শেষের পাতা
চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের হামলা, আহত ১০
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
১৬ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার
চট্টগ্রাম মহানগরীর ষোলশহর রেলস্টেশনে কোটা বিরোধী অন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় উভয় পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে পুলিশসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ। গতকাল বিকাল ৪টা থেকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। এর আগে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হয় ষোলশহর রেল স্টেশনে। সংঘর্ষ শুরুর পরপরই যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
এর আগে দুপুরে চবি স্টেশনে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঠেকাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের চাবি ছিনতাই করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা হামলার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করেছে। হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। সরজমিন দেখা যায়, আন্দোলনকারীরা ষোলশহর রেল স্টেশন ও মোড়ে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দুই নম্বর গেট ও মুরাদপুর এলাকায় অবস্থান নেয়। আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা ষোলশহর স্টেশনে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে পেছন থেকে ছাত্রলীগ দলবল নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। তখন আমরা আত্মরক্ষায় পাল্টা হামলা করি।
ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকের হাতে রয়েছে লাঠিসোটা। তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন অলিগলিতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছেন এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিচ্ছেন। আশপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে। অন্যদিকে পুলিশকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, দুইপক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ হয়েছে। আমাদের কয়েকজন আহত হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা নগরীর ষোলশহরের ২নং গেট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করতে বেলা আড়াইটার শাটল ট্রেনে উঠলে সেখানে আন্দোলনকারীদের বাধা দেয় ছাত্রলীগ। এ সময় আন্দোলনের সমন্বয়কারী তালাত মাহমুদ রাফিকে তুলে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া শাটল ট্রেনের চাবিও নিয়ে যায়। পরে প্রক্টর অফিসের দিকে মিছিল নিয়ে রওয়ানা দেয় আন্দোলনকারীরা।
কোটা আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, দুপুর আড়াইটায় শাটল ট্রেনে করে শিক্ষার্থীরা ষোলশহর স্টেশনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় চবি ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মো. ইলিয়াসের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী তাদের লাঠি ও বাঁশ নিয়ে ধাওয়া দেন। অনেকেই ছাত্রলীগের নেতাদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন। কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক শিক্ষার্থী জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা যাতে শাটল ট্রেনে উঠতে না পারেন, তার জন্য ট্রেনের প্রতিটি বগির সামনে ছাত্রলীগকর্মীরা অবস্থান নেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ট্রেনে উঠতে গেলে তাদের বাধা দেয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে নগরীর ষোলশহর স্টেশন মাস্টার জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের ছেলেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপেক্ষমান শাটল ট্রেনের চালকের কাছ থেকে জোরপূর্বক ট্রেনের চাবি ছিনিয়ে নিয়েছে। এ কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।’ চবি ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মো. ইলিয়াস বলেন, ‘কোটা সংস্কারের পক্ষে যারা আন্দোলন করছে তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলতে গিয়েছিলাম। তারা আন্দোলন করুক সেটাতে আমরা একাত্মতা পোষণ করেছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কেউ কটুক্তি করবে সেটা আমরা মেনে নেবো না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ট্রেন আমরা বন্ধ করিনি। তাছাড়া আমরা কোনো হামলাও করিনি।’