শেষের পাতা
ইউএনও-ইউপি চেয়ারম্যান দ্বন্দ্ব
পটিয়ায় ঝুলে আছে ১০ কোটি টাকার প্রকল্প
পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
১৪ জুলাই ২০২৪, রবিবারইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরোধের জের ধরে পটিয়ায় প্রায় ১০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ ঝুলে আছে। তার মধ্যে এডিসি ও রাজস্বের কাজও রয়েছে। সূত্র মতে, উপজেলার ১৭ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের প্রকল্পের নিয়মনীতি না মেনে কাজ করা ও এর টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে ইউএনও মো. রাসেদুল কাদেরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। ইউএনও’র বদলি দাবি করে ইউপি চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে। তবে ইউএনও’র বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। শুধু জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ লোকজনের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ তুলেছেন। তাদের দ্বন্দ্বের কারণে উপজেলা মাসিক সমন্বয় কমিটির সভা হচ্ছে না। গত ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর পক্ষে ফুল দেয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ইউএনও’র উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা হয়। এর পর থেকে চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তার দূরত্ব বাড়ে।
২০১৮ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি ইউএনও রাসেদুল কাদের পটিয়ায় যোগদান করেন। তিনি যোগদানের আগে উপজেলা পরিষদের ফান্ডে ৫ কোটি টাকা ঘাটতি থাকায় ২০১৭-২০১৮ বছরের স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের হিস্যা অনুযায়ী প্রাপ্ত বরাদ্দকৃত অর্থের ১% এর প্রায় ১ কোটি ১৩ লাখ টাকার চেক ছাড় দেয়া হয়নি। তাছাড়া আরও ১৫ কোটি টাকার প্রকল্প জমা রয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউএনও’র দূরত্বের কারণে পটিয়া উপজেলায় এডিসি ও রাজস্বের প্রায় ১০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ ঝুলে রয়েছে। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নে ১% ১৩ লাখ টাকা, জঙ্গলখাইন ইউনিয়নে ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, কোলাগাঁও ইউনিয়নে ১৩ লাখ ৭৭ হাজার টাকা, আশিয়া ইউনিয়নে ৭ লাখ ১৮ হাজার টাকা, শোভনদণ্ডি ইউনিয়নে ৮ লাখ ৬২ হাজার টাকা, হাইদগাঁও ইউনিয়নে ১২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, ধলঘাট ইউনিয়নে ৯ লাখ ৩২ হাজার টাকা, দক্ষিণভূর্ষি ইউনিয়নে ৫ লাখ ২৩ হাজার টাকা, খরনা ইউনিয়নে ৮ লাখ ১৯ হাজার টাকা, কেলিশহর ইউনিয়নে ৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ছনহরা ইউনিয়নে ৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা, হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নে ১১ লাখ ৫ হাজার টাকা, বড়লিয়া ইউনিয়নে ১০ লাখ ১৬ হাজার টাকা, জিরি ইউনিয়নে ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ভাটিখাইন ইউনিয়নে ৪ লাখ ৭ হাজার টাকার প্রকল্পের কাজের তালিকা উপস্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে প্রকল্প তদারকি না করে অগ্রিম অর্থ ছাড়ও দেয়া হয়েছে।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের হিস্যার প্রাপ্ত বরাদ্দের টাকা প্রকল্পের মাধ্যমে বছরে একবার ছাড় দেয়া হয়। ইউপি চেয়ারম্যানদের দাবি ইউএনও রাসেদুল কাদের যোগদানের আগে এর টাকা বছরে ২/৩ বার ছাড় দিয়েছিল। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের দ্বন্দ্বের কারণে তৎকালীন ইউএনও আবদুল্লাহ আল মামুনকে বদলি হয়ে যেতে হয়েছে। একইভাবে বদলি হতে হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাশেমকে। ইউপি চেয়ারম্যানদের বিভিন্ন অযৌক্তিক প্রকল্প তদারকি করতে গেলে মূলত এ দ্বন্দ্ব শুরু হয় বলে সূত্র জানায়। কচুয়াই ইউপি চেয়ারম্যান এসএম ইনজামুল হক জসিম বলেন, নতুন ইউএনও যোগদানের পর উন্নয়ন কাজে ব্যাঘাত হচ্ছে। ইউএনও’র বিরুদ্ধে ইউপি চেয়ারম্যানরা চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। যার তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে ইউএনও মো. রাসেদুল কাদের জানান, ইউপি চেয়ারম্যানরা যেসব প্রকল্প উপস্থাপন করেছেন তা কাজের অগ্রগতি দেখে টাকা ছাড় দেয়া হবে। অতীতে কেন ইউএনও বছরে ২-৩ বার টাকা ছাড় দিয়েছেন তা দেখার বিষয় নয়। সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করে তিনি প্রকল্পের টাকা ছাড় দিবেন। কিন্তু কিছু চেয়ারম্যান দলীয় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছে। যা ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন।