ঢাকা, ১০ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ২৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

সাক্ষাৎকার

কেউ তদবির করলে প্রথমে তাকে বাদ দেয়া উচিত

পিয়াস সরকার
৫ অক্টোবর ২০২৪, শনিবারmzamin

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি’র ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে সরকারকে। যোগ্য ব্যক্তিতে যোগ্য জায়গায় নিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। কেউ তদবির করলে প্রথমেই বাতিল করা উচিত। যারা তদবির করবেন তাদের পদের প্রতি মোহ আছে, সম্মান না। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি দুর্নীতি করেন, তবে তার জীবনের কোনো মূল্যই থাকে না বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ।

মানবজমিনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে উচ্চ শিক্ষার নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, নতুন একটা বাংলাদেশ এসেছে ছাত্র-জনতার মাধ্যমে। জীবন দিয়েছে, আহত হয়েছে, চোখ হারিয়েছে। তারা নতুন একটা বাংলাদেশ বির্নিমাণ করতে চায়। এই অনুভূতির প্রতি সম্মান রেখেই আমার এই স্থানে আসা। আমার লক্ষ্য হলো পুরনো জঞ্জাল মুছে ফেলা। আমরা পুরোপুরি জবাবদিহিতামূলক, স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চাই। গত রোববার আমরা কমনওয়েলথের একটা ফেলোশিপ করেছি। যেটা শুধুমাত্র মেধার ভিত্তিতে হয়েছে। এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন আসবে না। এভাবেই সামনে আমরা কাজ করে যেতে চাই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই ভিসি বলেন, ইউজিসি খবরদারি বাদ দিয়ে টিমওয়ার্কের পথে হাঁটবে। আমাদের লক্ষ্য কোয়ালিটি রক্ষা করা। প্রচেষ্টা থাকবে প্রত্যাশা পূরণের। এটাই আমাদের লক্ষ্য। মেধার জন্য এত সেক্রিফাইজ, এর প্রতি আমরা সম্মান দেখাবো। ছাত্র-জনতা গোটা বিশ্বে একটা উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্ররা উভয়েই কিন্তু মেধাবী। তাদের সঙ্গে কথা বলে আমরা কাজ করতে চাই। 

উচ্চ শিক্ষায় সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়াটাই সংস্কার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর অতিরিক্ত ফি আদায় করা হচ্ছে। আমরা যদি নিজস্ব জমিতে যাওয়ার কথা বলি সেটা আমরা দেখবো যাতে ছাত্রদের কাছ থেকে আদায় করা না হয়। তারা যেন সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি মেনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে। সমাজ তাদের অনেক কিছু দিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় যেন ব্যবসায় পরিণত না হয়। ফি নির্ধারণের বিষয়ে আমরা চিন্তা করছি। ভবিষ্যতে এটা নিয়ে কাজ করবো। আমরা ঢাকা সিটির ভিতরে এক রকম বাইরে আরেক রকম, জেলা শহরে এক রকম করে দেয়া যায় কিনা সেটা ভেবে দেখা হবে। 

অধিক পরিমাণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে ড. এসএমএ ফায়েজ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি মান নিয়ে চলে তাহলে অধিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকা অন্যায় নয়। পড়াশুনার সুযোগের জন্য যদি অধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় এতে খারাপভাবে দেখার কিছু নেই। তবে মানের সঙ্গে কে নো আপোষ করা যাবে না। ইউজিসি’র ক্ষমতায়ন যতটুকু আছে এটাই যদি পুরোদমে কাটাতে পারি, এটাই বড়। আমরা ক্ষমতায় বিশ্বাস করি না। আমরা সঠিক কথা সঠিকভাবেই বলতে চাই।

ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে ফাউন্ডেশন ফর রিসার্চ অন এডুকেশনাল প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এফইপিডি) ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক এই চেয়ারম্যান  বলেন, যে রাজনীতির জন্য ছাত্ররা গণরুমে থাকতো এটা রাজনীতি না। যে রাজনীতি করতে চায় সে করবে। যে চায় না সে করবে না। কিন্তু বিগত সময়গুলোতে শিক্ষার্থীদের কৃতদাসের মতো ব্যবহার করা হয়েছে। কাল পরীক্ষা কিন্তু আজ তাকে যেতে হচ্ছে কোনো প্রোগ্রামে অনিচ্ছায়। এধরনের রাজনীতি ভালো না। এই কারণেই শিক্ষার্থীরা ভাবছে এটাই রাজনীতি। এই কারণেই তাদের এত অনীহা। সুষ্ঠু রাজনীতির ভালো দিক আছে। এজন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক, কর্মকর্তা সকলের সঙ্গে আলোচনা করে সঠিক জায়গায় যাবে বলে আমি মনে করি। সুষ্ঠু রাজনীতিতে নিজেকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও ভালো। যে রাজনীতি দেখে এসেছে ছাত্ররা এটা কেউ চায় না, আমিও চাই না। 

উচ্চ শিক্ষায় ঘাটতির বিষয়ে তিনি বলেন, এখন প্রধান ঘাটতি হচ্ছে সিলেবাস। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী এই সিলেবাস আপ টু ডেট করতে হবে। গ্লোবাল মার্কেটের জন্য প্রস্তুত করার একটা সিলেবাস প্রস্তুত করা হবে। আরেকটা সমস্যা হচ্ছে বেতন কাঠামো। এখন মেধাবীরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতায় আগ্রহ দেখাচ্ছে এটা ভালো। কিন্তু রুট লেবেলে যে শিক্ষক পাঠদান করাচ্ছেন তার বেতন মোটেও পর্যাপ্ত না। একারণে মেধাবী লোককে নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। চাহিদা মাফিক বেতন নিশ্চিত করতে হবে রুট লেবেলের শিক্ষকদেরও। প্রাইমারিতে উপযুক্ত বেতন দিয়ে মেধাবী শিক্ষক আনতে পারলেই উচ্চ শিক্ষায় আরও মেধাবী শিক্ষক পাওয়া যাবে। 

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগের বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, এখানে সবাই প্রতিযোগিতা করছে। দ্বিতীয়বার যারা পরীক্ষা দিচ্ছে তারা বেশি সময় পাচ্ছে। এখানে যে তারতম্য হচ্ছে এটা সত্য। কিন্তু এটা ফান্ডামেন্টাল অধিকারের পরিপন্থি। সে পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হতে চাইলে পাবে না কেন। সেটার জন্য যদি মানসম্মত অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থাকে তাহলে বিষয়টা এত সিরিয়াস হবে না। কারণ সে পড়াশুনা করতে চাইছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ফান্ডামেন্টাল রাইটের জায়গায় সে দুইবার কেন আরও বেশিবারও দিতে পারে। তবে এটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে। একইভাবে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার উপকারিতা-অপকারিতা দুটোই আছে। শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদেীড়ি করতে হয় না। আবার এটাকে নিখুঁত হতে হবে। এটাকে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। এটা করতে যদি সমস্যা হয় তাহলে ভালোর থেকে খারাপ হবে। 

তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জ কিন্তু একটা সুযোগও সৃষ্টি করে দেয়। চ্যালেঞ্জটাকে মোকাবিলা করে উত্তরণ করতে হবে। ইউজিসিতে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে কাউকে দুর্নীতি করতে দেখিনি। তবে বোঝা যায় এখানে দুর্নীতি আছে। বোঝা যায় এখানে দুর্নীতি আশ্রয় করেছে। এটা এতদিন সমাজের অংশ ছিল। তারা প্রশ্নের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি। যাতে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে উঠতে পারি সেলক্ষে আমাদের কাজ করে যেতে হবে। আমরা যদি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারি তবে এটার কলেবর বাড়ানোর চেষ্টা করবো। আমাদের সন্তানরা বুক চিতিয়ে লড়াই করছে। পিছনে জঞ্জাল সামনে স্বাধীনতা এটাই আমাদের মূল মন্ত্র। শিক্ষার্থীরা যে সচেতনতার মাধ্যমে আমাদের দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। তারা যে কতো মেধাবী তারা দেখিয়ে দিয়েছে। লাইব্রেরি সুবিধা, ডাইনিংয়ে ভালো খাবার, সুন্দর থাকার পরিবেশ এসব যদি আমরা দিতে পারি তাহলে তাদের হাত ধরে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে। তারা তাদের কাজ করছে, করেছে। আমরা কতোটুকু আমাদের কাজ করতে পারছি এটাই প্রশ্ন। আমি স্বপ্ন দেখি তাদের নিয়ে। পুরো পৃথিবী তাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখছে।
উল্লেখ্য,  অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ গত ৫ই সেপ্টেম্বর ইউজিসি চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক অধ্যাপক। ফায়েজ ২০০২ সাল থেকে ছয় বছর ভিসির দায়িত্ব পালন করেন। সরকারের পট পরিবর্তনের পর গত ১১ই আগস্ট ইউজিসি চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন প্রফেসর কাজী শহীদুল্লাহ। ২০১৯ সালের মে থেকে তিনি ইউজিসি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

পাঠকের মতামত

মানুষ হিসেবে ড. এসএমএ ফায়েজ স্যার খুবই অমায়িক ও সৎ ব্যাক্তি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগে দীর্ঘ সময় ধরে অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথে শিক্ষকতা করেছেন এবং সেখানে ভিসি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন। বিভিন্ন International Journal এ ড. ফায়েজ স্যারের publications চোখে পড়ার মত। ড. ফায়েজ স্যার কে যথাযথ একটি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উনি দুর্নীতির সাথে আপোষ করার মত কোনো ব্যাক্তি নন।

Anamul Hasan
৫ অক্টোবর ২০২৪, শনিবার, ২:০৩ অপরাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status