শরীর ও মন
মলদ্বারের রোগ এনাল ফিসার নিয়ে কথা
ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবারএনাল ফিসার কেন হয়: মল যদি শক্ত ও শুষ্ক হয় তাহলে মলদ্বারে আঘাতের ফলে মলদ্বার ছিঁড়ে গিয়ে এই রোগ হয়। মল নরম বা ডায়েরিয়া হলেও ফিসার হতে পারে। যাদের মলদ্বারের চারপাশের মাংশপেশি বেশি টাইট থাকে তাদের ফিসার হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে (মলদ্বার টাইট থাকলে রক্ত সরবরাহ কমে যায়, ফলে এনাল ফিসারের ঘা শুকাতে পারে না)।
এ ছাড়া মলদ্বারের প্রদাহ বা টিউমারের কারণে ফিসার হতে পারে।
প্রকারভেদ: এনাল ফিসার ২ ধরনের। তীব্র (অপঁঃব) ও দীর্ঘস্থায়ী (ঈযৎড়হরপ)। দীর্ঘস্থায়ী ফিসারে মলদ্বারের ভেতরে ও বাইরে গোঁটা থাকে এবং এর চিকিৎসা কঠিন।
এনাল ফিসারের চিকিৎসাসমূহ: মল নরম রাখার জন্য বেশি করে শাক-সবজি, সালাদ, পানি বেশি করে খেতে হবে।
মল নরম রাখার জন্য ইসবগুলের ভুষি বা ওষুধ খেতে হবে। মলদ্বারের ব্যথা কমার জন্য মলম এবং মলত্যাগের পর ও দিনে কয়েকবার সিজ বাথ (কুসুম গরম পানিতে লবণ দিয়ে কোমর ডুবিয়ে ১০-২০ মিনিট বসে থাকতে হবে) নিতে হবে। সিজ বাথ মলদ্বারের আঁটসাঁট ভাব কমিয়ে দেয়, মাংসপেশিকে শিথিল করে ফলে ফিসার ভালো হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
অন্যান্য ওষুধ যেমন নাইট্রোগ্লিস্যারিন মলদ্বার শিথিল করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
বেশি ব্যথার ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয়।
দীর্ঘস্থায়ী ফিসারের ক্ষেত্রে অপারেশন দরকার হতে পারে।
চিকিৎসার পর সমস্যা কী আবার হয়: নিয়মকানুন মেনে চলা ও ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করার পর মল যদি আবার শক্ত হয় বা মলদ্বারে আঘাত পেলে আবার ফিসার হতে পারে। এ কারণে মলদ্বার ব্যথা, রক্তপাত বন্ধ হলেও মল নরম রাখা উচিত, শাক-সবজি, সালাদ, পানি বেশি খাওয়া ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে হবে। যদি কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া ফিসার হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে।
ওষুধের মাধ্যমে ফিসার ভালো না হলে কী করার আছে?
নিয়মকানুন মেনে চলা ও ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করার পরও ফিসার ভালো না হলে রোগীকে আবার পরীক্ষা করে দেখা উচিত। মল সবসময় শক্ত বা তরল হলে, মলদ্বার ছোট হয়ে গেলে বা মাংশপেশি টাইট থাকলে ফিসার ভালো নাও হতে পারে। অন্ত্রের প্রদাহ রোগ, অন্ত্রের সংক্রমণ বা মলদ্বারে টিউমার হলে ফিসার ভালো হয় না।
যেসব রোগী অনেকদিন ধরে মলদ্বারে ব্যথার অভিযোগ করেন তাদের কলনস্কপি পরীক্ষা বা অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে পরীক্ষা করা উচিত।
এনাল ফিসারে সার্জারির ভূমিকা: এনাল ফিসারের সার্জারি ২ ধরনের। এক হলো- মলদ্বারের পেশিতে বটুলিনাম ইনজেকশন (ইড়ঃঁষরহঁস ঃড়ীরহ) দেয়া এবং দুই. অপারেশন করে মলদ্বারের পেশির কিছু অংশ কেটে দেয়া (খধঃবৎধষ রহঃবৎহধষ ংঢ়যরহপঃবৎড়ঃড়স)। এনাল ফিসারের অপারেশন করে রোগী ১ দিনের মধ্যে বাড়ি চলে যেতে পারে। এই রোগের অপারেশনের প্রধান লক্ষ্য হলো মলদ্বার বা পায়ূপথের পেশীকে শিথিল করা, ফলে মলদ্বার ব্যথা কমে যায় ও মলদ্বার স্বাভাবিক হয়, এনাল ফিসারের ঘা শুকিয়ে যায়। এনাল ফিসারের অপারেশন করলে ৯০% ভাগের বেশি রোগী সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। সকল অপারেশনের কিছু ঝুঁকি থাকে, কদাচিৎ এই অপারেশনের পর বাতাস বা তরল মল ধরে রাখা কষ্ট হতে পারে।
অপারেশনের পর ভালো হতে কতোদিন লাগতে পারে
এনাল ফিসারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এটা মনে রাখতে হবে যে ওষুধ বা অপারেশন যাই হোক না কেন পুরোপুরি সুস্থ হতে ৬-১০ সপ্তাহ লাগতে পারে। অপারেশনের পর ব্যাথা এবং রক্তপাত হ্রাস পায়, এরপরেও মল স্বাভাবিক রাখা, শাকসবজি, সালাদ ও পানি বেশি খাবার অভ্যাস রাখতে হবে। ক্রমাগত শক্ত বা তরল মলত্যাগ বা পায়ু পেশি টাইট হয়ে থাকলে, ঘাঁ শুকাতে বিলম্ব হতে পারে। কিন্তু অপারেশনের ২-৩ দিন পরেই কাজে যোগ দিতে পারে। অপারেশনের পরে মলত্যাগে কোনো সমস্যা থাকে না বা তরল খাবার খেতে হয় না। এনাল ফিসারের যে অপারেশন করা হয় তাতে সিজ বাথ বা গরম পানিতে বসতে হয় না বা ড্রেসিং-এর দরকার নেই এবং সেলাই কাটার কোনো ঝামেলা থাকে না।
এনাল ফিসার থেকে কী ক্যান্সার হতে পারে: এনাল ফিসার থেকে কখনই ক্যান্সার হতে পারে না। কিন্তু যদি ক্রমাগত ব্যথা থাকে তাহলে রোগীকে সাবধানতার সঙ্গে পরীক্ষা/মূল্যায়ন করতে হবে কারণ এক্ষেত্রে ব্যথার অন্য কারণ থাকতে পারে। এনাল ফিসার যদি ভালো হয়ে যায়, আপনার কলোরেকটাল সার্জন আপনাকে আরও পরীক্ষা করতে পারে। যদি মলদ্বার দিয়ে রক্ত যায় কলনস্কপি পরীক্ষা করতে হতে পারে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, কোলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ কোলোরেক্টাল, ল্যাপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
চেম্বার: ১৯ গ্রীন রোড, একে কমপ্লেক্স, লিফট-৪, ঢাকা। যোগাযোগ: ০১৭১২-৯৬৫০০৯