ঢাকা, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ রবিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

শরীর ও মন

হাড় ক্ষয় রোগ একটি ‘নীরব ঘাতক’

ডা. জি. এম জাহাঙ্গীর হোসেন
৩০ আগস্ট ২০২৪, শুক্রবার

এই রোগে আক্রান্তদের অনেকেই তাদের রোগ সম্পর্কে জানেন না এবং আক্রান্তদের সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না হলে এমনকি ছয় মাসেই মৃত্যু ঘটতে পারে।
সোসাইটির গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী যদিও তাদের অনেকের জানাই নেই যে তারা হাড় ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

দেখা যায় ৫০ বছর বয়সী যারা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের প্রতি দশজনের নয়জনই নারী। তবে ৭০ বছর বয়সীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা কিছুটা বেড়ে সাধারণত এ অনুপাত হয় ৬:৪ বা ৭:৩।
অনেকদিন ধরে হাড় ক্ষয় রোগে আক্রান্ত রোমেনা আখতার বলছেন, দীর্ঘদিন পিঠ ব্যথায় ভোগার পর পরীক্ষায়-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে যে তিনি হাড় ক্ষয় রোগে আক্রান্ত।

হাড় ক্ষয়  রোগ কী: মানুষের শরীরের হাড়ের একটি গঠন প্রক্রিয়া আছে। জন্মের পর থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত হাড় নানাভাবে পরিপক্ব হতে থাকে। এরপর আবার ঘনত্ব কমে হাড় পাতলা হতে শুরু করে।
অধ্যাপক একেএম সালেক বলছেন, হাড়ের ঘনত্ব যখন কমে যায় তখনই সেটা রোগ আর এর নামই হাড় ক্ষয় রোগ।
রোগটিতে আক্রান্ত হলে হাড়ের ঘনত্ব কমে হাড় ছিদ্রযুক্ত, দুর্বল এমনকী ভেঙেও যেতে পারে। সঠিক সময়ে এর প্রতিরোধ বা চিকিৎসা না নিলে একান্ত ব্যক্তিগত কাজকর্ম যেমন- নামাজ, গোসল, টয়লেটে এবং অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক হাঁটাচলা করাও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
মূলত হাড়ের স্ক্যান করে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন যে এর ঘনত্ব কতোটা কমেছে এবং সে অনুযায়ী তারা চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

হাড় ক্ষয় কেন হয়? কখন হয়: সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর স্বাভাবিক নিয়মেই মানুষের হাড় ক্ষয় হয়ে থাকে। মানুষের শরীরের এ ধরনের পরিবর্তনের সঙ্গে হরমোনের প্রভাব থাকে।
আর নারীদের শরীর থেকে হরমোন খুব তাড়াতাড়ি কমে যায়। মহিলাদের ক্ষেত্রে এস্ট্রোজেন এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোনের অভাব দেখা দেয়।
বিশেষ করে মেয়েদের মাসিক বন্ধ হলে বা মেনোপোজের পর এটি বেশি হয়। আর হরমোন কমে গেলে শরীর থেকে দ্রুত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি বের হয়ে যায়।
‘ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি কমে গেলে তখন শরীর আর হাড় গঠন করতে পারে না। ফলে শুরু হয় হাড় ক্ষয়,’ বলছিলেন মিস্টার সালেক।
এ ছাড়া যারা ক্যান্সার, রক্তরোগ, অপুষ্টিজনিত রোগ, কিডনি রোগে আক্রান্ত তাদের হাড় ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যায়।
এর বাইরে নানা রোগের চিকিৎসার জন্য যারা দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড সেবন করে তাদের হাড়েরও ঘনত্ব কমে গিয়ে হাড় ক্ষয় রোগ হতে পারে। হাড় ক্ষয় একটি নীরব ঘাতক। অনেকেই বুঝতে পারেন না যে তিনি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে গেছেন

রোগটির লক্ষণ ও প্রতিক্রিয়া: এই রোগ হলে সাধারণত মানুষ পিঠের ব্যথা নিয়েই  আমাদের কাছে আসেন। এ ছাড়া কোমর ব্যথাও অনেকের মধ্যে দেখা যায়। এ রোগে আক্রান্ত হলে সাধারণত যতটুকু আঘাতে একজন ব্যক্তির হাড় ভাঙার কথা তার মাত্র এক পঞ্চমাংশ আঘাতেই হাড় ভেঙে যায়।
আর মেরুদণ্ডের হাড়ের ক্ষয় হলে মানুষ একটা পর্যায়ে গিয়ে কুঁজো হয়ে যায়। মেরুদণ্ড ছাড়াও কোমর, হাতের কব্জি, পায়ের কুচকির হাড়ের ক্ষয় হবার প্রবণতা অনেক বেশি। আসলে যেসব হাড় মানুষের শরীরের ওজন বহন করে সেগুলোই ক্ষয় হয় বা ভেঙে যায় এ রোগটির কারণে। 
চিকিৎসা বা প্রতিকার: চিকিৎসার চেয়ে রোগটি প্রতিরোধ করাই উত্তম। এজন্য সুষম খাবার বিশেষ করে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে ছোটবেলা থেকেই। আর শারীরিক পরিশ্রম ও রোদে যাওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ।
পুডিং, দুধ, দই, সবুজ শাক-সবজি ও তাজা ফলমূল যেমন খেতে হবে তেমনি বাচ্চাদের বাইরে খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে। সুষম খাবার না পেলে আর খেলাধুলা না করলে বাচ্চাদের হাড় গঠন ঠিকমতো হয় না যা ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।’
ক্যালসিয়ামের জন্য নিয়মিতভাবে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুধজাতীয় খাবার খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকার কথা বলেন।
এ ছাড়া সামুদ্রিক মাছ খাওয়া, ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করা এবং ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনি রোগ থাকলে সেটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
আর সতর্কতা হিসেবে বাসা বাড়িতে বাথরুমের পিচ্ছিলভাব দূর করা, রাতে ঘরে মৃদু আলো জ্বালিয়ে রাখা এবং অন্ধকারে চলাফেরা না করা, প্রয়োজনে টর্চলাইট নিয়ে চলাফেরা করতে হবে। পাশাপাশি এ রোগে যারা আক্রান্ত হন তাদের কোনোভাবেই অতিরিক্ত ওজন বহন না করা ও বাঁকা হয়ে কাজ করা যাবে না।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ হাড় ও জোড়া বিশেষজ্ঞ এবং আর্থ্রোস্কোপিক সার্জন, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), ঢাকা।, 
চেম্বার: বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল লি., শ্যামলী (মিরপুর রোড), ঢাকা-১২০৭। হটলাইন: ১০৬৩৩, ০১৭৪৬৬০০৫৮২

 

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status