শেষের পাতা
পূর্বাচলে পাওয়া গেল নাহিদকে
স্টাফ রিপোর্টার
২২ জুলাই ২০২৪, সোমবার
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফরম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নম্বর সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের সন্ধান পাওয়া গেছে। ২৪ ঘণ্টার অধিক সময় নির্যাতনের পর কে বা কারা তাকে গতকাল পূর্বাচলে একটি ব্রিজের কাছে ফেলে যায়। এর আগে নাহিদ ইসলামের মা মমতাজ নাহার সন্তানের নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। গত শনিবার গভীর রাতে রাজধানীর সবুজবাগ থানার নন্দীপাড়ায় বন্ধুর বাসা থেকে নাহিদকে তুলে নিয়ে যায় একদল লোক। এরপর টানা ২৪ ঘণ্টার বেশি নির্যাতনের পর রোববার ভোরে পূর্বাচলে ফেলে রেখে যায়। এরপর তিনি বাসায় আসলে পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমি আমার বন্ধুর বাসা নন্দীপাড়া, সবুজবাগে ছিলাম। ২০ তারিখ মধ্যরাতে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট লোকজন আসে বলে আমাকে জানানো হয়। তারপর আমি ছাদে গিয়ে অবস্থান নিই। ওখানে ছাদে এসে আমাকে নাহিদ পরিচয় শনাক্ত করে কয়েকজন মিলে জোর করে নিচে নামিয়ে আনে। নিচে আমি তিন থেকে চারটি গাড়ি দেখতে পাই। আমাকে একটা গাড়িতে উঠিয়ে চোখ বেঁধে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেয়া হয়। এরপর ৩০-৩৫ মিনিটের মতো গাড়িটা চলছিল। ওখান থেকে আমাকে একটি বাসার এক রুমে নেয়া হলো। তারপর জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হলো আন্দোলন সম্পর্কে। জিজ্ঞাসা খুব একটা না করে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরু করে তারা। ভয়ভীতি, গালিগালাজ এবং মারধর করে। আমি এটা বেশি নিতে পারিনি, এক পর্যায়ে সেন্সলেস হয়ে যাই। এর পরের মেমোরি আমার কাছে নেই। তিনি বলেন, আজ (রোববার) ভোর ৪টা কি ৫টার দিকে পূর্বাচল এলাকায় একটা ব্রিজের পাশে আমি নিজেকে আবিষ্কার করি। যেটি আমি আশেপাশের সাইনবোর্ড দেখে বুঝি। আলো ফোটার পর একটা গাড়ি নিয়ে বাসায় আসি। প্রায় ২৪ ঘণ্টার মতো ওই জায়গায় ছিলাম আমি। এর মধ্যে আমার পরিবার থানা, ডিবি অফিসে আমার খোঁজ নিয়েছিল কিন্তু তারা স্বীকারোক্তি দেয়নি যে, আমাকে তুলে নেয়া বা গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বলে। ওই জায়গায় আমার অভিজ্ঞতা এতটুকু। কারণ আমি সেন্সলেস হয়ে যাই। বাসা থেকে দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি হই। ওখানে এমন পরিবেশ- পরিস্থিতি ছিল যে সেখানকার কথা আমার মনে নেই। তবে এতটুকু বুঝেছি যে, লোহার কিছু একটা দিয়ে মেরেছিল কতোক্ষণ বসিয়ে, কতোক্ষণ দাঁড় করিয়ে। জিজ্ঞাসাবাদ খুব বেশি দূর আগায়নি। কেবল আন্দোলন কীভাবে শুরু, বেসিক কী, লক্ষ্য কী, এতগুলো প্রাণ যাচ্ছে কর্মসূচি কেন থামাচ্ছো না, জ্বালাও পোড়াওয়ের নির্দেশনা কে দিচ্ছে, ফান্ড কোথা থেকে আসছে- এসব। কিন্তু তারা উত্তরে সন্তুষ্ট হচ্ছিল না। পরবর্তীতে প্রশ্ন আর বেশি না করে মারধর শুরু করে। তিনি বলেন, ২০-২৫ জনের একটা টিম ছিল যখন আমাকে ধরা হয়েছিল। কিন্তু আমার পরিবার বলছে- সেখানে আরও বেশি ছিল। আমাকে নিয়ে যাওয়ার পর পুরো সময় ওই বিল্ডিংসহ আশপাশের এলাকা পুরো নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টদের তদারকিতে ছিল। কর্মসূচির বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, নেট শাটডাউন হওয়ার পর থেকেই আমরা সমন্বয়কদের মধ্যে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। তার আগে আমাদের সবার মধ্যে যোগাযোগ ছিল। আমাদের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত ছিল যেহেতু আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না; সেহেতু আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এখন জানতে পারছি যে, ৮ দফা, ৯ দফা বিভিন্ন বক্তব্য বিভিন্ন সমন্বয়কের কাছ থেকে যাচ্ছে- আমি মনে করি না যে এগুলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফরমকে প্রতিনিধিত্ব করে। কারণ আমরা সমন্বয়করা সম্মিলিতভাবে এসব সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন সমন্বয়ক হয়তো নিজেদের মতো করে বিভিন্ন বক্তব্য বা কর্মসূচি দিয়েছে পরিস্থিতি শামাল দেয়ার জন্য। আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক হলে ও ক্যাম্পাস খুলে দিলে আমরা সমন্বয়করা বসে ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটা চূড়ান্ত বক্তব্য দিতে পারবো। এর আগে যে ধরনের বক্তব্য যাচ্ছে সেটি ব্যক্তিগত জায়গা থেকে প্রেক্ষাপট অনুযায়ী দেয়া হচ্ছে।
পাঠকের মতামত
এদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। তাদের বিভ্রান্তিকর প্রচারণা ও আন্দোলনের কারনে দেশের যেসব ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হয়েছে তার দায়ভার এসব ছাত্র নামধারীদের।
জনাব নাহিদ ইসলাম সরকারের প্রতি আপনাদের আরো একটি দাবি জোরালো ভাবে জানানো উচিত যে দাবি অভিভাবক দেরও পূর্ণ সমর্থন আছে যেমন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ এবং শিক্ষা প্রতিস্টান গুলোতে কোনো রাজনৈতিক দলের সংঘটন থাকতে পারবে না।