শরীর ও মন
সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা
সামসুল হক নাদিম
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবারশারীরিক সম্পর্ক করার জন্য পুরুষাঙ্গের উত্থান একটি স্বাভাবিক আচরণ, একজন পুরুষ যখন যৌন সম্পর্কের জন্য মনো শারীরিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করে তখন যদি পুরুষাঙ্গ সঙ্গমের জন্য উপযুক্তভাবে উত্থান না হয় তাকে ইরেকটাইল ডিসফাংশন (ED) বা লিঙ্গ উত্থান সমস্যা বা যৌন অক্ষমতা বলে। যদি আরও সহজভাবে বলি, আপনি ইন্টারকোর্স বা যৌন সম্পর্ক করার সময় যদি পুরুষাঙ্গ যথেষ্ট পরিমাণ শক্ত না হয় বা যদি একেবারেই শক্ত না হয় কিংবা শক্ত হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার নরম হয়ে যায়। এই তিনটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে যেকোনো একটি যদি কমপক্ষে ৩ মাস থেকে ৬ মাস ধরে প্রায় প্রতিবার সহবাসের ক্ষেত্রেই হয়, তখন সেটাকে আমরা ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা লিঙ্গ উত্থান সমস্যা বলি। পুরুষের যৌন উত্তেজনা একটি জটিল প্রক্রিয়া যার সঙ্গে মস্তিষ্ক, হরমোন, আবেগ, সড়বায়ু বা নার্ভ, মাংসপেশী এবং রক্তনালী জড়িত। অর্থাৎ আপনি যখন যৌন উদ্দীপক কিছু চিন্তা করেন, কিছু দেখেন, মনে মনে কল্পনা করেন, কিছু শুনেন বা আপনার যৌন সঙ্গীকে স্পর্শ করেন তখন আপনার ব্রেইন স্টিমুলেটেড হয়। এরপর কিছু হরমোন এবং নার্ভের সম্মিলিত ক্রিয়ার মাধ্যমে পুরুষাঙ্গের ভেতরে রক্তনালীগুলো প্রসারিত হয়। তখন পুরুষাঙ্গের ভেতর রক্তপ্রবাহ অনেক বেড়ে যায়। যার ফলে পুরুষাঙ্গ বেলুনের মতো ফুলে গিয়ে ইরেক্ট বা উত্থান হয়। এর যেকোনো একটিতে সমস্যা হলেই ইরেকটাইল ডিসফাংশন দেখা দিতে পারে। শারীরিক অথবা মানসিক যেকোনো কারণেই ইরেকটাইল ডিসফাংশন হতে পারে।
তবে ইদানীং অনেক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, শতকরা ৪৮ শতাংশ ইরেকটাইল ডিসফাংশন সমস্যার মূল কারণ ভাসকুলার বা রক্তনালীতে পর্যাপ্ত রক্তপ্রবাহ ও নার্ভ সাপ্লাই কম হওয়া। শারীরিক অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম পুরুষ হরমোন কমে যাওয়া। মানসিক কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম পারফরমেনস এনজাইটি। যে কারণেই হোক না কেন ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয় করতে হবে সবার আগে। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পুরুষাঙ্গের আল্ট্রাসনোগ্রাফি, কালার ডপলার স্ক্যানিং বা ডুপ্লেক্স স্টাডি পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তপ্রবাহ ঠিক আছে কিনা তা দেখে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারেন। সঠিক সময়ে যদি ইরেকটাইল ডিসফাংশনজনিত সমস্যার সঠিক চিকিৎসা না করেন তাহলে দীর্ঘস্থায়ী পুরুষত্বহীনতা বা পারমানেন্ট ইমপোটেন্সি হতে পারে। এ ছাড়াও দাম্পত্য কলহসহ বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত হতে পারে।
আমাদের দেশে একটি প্রচলিত মিথ্যা বা ভুল ধারণা যৌন অক্ষমতার কোনো সমাধান নাই। তবে সঠিক কথা হচ্ছে সম্পূর্ণ কাটাছেঁড়া ছাড়া ব্যথামুক্ত শকওয়েভ ও মিনিমাল ইনভেসিভ পি-শট বা পিআরপি চিকিৎসার মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান সম্ভব। শকওয়েভ চিকিৎসা যা একটি বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে পুরুষাঙ্গের বাইরে থেকে অভিঘাত তরঙ্গ বা জলতরঙ্গ দেয়া হয়। যা যান্ত্রিক কিন্তু বৈদ্যুতিক নয়। চিকিৎসার এই পদ্বতিতে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধির ফলে শরীরের নিজস্ব পুনর্গঠন পদ্ধতিকে (ন্যাচারাল গ্রোথ ফ্যাক্টর) কাজে লাগিয়ে নতুন টিস্যু তৈরি করতে সাহায্য করে, যার ফলে পুনরায় লিঙ্গ উত্থান হয়। এই পদ্ধতিতে আমরা যেকোনো একজন রোগীকে তার পেনিসের বেইজ, সেফ্ট এবং পেরোনিয়াল এরিয়াতে শকওয়েভ বা জলতরঙ্গ দেয়া হয়। যার ফলে ওখানে সাইটোকাইনোসিস বলে একটা কেমিক্যাল রিলিজ হয় তখন বডি পার্ট থেকে ব্রেইন পর্যন্ত একটি ইমপাল্স যায়, ব্রেইন তখন আপনার আমার শরীরে যে কিছু এনজিওজেনিক বা ন্যাচারাল গ্রোথ ফ্যাক্টর থাকে যেমন-এপিথেলিয়াল নাইট্রিক অক্সাইড সিনথেস, ভেসেল এন্ডোথেলিয়াল গ্রোথ ফ্যাক্টর (ঠঅএঅঋ), সেল প্রোলিফারেটিং ফ্যাক্টর এবং স্টেম সেলকে স্টিমুলেট করে নতুন করে টিস্যু রিজেনারেট করে। পি-শট বা প্রিয়াপাস শট কিংবা প্ল্যাটিলেট রিচ প্লাজমা (পিআরপি) হলো একটি মিনিমাল ইনভেসিভ চিকিৎসা পদ্ধতি। মূলত ৩টি ধাপে পি-শট চিকিৎসাটি সম্পন্ন হয়। একজন ফ্ল্যাবটুমিস্ট রোগীর শরীর থেকে পরিমাণমতো রক্ত নিয়ে সেন্টিফিউজার মেশিনের মাধ্যমে হাইলি কনসেনট্রেট প্লাজমা আলাদা করা হয়। পরের ধাপে লোকাল এনাসথেটিক জেল দিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়, তারপর ইনসুলিনের মাইক্রো নিডেল দিয়ে ৫-৬টা পয়েন্ট এ ইনজেকশন দেয়া হয়। শকওয়েভ এবং পি-শট রিজেনারেটিভ চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে নতুন টিস্যু রিপেয়ার বা রিজুভিনেট হয়, যার ফলে পুনরায় ইরেকশন বা লিঙ্গ উত্থান হয়। যা পুরোপুরি নিরাপদ ও দ্রুত কার্যকর। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, শকওয়েভ এবং পি-শট চিকিৎসা পদ্ধতিতে দীর্ঘ সময়ের জন্য একজন পুরুষ তার যৌন সক্ষমতা ফিরে পায় এবং উপকৃত হন।
লেখক: সার্টিফায়েড শকওয়েব প্র্যাকটিশনার অ্যান্ড ম্যান সেক্সচুয়াল এক্সপার্ট
যোগাযোগ: ইডি ট্রিটমেন্ট সেন্টার
২০৬৬, এ্যাপোলো/ এভারকেয়ার হসপিটাল লিংক রোড (রয়েল স্কুল এবং ওয়াটারপলো সুইমিং পুল-এর সঙ্গে), বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা-১২২৯,
মোবা: ০১৯৭৭৬৫৬২৩৭,
https://edtreatment.com.bd