শেষের পাতা
বিজয় অর্জন হয়েছে কিন্তু আরও বড় দায়িত্ব রয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার
৭ আগস্ট ২০২৪, বুধবারবিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই বিজয় অর্জন করা হয়েছে। কিন্তু আরও বড় দায়িত্ব রয়েছে- স্বাধীনতাপ্রিয় প্রতিটি মানুষের, প্রতিটি নাগরিকের, এই স্বাধীনতাকে সুসংহত করা। সেই স্বাধীনতা তখনই সুসংহত হবে যখন আমরা প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারবো। সেজন্য আজকে প্রয়োজন ধৈর্য, সংযম এবং পরমতসহিষ্ণুতার জন্য নিজেকে তৈরি করা। মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা গভীরভাবে শ্রদ্ধা জানাতে চাই যে সমস্ত শহীদদের যারা ছাত্র ও জনতা যারা দীর্ঘ ১৫/১৬ বছর যে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম- সেই সংগ্রামে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আমরা অভিবাদন জানাতে চাই, স্যালুট জানাতে চাই, আমাদের ছাত্রদের, আমাদের সন্তানদের- যারা তাদের মেধা, বৃদ্ধিমত্তা ও সাহস নিয়ে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বুকের রক্ত দিয়ে ছাত্র-জনতার বিজয় অর্জন করেছেন। আমরা তাদের স্যালুট জানাই। আমরা সকল রাজনৈতিক দল, সকল ব্যক্তি, পেশাজীবী- যারা এই সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, আছেন তাদের সকলকে আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, এই বিজয় অর্জন করার জন্য।
তিনি বলেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ করবো, আপনাদের মাধ্যমে এই বার্তা দেশবাসীর কাছে পৌঁছিয়ে দিতে চাই যে, এখন কোনো প্রতিহিংসার স্থান নেই, কোনো প্রতিশোধ গ্রহণের স্থান নেই। এখন যেটা প্রয়োজন ধৈর্যের সঙ্গে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এই অর্জিত স্বাধীনতাকে সুসংহত করা। এখনো যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিশোধমূলকভাবে অগ্নিসংযোগ করছেন, লুটপাট করছেন, বাড়িঘরে হামলা করছেন, দয়া করে এটা এই মুহূর্ত থেকে বন্ধ করুন।
তিনি বলেন, ম্যাডাম (বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া) সবাইকে প্রথম যে কথাটি বলেছেন তাহলো সবাইকে শান্ত হতে বলো। এখানে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি যেন না হয় যাতে অর্জিত বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে যায় কেউ। জনগণকে সতর্ক থাকতে বলেছেন, এই বিজয় যেন কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে। খালেদা জিয়া কবে নাগাদ জনসমক্ষে আসবেন- এই প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা জানেন, ম্য্যাডাম খুব অসুস্থ। আমি সোমবার রাতে দেখা করেছি। সুতরাং যখনই তিনি ফিট মনে করবেন, সুস্থ বোধ করবেন তখন তিনি জনগণের সামনে উপস্থিত হবেন। আর উনি (বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান) যখনই মনে করবেন হি ক্যান কাম ব্যাক। আমরা ইতিমধ্যে অনুরোধ জানিয়েছি যে, দ্রুত চলে আসেন। সেই ব্যবস্থা হবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, এই বিজয় অর্জন করা হয়েছে। কিন্তু আরও বড় দায়িত্ব রয়েছে, প্রতিটি স্বাধীনতাপ্রিয় প্রতিটি মানুষের, প্রতিটি নাগরিকের, এই স্বাধীনতাকে সুসংহত করা। সেই স্বাধীনতা তখনই সুসংহত হবে যখন আমরা প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারবো। সেজন্য আজকে প্রয়োজন ধৈর্য, সংযম এবং পরমতসহিষ্ণুতার জন্য নিজেকে তৈরি করা। গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসকের পতনের প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল ইসলাম বলেন, আমি আজকে আপনাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে। শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, একটি গণতান্ত্রিক দেশের প্রত্যাশায় এবং একই সঙ্গে আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আপনারা এই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আপনারা কাজ করেছেন। দুঃখপ্রকাশ করছি, এই বিজয়ের পরে কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতকারী তারা কয়েকটি টিভি সেন্টারে অগ্নিসংযোগ করেছে, ভাঙচুর করেছে। এটা মুক্ত স্বাধীনতা ও স্বাধীন গণমাধ্যম এর বিরুদ্ধে। আমরা সব সময় ফ্রিডম অব প্রেসে বিশ্বাস করি, আমরা বিশ্বাস করি ব্যক্তি, মানুষ, সংগঠন বিশেষ করে সাংবাদিকরা তারা তাদের মত একদম স্বাধীনভাবে প্রকাশ করবেন। সেই বিশ্বাসে আমরা মনে করি যে, যারা এই সমস্ত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থেকেছেন, তারা এসব থেকে বিরত থাকবেন এবং সংবাদপত্রের যে মুক্ত ধারা তা অব্যাহত রাখবেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের দোতলায় একটি কক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে স্বশরীরে মহাসচিবসহ পাঁচ সদস্য ছিলেন। বিদেশে অবস্থান করা ড. আবদুল মঈন খান, সালাউদ্দিন আহমেদ ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।