প্রবাস
মালয়েশিয়ায় সম্মানিত ৩১ বছরের বিরামহীন এক রেমিট্যান্স যোদ্ধা আবুবকর
আরিফুল ইসলাম, মালয়েশিয়া
(২ সপ্তাহ আগে) ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১২:০০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:৫১ অপরাহ্ন
এক চিলতে সুখের আশায় গত প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় কর্মরত প্রবীণ আবু বকর। প্রবাস জীবনের দীর্ঘ এই সময়ে একবারের জন্যও দেশে যাননি ৭০ বছর বয়সী এ রেমিট্যান্স যোদ্ধা। মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর রাজ্যের ক্লাং অঞ্চলের একটি শপিংমলে ক্লিনার হিসেবে কাজ করতেন তিনি। বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে একদিনের জন্যও কাজ থেকে ছুটি না নেওয়া ৩১ বছরের এ যোদ্ধা দেশে ফিরছেন সম্প্রতি। তার বিরামহীন কর্মে মুগ্ধ হয়ে গত বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর, ক্লাং রয়্যাল সিটি কাউন্সিল তাকে পুরস্কৃত করে। মালয়েশিয়ার পত্রিকা ষ্টার অনলাইন বাংলাদেশি এ রেমিট্যান্স যোদ্ধার সাথে কথা বলেছিলেন সেদিন। জানতে চেয়েছিলেন ৩১ বছরের মালয়েশিয়ার প্রবাস জীবনের এ সফলতার কথা।
নিজেকে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে বর্ণনা করে আবু বকর তার উপার্জনের একটি বড় অংশ বাংলাদেশে তার পরিবারের কাছে পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বর্তমানে তার মেয়েদের একজন বাংলাদেশের বিচারক, এক প্রকৌশলী এবং অন্যজন ডাক্তার। সন্তানদের এই সফলতার জন্য যেন প্রবাসে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন তিনি। তার উৎসর্গের প্রতিদানও দিয়েছে তার সন্তানেরা, এটি তার বড় সান্ত্বনা। তিনি তার সন্তানদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি মালয়েশিয়ায় অসার আগে শুনেছি এখানে প্রচুর কাজ। যদি ভালো কাজ না পাই তবে এমন কোনো কাজও যদি থাকে যা কেউ করতে না চায়, সে কাজও আমি করবো। আমি একবারের জন্যও অসুস্থতার ছুটি নেইনি। ইনশাআল্লাহ আমি এখনও বেশ সুঠাম আছি।’
সেদিন তিনি হিউম্যানস অব কুয়ালালামপুরের ইনস্টাগ্রাম পেজের সাথে কথাও বলেছিলেন, ৩১ বছর আগে তার জন্মভূমি বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন যখন তার ৫ তম সন্তানের বয়স ছিলো মাত্র ছয় মাস। তারপর আর দেশে যাওয়া হয়নি। আমি আমার পরিবারকে মিস করি এবং তারাও আমাকে অনেক মিস করে। তবে আমার এই ত্যাগ তাদের জন্য এবং তাদের ভবিষ্যতের জন্য।
হিউম্যানস অব কুয়ালালামপুরের ইনস্টাগ্রাম পেজে দেওয়া পোস্টটি নেটিজেনদের কাছ থেকে শুভকামনা অর্জন করেছেন আমাদের এ রেমিট্যান্স হিরো এবং অনেকেই 'চাচা'-র নিরাপদ যাত্রার জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে কমেন্ট করে বলেছেন, "নিরাপদ ভ্রমণ, চাচা। সবসময় আপনার সুস্বাস্থ কামনা করি। আমাদের দেশে কাজ করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, আমরা সত্যিই এটির প্রশংসা করি। আরেক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হোল্ডার রোহানাথ আজহারী বলেছেন যে, পোস্টটি পড়ার সময় তিনি বুঝতে পারেননি যে তিনি কাঁদছেন। আরেকজন লিখেছেন, একজন পিতার ত্যাগ কত মহান। তার সন্তানেরা তার ভাল যত্ন নিন, যেমন তিনি এত বছর আপনাদের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন।
আসলে, প্রবাসীদের জীবন কেমন কাটে? এ প্রশ্নটা প্রায় সবার, অন্তত যারা প্রবাসী নন। কৌতুহলটা তাদেরই বেশি যাদের স্বজনেরা প্রবাসী। আমজনতার আগ্রহ যে নেই, তা নয়। তা ক্ষেত্রবিশেষে। তাদেরও কৌতুহল হয়, যখন কোনো প্রবাসী হয়ে ওঠে সেলিব্রেটি।
বিদেশে আমরা বাঙালি প্রবাসীরা কেমন আছি? ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বললে কীভাবে কাটছে আমাদের জীবন? দেশের অস্থিতিশীল গুমোট রাজনৈতিক পরিবেশের বাইরে থেকে আমরা কী খুব ভালো আছি? দেশ ও স্বজনদের দূরে রেখে আমাদের প্রবাসজীবন কী খুব স্বস্তিতে কাটছে? না কি সোনার হরিণের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে আমরাও ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত?
এই প্রশ্নগুলো করার পেছনে অন্য কোনো অযাচিত উদ্দেশ্য নেই। সুখ-দুঃখ আর কষ্টের অনুভূতিগুলো বলার প্রয়াসমাত্র।
প্রবাস মানেই কি নিঃসঙ্গতা? একাকিত্ব? না কি প্রবাস মানেই হাড়ভাঙা পরিশ্রম। কেমন কাটে প্রবাসজীবন?
কেউ বলে মলিন নয়তো ফ্যাকাশে। কেউ বলে পানসে। কারও কাছে রোমাঞ্চকর, অতিমাত্রায় স্বাধীনতা। কারও কাছে জীবনের সোনালি অধ্যায়ের যাত্রা শুরু। কেউ ভাবছে, এই তো চলছি সোনার হরিণের পেছনে। আবার কেউ ফেলে দীর্ঘনিঃশ্বাস যেন কোনো এক নষ্টালজিয়ায় আক্রান্ত। এই ভিন্ন ভিন্ন ভাবনাগুলো তাদের, যারা প্রবাসী।
আর যারা প্রবাসী নন, তাদের ধারণাটা কেমন? এটা আমার পক্ষে বলা মুশকিল হলেও কিছুটা তো উপলব্ধি করতে পারি। তাই বলছি যা আমি উপলব্ধি করেছি-
প্রবাসী সম্পর্কে দেশিদের ধারণা পুরোটাই অর্থকেন্দ্রিক। অর্থাৎ, প্রবাসি মানে অঢেল অর্থ উপার্জনের কারিগর। স্বজনেরা অন্তত ওই একটি বিষয়ে পরোপুরি সজাগ। প্রবাসী মানে, থাকবে অর্থিক স্বচ্ছলতা। এই ধারণাটা মোটেই ভুল নয়। কিংবা নতুন কিছু নয়। এটা তো ঠিক বাংলাদেশের সমৃদ্ধ অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর চাবিকাঠি তো দীর্ঘকাল ধরেই প্রবাসিদের কাঁধে। বাংলাদেশ ব্যাংক বছর ঘুরে গুনছে হাজার কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা! তাই বুঝতে কারও কষ্ট হয় না, প্রবাসি মানে হাড়ভাঙা পরিশ্রমী একদল খেটে খাওয়া মানুষ।
তবে ৩১ বছরের এ রেমিট্যান্স যোদ্ধার কথায় উঠে এসেছে এসব প্রশ্নোত্তর। তিনি বলেন, ‘আমার প্রয়োজন খুবই সামান্য। উপার্জনের বেশিরভাগ অংশই পরিবারের জন্য পাঠিয়ে দিই। সকালের নাস্তা করে কাজ করতে চলে যাই, আবার ফিরে আসি। পরিবারের সঙ্গে প্রতিদিনি ফোনে কথা হয়।’ সুযোগ পেলে বিশ্রাম নেই। পরের দিন আবার একইভাবে দিন চলে যায় আমার।
দেশে ফিরে যাওয়ার প্রবল আগ্রহ দেখিয়ে, এ বছরের ডিসেম্বর মাসে ফিরে যাওয়ার কথা বলেছেন তিনি। দীর্ঘদিন পর পরিবারের সদস্যদের কাছে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই নাতিকেও প্রথম দেখবেন তিনি। এ যেন তার কাছে বিরাট পরিবর্তন।
দেশের অনেক কিছুর আবশ্যিক পরিবর্তনও দেখেবেন তিনি ।
This is the warrior and the wife of the Mohisi great woman
সবাই উনার ত্যাগটাই দেখলেন। উনার স্ত্রীর ত্যাগও কম নয়।