প্রথম পাতা
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময়
নাশকতায় জড়িত কাউকে ছাড়া হবে না
স্টাফ রিপোর্টার
২৩ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার
কোটা বিরোধী আন্দোলন ঘিরে নাশকতায় জড়িত কাউকে ছাড়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, জনগণের জানমাল রক্ষায় সরকার কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয়েছে।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের যতগুলো আইকনিক স্থাপনা আমরা তৈরি করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছিলাম, অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে সেগুলোতে হামলা করে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমরা যত উন্নয়ন করেছিলাম, সেই উন্নয়নকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। কারা এসব ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তা সবার কাছে পরিষ্কার। শিবির-জামায়াত তো জঙ্গি সংগঠন। আর বিএনপি’র চেহারাও এবার স্পষ্ট হয়েছে। এদের এত সহজে এবার ছাড় দেয়া হবে না। আরও শক্ত হয়ে নাশকতাকারীদের দমন করে দেশের পরিবেশ স্বাভাবিক করে আনবো ইনশাআল্লাহ।
সভায় এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ, ডিসিসিআই, এমসিসিআই, এসোসিয়েশন অব ব্যাংক, দোকান মালিক সমিতিসহ দেশের সহস্রাধিক শীর্ষ ব্যবসায়ী ও বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এফবিসিসিআই’র সভাপতি মাহবুবুল আলম, ব্যাংক এসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমদ আকবর সোবহান, বিজিএমইএ সভাপতি এসএম মান্নান কচি, এমসিসিআই’র সহ-সভাপতি নাসিম মঞ্জুর, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিনসহ অন্য ব্যবসায়ী নেতারা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে ধ্বংসযজ্ঞ, নাশকতা ও দেশ ধ্বংসের বিভিন্ন সচিত্র প্রতিবেদন নিয়ে একটি চিত্র তুলে ধরেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত। রাজধানীসহ সারা দেশে চালানো নাশকতা নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়। মেট্রোরেল, সেতু ভবন, ডাটা সেন্টার, এক্সপ্রেসওয়েসহ গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত এক আসামি লন্ডনে পলাতক থেকে হুকুম দেয়, আর বিএনপি-জামায়াত-শিবির একসঙ্গে হয়ে এসব নৃশংসতা চালিয়েছে। অত্যন্ত পূর্বপরিকল্পিতভাবে জামায়াত-শিবির জঙ্গিদের ঢাকায় জড়ো করে ছাত্রদের ঢাল করে তারা এসব ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। জনগণের জানমাল রক্ষার জন্য সরকার কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয়েছে। এসব জঙ্গিদের শক্ত হাতে দমন করে দেশে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে। পরিবেশ শিথিল হলেই বিশেষ ব্যবস্থা শিথিল করে আনা হবে। তবে নাশকতাকারী-ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড়া হবে না। শিক্ষার্থীদের সব দাবি বিবেচনা করেই তাদের পক্ষেই সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়ে আদালত রায় দিয়েছে। এরপরেও সহিংসতা, নাশকতা কেন? কী উদ্দেশ্যে এসব করা হচ্ছে? কারা অর্থায়ন করছে? যারা এসব করেছে তাদের কাউকে ছাড়া হবে না, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিএনপি’র প্রকৃত চেহারা এবার জাতির সামনে প্রকাশ হয়ে গেছে। এসব জঙ্গিদের দমন করেই দেশের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে।
প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ছড়ানো গুজবের সমালোচনা করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা নাকি পালিয়ে গেছে! শেখ হাসিনা কখনো পালায় না। ’৭৫-এর পর ছয়টি বছর আমাকে দেশে আসতে দেয়া হয়নি, রিফিউজি হিসেবে কাটিয়েছি। ’৮১ সালে যখন বঙ্গবন্ধুর খুনি, যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় কিংবা ক্ষমতার অংশ, সেই অবস্থায় দেশে ফিরে এসেছি দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে। ২০০৭ সালেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দিয়েছে। মামলা মোকাবিলা করতে দেশে আসতে চেয়েছি, কিন্তু আমাকে আসতে নানা বাধা দেয়া হয়েছে। জোর করে দেশে ফিরে এসেছি। দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্পেন ও ব্রাজিল সফর আমি বাতিল করেছি, কারণ এসময় দেশের জনগণের পাশে আমাকে থাকতে হবে। বিদেশে অনেক আজেবাজে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতা বা কোনো পদ আমার কাছে কিছুই না। আমি জাতির পিতার কন্যা। ক্ষমতায় আছি দেশের উন্নতি করতে, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে। ১৫ বছর আগে দেশের অবস্থা কী ছিল, এখন কী হয়েছে তা বিবেচনার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশকে আমরা বদলে দিয়েছি, সত্যিই আজ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। দেশ যখন সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, সুন্দর পরিবেশ রয়েছে- ঠিক তখন আমরা যত উন্নয়ন করেছি সব জায়গায় হামলা করে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। কারা এসব করছে তাদের ব্যাপারেও দেশের ব্যবসায়ী সমাজকে স্পষ্ট করে জনগণকে বলার জন্য অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী। অতীতের মতো এবারো বিএনপি-জামায়াতের ভয়াল অগ্নিসন্ত্রাসের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে আগে আমরা কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছিলাম। মুক্তিযোদ্ধাদের এক অংশ হাইকোর্টে আমাদের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করে। হাইকোর্ট বাতিল করলে আমরা বসে থাকিনি। আমরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সমর্থন করেই আপিল করেছি। বারবার সবাইকে (আন্দোলনরত শিক্ষার্থী) অনুরোধ করেছি, সর্বোচ্চ আদালত যখন সময় দিয়েছে সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণেও আমি ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছি। এ অবস্থায় সবার আরও কিছুটা ধৈর্য ধরা উচিত ছিল। তিনি বলেন, আমরা গত ১৫ বছরে যেসব গুরুত্বপূর্ণ আইকনিক স্থাপনা গড়ে তুলেছি, এতে ব্যবসায়ীদেরও উপকার হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এগুলো বাংলাদেশের সক্ষমতার কথা জানান দিয়েছে, বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বিদেশিরা বলেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগের অন্যতম স্থান। এসব নির্মাণের ফলে দেশের মানুষের জীবনমানেরও ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। দেখা গেল ছাত্র আন্দোলনের আড়ালে পরিকল্পিতভাবে সেসব স্থাপনা ধ্বংসের জন্য হামলা করা হলো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দিনরাত পরিশ্রম করে দেশকে যখন আমরা একটা জায়গায় নিয়ে আসলাম, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুললাম। সারাবিশ্বে যখন বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। ঠিক তখন দেশের ব্যবসাবান্ধব স্থাপনাগুলোতে একের পর এক আঘাত হানা হলো। বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন (বিটিভি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ডাটা সেন্টার, সেতু ভবন, মেট্রোরেল, হানিফ ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা, বিজ্ঞান ও গবেষণা কেন্দ্রসহ অসংখ্য সরকারি স্থাপনায় হামলা করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মেট্রোরেলে আগুন দেয়ার ঘটনা শুনে বুকে বড় আঘাত লেগেছে। তিনি বলেন, এখানেই শেষ নয়, নরসিংদীতে হামলা করে দাগি আসামিদের ছিনিয়ে নেয়া, অনেক থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন, এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখা, রেললাইন উপড়ে ফেলা, ট্রেনে অগ্নিসংযোগ, হাসপাতালে চিকিৎসায় থাকা পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকে বের করে এনে পিটিয়ে হত্যার মতো জঘন্য কাজও তারা করেছে। সেতু ভবনে আগুন দিয়ে ৫০টিরও বেশি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। পানির পাম্প হাউস পুড়িয়ে দিয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ অফিস, জাসদ অফিস, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ভূমি অফিস, ব্যাংক, সরকারি অনেক কার্যালয় পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দেশবাসীর প্রতি প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এসব কারা করেছে? কী উদ্দেশ্যে এসব ঘটনা ঘটানো হলো? শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি করেছে তা নিয়ে সরকার আগেই আদালতে আপিল করেছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যেভাবে চেয়েছে আদালত সদয় হয়ে সেভাবেই রায় দিয়েছেন। এরপরও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কী উদ্দেশ্যে করা হলো? দুর্বৃত্তরা কয়েকটি গার্মেন্টসে আগুন দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল। গোয়েন্দা তথ্য পেয়ে আগেই সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সব পদক্ষেপ নিয়েছি। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাই স্পষ্ট করে বলেছে, এসব ধ্বংসযজ্ঞ-নাশকতার সঙ্গে তারা কোনোভাবেই জড়িত নয়। যারা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের সঙ্গে আমাদের (আন্দোলনকারীদের) কোনো সম্পর্ক নেই। আর আমিও ছাত্র রাজনীতি করে এই জায়গায় এসেছি। আমিও জানি সাধারণ ছাত্ররা এসব পরিকল্পিত জঘন্য কাজ করতে পারে না। শেষ পর্যন্ত জনগণকে রক্ষায় কারফিউ দিতে বাধ্য হতে হয়েছে। সরকার প্রধান বলেন, যারা এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে তারা অচেনা কেউ নয়। বিএনপি তো প্রকাশ্য আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে মাঠে ছিল। ব্যবসায়ী সমাজকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে কে আওয়ামী লীগ বা কে বিএনপি করে তা দেখি না। তবে আমি সবাইকে চিনি। দেশের একজন বয়স্ক রাজনীতিবিদ হিসেবে আমি সবাইকে চিনি। কিন্তু আমি দেশকে ভালোবাসি। দেশের ব্যবসায়ীরা এই ১৫ বছর নির্বিঘ্নে ব্যবসা করেছেন। আমরা ব্যবসা করিনি বরং ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। ব্যবসায়ীদের আগের মতো হাওয়া ভবন-খোয়াব ভবনের পাওনা মেটাতে হয়নি। ব্যবসায়ীদের জন্য যখন যা প্রয়োজন তাই করেছি। এমনকি করোনা মহামারির সময় সবাইকে প্রণোদনা দিয়েছি, শ্রমিকদের চার মাসের বেতন পর্যন্ত দিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, দেশ ও দেশের জনগণকে ভালোবেসে আমি কাজ করি। আমি জাতির পিতার কন্যা, বাবা-মা, ভাইসহ সবাইকে হারিয়েছি। দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে, তাদের মুখে হাসি ফোটাতে দিনরাত পরিশ্রম করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বিএনপি’র নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, নির্বাচন হতে দেবে না বলে অনেক দেশি-বিদেশি চক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি ক্লান্তিলগ্নে দেশের ব্যবসায়ী সমাজ আমাকে সমর্থন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৪, টানা সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে বলেই দেশের এত উন্নয়ন করতে আমরা পেরেছি। ২০১৩, ১৪, ১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল অগ্নিসন্ত্রাস-নাশকতা আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে। এরপর কোভিড মহামারি, যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বিএনপি’র আমলে দেশের বাজেট ছিল মাত্র ৬৭ হাজার কোটি টাকা। এবার আমরা ৭ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতে সক্ষম হয়েছি। জনগণকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করতে কারফিউ দিতে সরকার বাধ্য হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীরা হতাশ হবেন না, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। যারা এসব নাশকতা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা নিতেই হবে। শুধু স্থাপনায় নয়, জঙ্গি কায়দায় ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দুর্বৃত্তরা অনেক ঘটনাই ঘটিয়েছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হল থেকে বের করে দিয়ে তাদের সমস্ত আসবাবপত্র, বিছানাপত্র পুড়িয়ে দিয়েছে, এক ছাত্রনেত্রীকে খুঁটিতে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করেছে, বাড়ির ছাদ থেকে ছুড়ে ফেলে অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে হত্যার চেষ্টা পর্যন্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, শিবির-জামায়াত তো জঙ্গি দল। তারা এসব পরিকল্পিতভাবে ঘটিয়েছে। সারা দেশ থেকে তাদের সন্ত্রাসীদের জড়ো করে এসব হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। কারা অর্থ সরবরাহ করেছে তাও জানা যাবে। যত দ্রুত সম্ভব এই অবস্থার পরিবর্তন করা হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হবে ততক্ষণ আমাদের কঠোর ব্যবস্থা নিতেই হবে। যখন সবকিছু স্বাভাবিক হবে তখন এই বিশেষ ব্যবস্থা শিথিল করা হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ‘২০০৯ সালে যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলেন, আপনারা জানেন- পনেরো বছর ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশকে যে জায়গায় নিয়ে এসেছেন সেটার বিস্তারিত আমি বলবো না। আমি এতটুকু শুধু বলবো- আমরা কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছি। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। আপনারা জানেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবসময় বলেন- অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হলো বেসরকারি খাত। ওনার কথাটা হলো- আমি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দেবো, সেখানে বেসরকারি খাত দেশটা এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং তাই আমরা করেছি। ব্যবসায়ীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের সহযোগিতার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশটাকে আমরা এই জায়গায় নিয়ে এসেছি। দেশের সমসাময়িক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে সালমান এফ রহমান বলেন, কয়েকদিন যে ঘটনাগুলো ঘটেছে। এটা কিন্তু এখন পরিষ্কার- এটা এখন কোটা আন্দোলন নয়। ছাত্ররা এখানে কোনো আন্দোলন করছে না। এই আন্দোলনটা আসলে সরকার পতন করার আন্দোলন ছিল।
তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত গত কয়েকদিনের প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, আন্দোলনরত ছাত্রদের ঢাল করে তৃতীয় চিহ্নিত একটি পক্ষ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছে। সরকার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিল বলেই হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। অথচ ছাত্রদের আড়ালে বিএনপি-জামায়াত-শিবির পরিকল্পিতভাবে জঙ্গি কায়দায় সরকারি স্থাপনাসহ জনগণের ওপর আক্রমণ করেছে। বিটিভি, মেট্রোরেল, সেতু ভবনের মতো স্পর্শকাতর স্থাপনা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। পৃথিবী থেকে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পরিকল্পিতভাবে ডেটা সেন্টারে হামলা করে পুড়িয়ে দিয়েছে। আর এসব প্রতিটি জঘণ্য হামলার সঙ্গে জামায়াত-শিবির-বিএনপি জড়িত। আমরা বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব অপশক্তিকে ন্যূনতম ছাড় দেবেন না।