ঢাকা, ৯ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৩ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

দেশ বিদেশ

ছাত্র আন্দোলনের সময় বিজিবি হেলিকপ্টার ব্যবহার করেনি

স্টাফ রিপোর্টার
৪ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার
mzamin

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেছেন, একটা বাহিনীর প্রধান হয়ে সরাসরি ঊর্ধ্বতনের আদেশ অমান্য করা বা ডিনাই করা দুষ্কর। তবে অনেক ক্ষেত্রে আমরা ডিনাই করেছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নানামুখী চাপ সত্ত্বেও বিজিবি হেলিকপ্টার ব্যবহার করেনি, গণগ্রেপ্তারেও অংশ নেয়নি। তাই বলছি, পরিস্থিতি পরিবর্তিত না হলে আমি এখানে থাকতে পারতাম কি না তার নিশ্চয়তা দিতে পারলাম না। গতকাল দুপুরে বিজিবি সদর দপ্তরের কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানান তিনি। 
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, র‌্যাব’র মতো বিজিবিকেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে বলা হয়েছিল। আন্দোলনের মধ্যে বিজিবি’র হেলিকপ্টার একদিনের জন্যও ব্যবহার করা হয়নি। জুলাই মাসের শেষের দিকে যখন গণগ্রেপ্তার কার্যক্রম শুরু হলো তখন নির্দেশনা ছিল গ্রেপ্তার কার্যক্রমে অংশ নিতে। কিন্তু বিজিবি একদিনের জন্যও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। আমি বলেছি, গ্রেপ্তার কার্যক্রমের জন্য বিজিবি প্রশিক্ষিত ও প্রস্তুত নয়। সার্বিক পরিস্থিতির কারণে এসব বলা বা পরিষ্কার করার সুযোগ তখন হয়নি। আমরা তখন কীভাবে দায়িত্ব পালন করেছি, কী রকম প্রেশার ছিল- তা আমাদের কমান্ডাররা জানেন।  তিনি বলেন, ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অনেকে বিজিবি’র গেটে মিষ্টি নিয়ে আসে। নরমালি বিজিবি’র এপিসি’র উপরে এলএমপি বা মেশিনগান থাকে। তখন কিন্তু কোনো অস্ত্র ছিল না। ডিজি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনেক আহত ছিলেন। আহতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সেখান থেকে আমরা অনেককে আমাদের বিজিবি হাসপাতালে নিয়ে এসে চিকিৎসা দিয়েছি। তাদের মধ্যে এখনো আটজন চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের যাবতীয় খরচ বিজিবি দিচ্ছে। মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, অনেক জায়গায় বিজিবি মোতায়েনই করা হয়নি, কিন্তু তখন বিজিবি’র কথা বলা হয়েছে। একজন রিকশাচালক বলছেন, তার ছেলে বিজিবি’র গুলিতে মারা গেছে। আমরা খোঁজ নিয়ে তাকে অনুদান দিয়েছি, জানতে চেয়েছি যে তিনি নিজে দেখেছেন কি না? তিনি বলেছেন, আমি তো দেখিনি। একটা বাহিনীর কথা বলেন যে- তাদের একজন এসে বিজিবি’র গুলিতে মারা যাওয়ার বিষয়টি বলে গেছেন। এভাবে বিভিন্ন ঘটনায় বিজিবিকে জড়ানো হয়েছে। কখনো যদি প্রমাণিত হয় যে, আন্দোলনে বিজিবি’র হাতে কিছু ঘটেছে বা কেউ মারা গেছে তাহলে তার সুবিচার নিশ্চিতে যা করা দরকার তা করা হবে। এরপরও এক-দু’টি ঘটনা ঘটেছে। একজন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার অফিসার গুলি করছেন। ওই ঘটনায় বিজিবি থেকে তাকে অপসারণ করা হয়েছে। তাকে শুধু ওএসডি করা হয়নি, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য সুপারিশ করে লে. কর্নেল পদমর্যাদার ওই কর্মকর্তাকে বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। যেন সেনাবাহিনীর অধীনে তার সাজা কার্যকর হয়। তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারি, তার সঙ্গে একজন মেজর ছিলেন। যদিও তিনি গুলি করেননি। তবে তিনি ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেছেন। তাকেও আমরা কিছুটা শাস্তির আওতায় নিয়ে এসেছি। তিনি বলেন, ৫ই আগস্টে বিজিবিকে ঢাকার ১৪টি এন্ট্রি পয়েন্টে নিরাপত্তায় নিয়োজিত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। যাতে করে বাইরে থেকে ছাত্র-জনতা ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারে। কারণ সেদিন গণভবন ঘেরাও কর্মসূচি ছিল। আদেশ একটা জায়গা থেকে পাইনি, দেশের সর্বোচ্চ জায়গা, মন্ত্রী, সিনিয়র ব্যক্তি নাম বলছি না, তারা আমাদের প্রেশারের মধ্যে রেখে ১৪টি জায়গায় পাঠায়। টঙ্গী, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, পোস্তগোলা, আশুলিয়াসহ মোট ১৪টি পয়েন্টে ৮০ থেকে ৯০ জনকে মোতায়েন করা হয়। সেদিন দুপুরে যখন আমি খবর নিতে তাদেরকে ফোন করি, জানতে পারি যে, প্রত্যেকটা এন্ট্রি পয়েন্টে ১০ থেকে ১৫ হাজার করে ছাত্র-জনতা আসছে। আমি তখন বলেছি- সবাই পোস্ট ছেড়ে দিয়ে সরে যাও। জাস্ট ভেনিস। কারণ বিপুল পরিমাণ ছাত্র-জনতাকে গার্ড করার প্রয়োজন নেই। সেটা করতে গেলে হতাহতের সংখ্যা বাড়বে। এভাবেই আমরা দায়িত্ব পালন করেছি। এখন বিজিবি পূজায় নিরাপত্তায়, যৌথ বাহিনীর সঙ্গে অভিযানে কাজ করছে।

এর বাইরে গাজীপুরের ৯ পদাতিক ডিভিশন আশুলিয়া শিল্প এলাকার নিরাপত্তায় কাজ করছে। 
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ অনেক আওয়ামী লীগ নেতা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে গিয়েছেন, বিজিবি’র নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও তারা কীভাবে পালালো- এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিবি প্রধান বলেন, সবাই কি পালিয়ে গেছে? আমার মনে হয় না। জনবহুল এই দেশে কেউ কেউ আত্মগোপনে আছেন। তবে দেশ থেকে পালানোর ঘটনায় বিজিবি’র দায় আছে। তো শুধু কি বিজিবি-ই দায়বদ্ধ? তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিরোধী তালিকাভুক্ত ২২ অ্যাক্টিভিস্টকে গ্রেপ্তার করেছে বিজিবি। এরপরও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী পালিয়েছেন। কোন সীমান্ত দিয়ে কে পালিয়ে গেছেন তা অবশ্যই তদন্ত করা হবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। ডিজি বলেন, গত ৬ই আগস্ট থেকে টিভিতে যে স্ক্রল দেখেছেন, ‘সীমান্ত পথে পালানো রোধে বিজিবিকে সহায়তা করুন’, এই নির্দেশনা কেউ বিজিবিকে দেয়নি। নিজ উদ্যোগে করেছি। তখন থেকে আমরা চেষ্টা করছি। তথ্য দেওয়ার যেসব সংস্থা আছে তারাও যদি তথ্য দেন তাহলে কাজটা সহজ হয়। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের কাছেও তথ্য থাকে। বিজিবি’র পক্ষ থেকে আশ্বাস-নিশ্চিত করছি, সীমান্ত রক্ষার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। নিয়মনীতির বাইরে আমরা বিএসএফ বা ভারতকে ছাড় দেবো না। আমি সীমান্ত ও বিজিবি’র প্রেক্ষাপট থেকে বলতে পারি, সীমান্তে যারা মাইনোরিটি আছে তারা চলে যেতে পারে, এই ধরনের অপপ্রচারণা অতিরঞ্জিতভাবে প্রচার করা হচ্ছিল। সে সময় বিএসএফ তাদের ক্যাম্পগুলোতে জনবল বাড়িয়েছে। তাদের অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের সেনাবাহিনী আসার কথা নয়, কিন্তু সে সময়ে আমরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর গাড়ির মুভমেন্ট পর্যন্ত দেখেছি, যেখানে তাদের আসার কথা না। হয়তো তারা শঙ্কায় ছিল যে, বিপুলসংখ্যক একটা অংশ ভারতে যায় কিনা। আমরা এটার লিখিত ও মৌখিক প্রতিবাদ করেছি। পরবর্তীতে ডিজি পর্যায়ে বিএসএফ’র সঙ্গে যে মিটিং হবে সেখানে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। দেশের কিছু কিছু অপরাধী চক্র বিএসএফ’কে তথ্য দিচ্ছে দাবি করে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আমরা এ রকম কয়েকজনকে শনাক্ত করে এনটিএমসি’র মাধ্যমে পুলিশে সোপর্দ করেছি। তিনি বলেন,  আগে এ ধরনের ঘটনায় নানা ক্লিয়ারেন্স নিয়ে কাজ করা লাগতো। এখন আমি সরাসরি কাজ করতে পারছি। তবে অফিসিয়ালি পেশাদার একটা সম্পর্ক বিএসএফ’র সঙ্গে রাখতে হবে। সেটা রক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তবে কোনোকিছুতে কমেপ্রামাইজ করে নিজেরা ছাড় দিয়ে সীমান্তে কিছু হবে না। কারণ, বিএসএফ’র চাইতে বিজিবি কোনো অংশে কম নয়।

 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status