমের বাজার স্থিতিশীল পর্যায়ে আনার ক্ষেত্রে সাফল্য না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আকার ভেদে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১৬৮ থেকে ১৭১ টাকা দরে। সে হিসাবে প্রতি হালি ডিমের দাম পড়ে ৫৬-৫৭ টাকা। আর সেই ডিম খুচরায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৭০ টাকার উপরে। খুচরা বাজারে প্রতি হালি ডিম ৬০ টাকা। সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে প্রতি ডজন ডিমের দাম প্রায় ৩৭ টাকা বেশি।
অন্যদিকে ফার্মের মুরগির সাদা ডিমের ডজনও অধিকাংশ বাজারে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও অবশ্য ১০ টাকা কমেও পাওয়া যাচ্ছে। সুপার শপগুলোতে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায়। প্রতি হালি ৬১.৬৬ টাকা থেকে ৬৩.৩৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ কয়েকদিন আগেও খুচরা বাজারে মুরগির ডিমের হালি বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা।
বাজারে ডিমের দাম অনেকদিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী। গত জুলাই মাসের অধিকাংশ দিনে খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। আগস্টেও দাম মোটামুটি এ রকমই ছিল। তবে সেপ্টেম্বর মাসে ডিমের দাম বাড়তে থাকে। মাসের শেষে এসে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। চলতি মাসে সেই ডিমের দাম ১৮০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।
পণ্য বিক্রয়কারী সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, গত এক বছরে ডিমের দাম ১৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
গত ১৬ই সেপ্টেম্বর ফার্মের মুরগির ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির ডিমের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। তাতে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৪২ টাকায় বেঁধে দেয়া হয়। এখন সরকারের নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্যের চেয়েও ডজনে ৩৮ টাকা বেশি দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে।
বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ও বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে গত মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সীমিত সময়ের জন্য সাতটি প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এতে বলা হয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে দৈনিক প্রায় ৫ কোটি পিস ডিমের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে ডিমের বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ও বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। ডিম আমদানি করা যাবে আগামী ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত।
এদিকে আমদানিতে শুল্ককর কমাতে আবারো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। ডিম আমদানিতে বর্তমানে ৩৩ শতাংশ শুল্ককর দিতে হয়। চিঠিতে বলা হয়, গত ২৯শে আগস্ট ট্যারিফ কমিশন থেকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পিয়াজ, আলু ও ডিম আমদানিতে শুল্ককর কমানোর বিষয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন এনবিআরে পাঠানো হয়।
পাঠকের মতামত
সিন্ডিকেটকারীরা মানবজাতির শত্রু দেশের শত্রু।
ডিম নিত্য প্রয়োজনীয় এবং গরীবের পণ্য। যদি দেশে উৎপাদন করে কম দামে না দেয়া যায়, তাহলে আমদানি করা হোক । এক পত্রিকায় দেখলাম ডিমের দাম আমদানি করলে ৬ টাকা পড়ে! গরুর গোশত, ডিম এই দুটো আমদানি করা হোক, প্রয়োজন হলে দুধ ও আমদানি করা হোক। সাধারণ মানূষের পুষ্টির চাহিদার সাথে আপোষ নয়। দেশের মানুষ এমনিতেও কৃষিতে অনাগ্রহী তার উপর আছে সিন্ডিকেট নেই কোন আধুনিকায়ন।
প্রতিটি বাজারের দরদাম এ্যপস খোলা হোক।
বাজার সিন্ডিকেটকারীরা হত্যাকারীদের চেয়েও বড় খুনি। একজন খুনি এক বা একাধিক খুন করে। আর বাজার সিন্ডিকেটকারীরা দেশের সকল সাধারণ মানুষকে তিলে তিলে খুন করছে। মানুষের বেঁচে থাকার স্বস্তি কেড়ে নিচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, এক মাস আগে বন্যায় প্রায় ২০টির মতো জেলায় অনেক মুরগির খামার পানিতে তলিয়ে যায়। অনেক মুরগি মরে যায়। এতে কমেছে মুরগি ও ডিমের উৎপাদন। এ কারণে বাজারে ডিমের দাম বাড়ছে। এটাই সত্য