খেলা
ভারতেও হাসানের হাসি
স্পোর্টস রিপোর্টার
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শুক্রবার‘এক টুর্নামেন্টেই হাসান মাহমুদের খোঁজ পেয়েছিলাম। ওর বলের গতি, বাউন্স আর শারীরিক গঠন- সব মিলিয়ে প্রথম দেখাতেই বলেছিলাম ‘ওয়াও! হি ইজ ডিফারেন্ট।’ মাশরাফিকে প্রথম দেখেও আমার একই অনুভূতি হয়েছিল। তখনই মনে হয়েছিল, হাসান অনেক দূর যাবে। কোনো এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় দলের সাবেক নির্বাচক ও অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন তরুণ হাসানকে নিয়ে এমনই মন্তব্য করেছিলেন। গতকাল দৈনিক মানবজমিন’র সঙ্গে তিনি আবারো জানালেন এই তরুণ পেসারকে নিয়ে তার অনুভূতি একই রকম আছে। পাকিস্তানের পর ভারতেও হাসানের মুখের মৃদু হাসি ছড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে। গতকাল বল হাতে চেন্নাইতে ভারতে একাই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন তিনি। সকালে টস জিতে বোলিংয়ে নামা বাংলাদেশকে স্বপ্নের শুরু এনে দেন হাসান। নতুন বলে তিনি বিদায় করেন রোহিত শর্মা, শুবমান গিল ও বিরাট কোহলিকে। এরপর চতুর্থ উইকেটে ৬২ রানের জুটি গড়েন ইয়াসাসভি জয়সওয়াল ও রিশাভ পান্ত। এই জুটিও ভাঙেন এই পেসার। এমন পারফরম্যান্সে দারুণ খুশি বাশারও। পুরনো কথা মনে করে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ অনেক আগের কথা ২০১৭’র দিকে মনে হয়। ওকে দেখতে গিয়ে আমার এমনটাই মনে হয়েছিল। এখনো একই অনুভূতি আছে। ভালো করছে ও, তবে ইনজুরি ও নানা কারণে গতি কমেছে। যেভাবে বল করছে সেটি দারুণ। এখনো বিশ্বাস করি অনেক দূর যাবে।’
গতকাল চেন্নাইতে সকালে হাসান মাহমুদের অসাধারণ প্রথম স্পেল বিপাকে ফেলে দিয়েছিল ভারতকে। পরে দ্বিতীয় সেশনে আরও তিন উইকেট হারিয়ে একপর্যায়ে তাদের রান ছিল ৬ উইকেটে ১৪৪। সেখান থেকে রবীন্দ্র জাদেজা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের জুটি দারুণ ব্যাটিংয়ে পার করে দেয় দিন। আটে নেমে ১১২ বলে ১০২ রান নিয়ে দিন শেষ করেন অশ্বিন। তার ষষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরি এটি। নিজ শহরের মাঠ এই এমএ চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামে সবশেষ টেস্টেও সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। বলার অপেক্ষা রাখে না হাসানের হাসির পর দিন শেষে বাংলাদেশকে হতাশাই উপহার দিয়েছেন অশ্বিন। তবে বাংলাদেশকে দারুণ স্বপ্ন দেখিয়েছেন হাসান। নতুন বলে প্রথম ঘণ্টায় তার স্পেল ছিল ৫-২-৬-৩। হাসান ছাড়া বাংলাদেশের অন্য বোলাররা খুব ভালো করতে পারেননি। সাকিব আল হাসানকে বোলিংয়ে আনা হয় ৫২ ওভারের পর। তার বোলিং ছিল একদম ধারহীন। গত মার্চে হঠাৎ করেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ডাক পড়ে পেস বোলার হাসান মাহমুদের। এর আগে কখনই টেস্ট না খেলা বোলারটির কাছে বড় আশা ছিল না হয়তো কারোরই। তবু নির্বাচকদের নিরাশ করেননি ডানহাতি এই পেসার। দুই ইনিংস মিলে নিলেন ৬ উইকেট। এরপর গত মাসে পাকিস্তান সফরে আলো ছড়ান তিনি। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে নিলেন ৩ উইকেট। খুব ভালো না হলেও বাংলাদেশ দল জিতে যাওয়ায় উইনিং কম্বিনেশন ভাঙতে চায়নি ম্যানেজমেন্ট। ফলে পরের টেস্টেও হাসান টিকে যান। প্রথম ইনিংসে কোনো উইকেট না পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে অবিশ্বাস্য বোলিং করে ৪৩ রানে তুলে নিলেন ৫ উইকেট। বলার অপেক্ষা রাখে না রাওয়ালপিন্ডির ফর্মটা তিনি টেনে নিলেন চেন্নাইতে। গতকাল প্রথম সকালে চেন্নাইয়ের উইকেটে আগুন ঝরালেন, লণ্ডভণ্ড করলেন ভারতের বিশ্বখ্যাত টপ অর্ডার। তার দুইদিকে বল মুভ করানোর ক্ষমতা দেখে অনেকেই চমকে উঠেছেন। তবে বাশার জানেন- এটাই হাসানের বড় অস্ত্র। তিনি বলেন, ‘দুই দিকে বল ঘুরানোর মতো পেসার বাংলাদেশেই নয়, গোটা দুনিয়াতেই কম আছে। ওকে একটাই কথা বলবো, ফিটনেস ঠিক রাখা। যে চর্চাগুলো করছে তা ঠিকমতো করে যাওয়া।’ সকালে দুই দিকেই সুইং করিয়েছেন হাসান যিনি দারুণ লাইন, লেংথে বল করছিলেন। ব্যাটসম্যানদের সামনে টেনে এনে ড্রাইভ খেলতে প্রলুব্ধ করেছেন। অনেকটা বাজে বলে শুবমান গিলের উইকেট পেলেও রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির উইকেট নেন দারুণ দুই ডেলিভারিতে। রোহিতকে আউট করা ডেলিভারিটি ক্ল্যাসিক টেস্ট ম্যাচ উইকেট। আর অফ স্টাম্পের বাইরে ড্রাইভ করার চেষ্টায় আউট হন কোহলি। লাঞ্চ থেকে ফেরার পরপরই পন্তকে সাজঘরের পথ দেখান হাসান মাহমুদ। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভারতের পতন হওয়া চারটি উইকেটই জমা পড়ে হাসানের ঝুলিতে। এর আগে মাত্র ৩ টেস্টের ক্যারিয়ারে ১৪ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখান হাসান মাহমুদ। এর মধ্যে সমপ্রতি রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি শিকার করেন ৫ উইকেট।