দেশ বিদেশ
সিলেটে চিনির চালান আটকে সক্রিয় পুলিশ
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
১৩ জুলাই ২০২৪, শনিবারচোরাই চিনি নিয়ে সিলেটে কম নাটকীয়তা হয়নি। এখনো হচ্ছে নানা নাটক। সিন্ডিকেটে জড়িত সবাই। চোরাই চিনির নিরাপদ স্থান জৈন্তাপুরের হরিপুর। এক সময় গরু চোরাচালান নিয়ে আলোচিত ছিল এ এলাকা। এখন চিনি চোরাচালান নিয়ে পরিচিতি পেয়েছে। প্রশাসন ‘ম্যানেজ’ করে প্রতিদিন শত কোটি টাকার চিনি পাচার হয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এই চিনি আসে ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে। এরপর হরিপুরসহ জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাটের বিভিন্ন স্থানে লোড হয়ে সড়ক পথে যায়। সম্প্রতি চিনির চোরাচালান বন্ধে সক্রিয় পুলিশ। এক দিনে পুলিশ প্রায় দেড় কোটি টাকার চিনির চালান আটক করেছে। বৃহস্পতিবার পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় চোরাই চিনির চালান জব্দ করা হয়। এ সময় ৯ জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। বৃহস্পতিবার অভিযানের পর চোরাকারবারিরা চিনির চালানের গাড়ি জৈন্তাপুর থেকে ছাড়ছে না। বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি লোড দিয়ে রাখা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চিনির চোরাচালান করতে পারেনি সিন্ডিকেটে থাকা সদস্যরা। পুলিশ জানায়- শাহপরাণ থানার পীরেরবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল ৬ ট্রাক ভারতীয় চোরাই চিনি জব্দ করে। এই চিনির মূল্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। পুলিশ ওই চালানের সঙ্গে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে রাত ২টার দিকে সিলেট নগরীর কালিঘাট বাজার এলাকা থেকে ৩ লাখ ২৩ হাজার ৪০০ টাকার ৬০ বস্তা ভারতীয় চিনি জব্দ করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এ সময় চোরাই চিনি বহনকারী একটি ডিআই পিকআপ জব্দ করা হয়। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। অভিযানে থাকা পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন- ভারতীয় চিনি বহনকারী ডিআই পিকআপটি নীল ও সাদা রঙের ত্রিপলে মোড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায়। পুলিশের ধাওয়ায় পিকআপটি রেখে চালক ও অপর আসামিরা পালিয়ে যায়। পলাতক আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ভারতীয় চিনি বাংলাদেশ সরকারের শুল্ক কর ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে দেশে এনে সিলেট শহরের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে আসছে। একই দিন বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বিমানবন্দর থানার খাসদবির এলাকা থেকে ৪৬ বস্তা ভারতীয় চিনিবোঝাই একটি পিকআপ জব্দ করে। জব্দকৃত ৪৬ বস্তায় চিনি ছিল ২ হাজার ২০৮ কেজি। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২ লাখ ৬৪ হাজার ৯৬০ টাকা। এ সময় চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ৩ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলো- সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার ঘোষগ্রামের মৃত তোতা মিয়ার ছেলে জালাল উদ্দিন, কোম্পানীগঞ্জের কালিবাড়ি গ্রামের ওহাব আলীর ছেলে মো. রিপন মিয়া ও গোয়াইনঘাটের লেঙ্গুরা গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে রাসেল আহমদ। ভোর সাড়ে ৪টায় সিলেটের শাহপরাণ (রহ.) থানার সুরমা গেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৩ লাখ ৫২ হাজার টাকার ৪০০ বস্তা ভারতীয় চিনি উদ্ধার পুলিশ। এ সময় ট্রাকসহ ২ চোরাকারবারিকে আটক করে শাহপরাণ (রহ.) থানা পুলিশ। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ সোহেল রেজা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- ভোরে সুরমা গেট এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হয়। পুলিশের চেকপোস্ট দেখে গাড়িটি বিপরীত দিকে ঘুরিয়ে দ্রুত গতিতে বটেশ্বর এলাকার দিকে যেতে থাকে। এ সময় পুলিশ ধাওয়া করে জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্টস্থ বোর্ড স্কুলের সামন থেকে ট্রাকটি জব্দ করে। পলিথিনের ত্রিপলে মোড়ানো ভারতীয় ৪০০ বস্তা চিনি উদ্ধার করা হয়। যার বাজারমূল্য ২৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় ট্রাক চালক পাবনা সদর থানার জালালপুর গ্রামের আব্দুস ছাত্তার বিশ্বাসের ছেলে সাইফুল ইসলাম ও একই থানার বাবুল চারা গ্রামের জাহান শেখের ছেলে হেলপার শাকিল শেখ। পুলিশ জানায়, ওই চিনির মালিক পলাতক সালমানের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে শাহপরাণ (রহ.) থানায় মামলা হয়েছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার তাহিয়াত আহমদ চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- চিনি চোরাচালানের খবর পেলেই পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। বৃহস্পতিবারের চালানের খবর পুলিশের কাছে আসা মাত্রই অভিযান চালানো হয়। শাহপরাণ থানা পুলিশকে অবগত করলে শাহপরাণ (রহ.) মাজার তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশের সহায়তায় আমরা মাজার এলাকা বড় চিনির চালান আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে এর আগে গত ১৫ই জুন সিলেটে জৈন্তাপুর সীমান্ত এলাকা থেকে ১১ ট্রাক ভারতীয় চোরাই চিনি জব্দ করে বিজিবি। সিলেট সেক্টর-১৯ বিজিবি’র আওতাধীন জৈন্তাপুর রাজবাড়ি ক্যাম্পে অভিযান পরিচালনা করে এসব চিনি জব্দ করে। এ সময় টহল দলের উপস্থিতি টের পেয়ে চোরাকারবারিরা চিনিভর্তি একটি মিনি ট্রাক ও ১১টি পিকআপ ফেলে দ্রুত পালিয়ে যায়। ট্রাক ও পিকআপ তল্লাশি করে আনুমানিক ৫৬ হাজার কেজি ভারতীয় চিনি জব্দ করা হয়। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৬৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর আগে ৬ই জুন জালালাবাদ থানার উমাইরগাঁও এলাকায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৪ ট্রাক চিনি আটক করে। ওই দিন ভোরে সিলেট মহানগরীর জালালাবাদ থানার উমাইরগাঁও থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখের নেতৃত্বে ১৪ ট্রাক ভারতীয় চোরাই চিনি, ১টি প্রাইভেটকার, ১টি মোটরসাইকেল আটক করে পুলিশ।