শেষের পাতা
সিলেটে নিত্যপণ্যের দামে অস্বস্তি
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
১৪ জুলাই ২০২৪, রবিবার
চরম দুর্দিন যাচ্ছে সিলেটের মানুষের। টানা দুই মাস ধরে বন্যা। তিন দফা উজানের ঢল আঘাত করেছে। বিপর্যস্ত কয়েক লাখ মানুষ। পানিবন্দি মানুষের মধ্যে চলছে খাবার সংকট। বৃষ্টিও থামছে না। জীবনযাত্রা থমকে গেছে। এই অবস্থায় সিলেটে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে অস্বস্তি বেড়েছে। ৬০ থেকে ৭০ টাকার নিচে কোনো সবজিই পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে সরবরাহ কম থাকায় সবজির দাম বেড়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বন্যার কারণে চাষ করা যে সবজি ছিল সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে বিশেষ করে সবজির বাজারে দাম বেড়েছে। এদিকে, সিলেটে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা দেখা দিয়েছে। টানা দুই মাস ধরে পানির নিচে জেলার অর্ধেক এলাকা। ধীরে নামছে পানি। ফলে আগামী এক মাসের মধ্যে সিলেটে সবজি ফলানো সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন কৃষক। টুকের বাজারের সবজি চাষি আত্তর আলী জানিয়েছেন, সিলেট শহরতলীর টুকেরবাজার, দক্ষিণ সুরমার কামাল বাজারসহ ওই এলাকাগুলোতে বার মাসই সবজি উৎপাদন করা হয়। কিন্তু এবার বন্যার কারণে সবজি চাষ করা সম্ভব হয়নি। এর বাইরে গোলাপগঞ্জ, কানাইঘাট, বিয়ানীবাজার এলাকায়ও সবজি চাষ করা হয়। কিন্তু দুই মাস ধরে মানুষ পানিবন্দি থাকার কারণে সবজি চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে এ অঞ্চলের মানুষজনও এখন বাজারে আমদানি করা সবজির ওপর নির্ভরশীল। সুবহানীঘাট এলাকা হচ্ছে সবচেয়ে বড় সবজির আড়ত। এই আড়তে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সবজি আসে।
এই আড়তের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এখন রাজশাহী, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরবসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সবজি আসছে। এসব এলাকা থেকে এবার কম সবজি আসছে। এ কারণে পাইকারি ক্রয়ে দাম বেশি পড়ছে। বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে গতকাল সিলেটে কাঁচা মরিচের কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। আর পাড়া মহল্লায় ভাসমান সবজি বিক্রেতারা ৩০০ টাকায় কেজিতে বিক্রি করছিলেন। টমেটো ৯০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অথচ কাঁচা মরিচ ও টমেটোর দাম গত এক সপ্তাহ আগেও ছিল সহনীয়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৪০-৫০ টাকা হারে দাম বেড়েছে। সবজি আড়তে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয় ৫৫-৬০ টাকায়। খুচরা বাজারে এ আলু বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। এ ছাড়া গাজর ৬০-৭০ টাকা, কচুরমুখি ৭৫-৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শেখঘাট এলাকার মতিন মিয়া গতকাল বাজারে গিয়ে জানালেন; বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেট। এই অবস্থায় বাজারে যে দাম তাতে মানুষের মধ্যে হাহাকার চলছে। তিনি জানান, ঈদের আগে পিয়াজ, রসুন ও আদার দাম বেড়েছিল। সেই দাম এখনো রয়েছে। ফলে এখন ৫০০ টাকা না হলে সবজির বাজারেই ঢুকা যাচ্ছে না।
এই অবস্থা চলতে থাকলে সিলেটের মানুষ দ্রব্যমূল্যের দামে নিষ্পেষিত হয়ে যাবে বলে জানান তিনি। সিলেটের প্রধান পাইকারি সবজির আড়ত সোবহানীঘাটে দেখা গেছে, আগের মতো ব্যস্ততা নেই। বন্যার আগে যেখানে প্রতিদিন সবজি নিয়ে কয়েকশ ট্রাক প্রবেশ করতো, সেখানে এখন সবজিভর্তি ট্রাকের আনাগোনা খুবই কম। সিলেটের বিভিন্ন গ্রামীণ বাজার থেকে আসা খুচরা ক্রেতাও নেই বললেই চলে। এমনকি যারা ভ্যানে সবজি বিক্রি করেন, তাদের সংখ্যাও কমে গেছে। দামের কারণে আগে যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ৫ হাজার টাকার সবজি কিনতেন, এখন তিনি কিনছেন ২ হাজার টাকার। সুবহানীঘাটের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, বাইরে থেকে সবজি আমদানি কম হচ্ছে। সেজন্য আগের তুলনায় বেশি দাম পড়ছে সবজির। ধোপাদীঘির পাড় এলাকার সম্রাট হোসেন জানিয়েছেন; বর্ষার মৌসুম চললেও বাজারে দেশি মাছ নেই। নতুন পানিতে মাছ নেই। এ কারণে আমদানি করা মাছের ওপর নির্ভর করে চলছে। এখন বাজারে ৩০০ টাকা কেজির নিচে কোনো মাছই নেই। আর দেশি মাছ না থাকার কারণে আমদানি করা মাছের দাম কমছে না। তবে; ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। গতকাল ১৬৫ টাকা দরে কেজিপ্রতি মুরগি বিক্রি হচ্ছিল। লালবাজার এলাকার ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া জানিয়েছেন; ঈদের পর থেকে ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে। এখন কিছুটা ঊর্ধ্বগতি হলে মুরগির দাম ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া ব্রয়লার ডিমের দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা হালি ধরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি ডিম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সিলেট কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল খয়ের মোল্লা জানিয়েছেন- এ সময় মুলা, পালং, নটে, ঢ্যাঁড়স, পুঁইশাক চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু বন্যার কারণে সিলেটে এসব চাষ করা হয়নি। যারা চাষ করেছিলেন তাদের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারনে বাজারে সবজির সংকট হচ্ছে।